শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : তোমরা যেহেতু লম্বা সময় ধরে থাকছো এই সরাইখানায়, তোমরা হচ্ছো এখানকার নিয়মিত খদ্দের, তাই তোমরা যদি নয় তোলা রূপা দিতে পারো আমাকে, তা হলেই চলবে!”, সে বললো, “নিজের কন্যার নৈতিকতার মূল্যবোধকে নয় তোলা রূপায় বিক্রি করা! এটা কি যথেষ্ট সস্তা নয়?”
“ঠিক বলেছো, এটা যথেষ্টই সস্তা!”, আমি ইয়েন লাঙ-এর দিকে তাকালাম, ইয়েন লাঙ লজ্জায় মাথা নীচু করে রয়েছে। আবেগের উষ্ণতা বিনষ্ট না করেই একটা দুষ্টুমি ভরা চিন্তা আমার মনে আসলো। তাই আমি সরাই মালিককে আবার জিজ্ঞেস করলাম, “মনে করো যদি আমি তোমার কন্যাটিকে কিনে নিতে চাই, ওকে আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই, তা হলে তোমাকে আরও কতো টাকা দিতে হবে?”
“জনাব, আমার ভয় হচ্ছে, আপনাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এটা নেই!”, কথাটা বলেই সে যেন বোবা হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য। তারপর হাসির ভাব মুখে এনে হাতের পাঁচটা আঙ্গুল উঁচু করে ধরে দেখালো! সে বললো, “লাগবে পঞ্চাশ তোলা রূপা! এক তোলা রূপা কম হলেও বেচবো না! ওকে ছোট বেলা থেকে পালতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। আপনাদের কাছে পঞ্চাশ তোলা রূপায় বিক্রি করতে চাচ্ছি, এটাও অনেক সস্তা দাম!”
“ঠিক আছে! আমি পঞ্চাশ তোলা রূপাই জোগাড় করছি।”
এ কথা বলেই আমি বিছানা থেকে উঠে এগিয়ে গিয়ে ইউ সুয়ো-কে জড়িয়ে ধরলাম। ওর অবয়বে লেগে থাকা অশ্রু জলের দাগ মুছে দিলাম। তারপর ওকে দিলাম ইয়েন লাঙ-এর কাছে। “ওকে কোলে জড়িয়ে রাখো!”, আমি ইয়েন লাঙ -এর উদ্দেশ্যে বললাম, “সে হচ্ছে আমাদের দড়াবাজী খেলার দলের নতুন সদস্য। এখন থেকে আগামীতে, গাছের গুড়ি গড়িয়ে নেয়ার খেলাটা তুমি ওকে শিখাবে, আমি শিখাবো দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার কৌশল। এই হতভাগ্য বাচ্চাটার ভবিষ্যতের জন্য একটা সঠিক পথের দিশা পাওয়া যাবে!”
পঞ্চাশ তোলা রূপা জোগাড় করার জন্য, আমি এবং ইয়েন লাঙ রাতের তারা অস্ত যাওয়ার আগেই দ্রুত ছুটলাম দুই শত লি দূরবর্তী থিয়ান চৌ শহরে, দক্ষিণ অঞ্চলের সুবাদার চাও ইয়ো-র সরকারি বাস ভবনের উদ্দেশ্যে! আমার এই হঠাৎ আগমন চাও ইয়ো-কে করলো আতঙ্কিত। সে হচ্ছে ইঁদুরের মতো, ওর সাহস নাই একেবারেই! সামন্ত রাজা আর সুবাদারদের মধ্যে সে হচ্ছে সবচেয়ে সরল সোজা মানুষ! সারা দিন সে মগ্ন থাকে রাশিচক্র আর রাশিফল গণনা নিয়ে। এমন কি আমার সাথে এ রকম একটা গোপন বৈঠকের মধ্যেও সে দু’জন উচ্চ মার্গের রাশিচক্র বিশারদ, রহস্যময় ভাগ্য গণনার গণককে তার দু’পাশে রেখেছে। সবশেষে আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য ওর কাছে পরিষ্কার হওয়ার পর, বেশ খানিকটা স্বস্তির সাথে সে বললো, “ও! তাহলে আসল ব্যাপরটা হচ্ছে পঞ্চাশ তোলা রূপা! আমি তো ভেবেছিলাম তোমার নির্বাসিত নিগ্রহ যুক্ত কঠোর অনুশীলনের মূল উদ্দেশ্যের অন্তরালে আছে রাজ সিংহাসন পুনরুদ্ধারের ষড়যন্ত্র! গণকরা আমাকে বলেছে লুব্ধক তারার সাথে দুর্ভাগ্যের প্রতীক সাদা বাঘ তারার সংঘর্ষ হবে খুব শীঘ্রই! একটা অগ্নি গোলক এসে পতিত হবে থিয়ান চৌ এলাকার মধ্যে! তুমি টাকা নিয়েই থিয়েন চৌ ছেড়ে চলে যাও। ওরা আমাকে বলেছে যে, তুমি হচ্ছো সাধারণ মানুষের মধ্যে তলিয়ে যাওয়া সিয়ে দেশের সম্রাট, তোমার শরীরে প্রজ্জ্বলিত হওয়া আগুন এখনও নিভে যায় নাই! তুমি হচ্ছো সেই নেমে আসা অগ্নি গোলক। সুতরাং টাকা নিয়েই তুমি সাথে সাথেই থিয়ান চৌ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে! যে বিপর্যয় অতি শীঘ্রই উপর থেকে নেমে আসছে, দয়া করে তোমরা সেটাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাও!”
থিয়ান চৌ থেকে স্বচ্ছ ধারা-য় ফিরে আসার পথে আমরা হয়ে গিয়েছিলাম নীরব, বাক্যহীন! দক্ষিণ অঞ্চলের সুবাদার চাও ইয়ো-র রাশি গণনার ভবিষ্যৎ বাণীর অর্ধেক বিশ্বাস করা যায়, বাকী অর্ধেকটায় আমি সন্দিহান! তবে একটা বিষয়, একটা বাস্তবতা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই, সেটা হচ্ছে, থিয়ান চৌ-তে অবস্হিত দক্ষিণ অঞ্চলের সুবাদারের সরকারী বাস ভবনের ভিতরে, আমি পরিণত হয়েছি ——- এক জন বিশিষ্ট সম্রাট থেকে একটা অশুভ ভয় জাগানিয়া নক্ষত্রে! আমি পতিত হচ্ছি নীচের দিকে একই সাথে আমি হচ্ছি প্রজ্জ্বলিত! বিপর্যয়গ্রস্ত সিয়ে দেশের মাটিতে আমি যেন বয়ে নিয়ে আসছি আরও বিপর্যয়! আমি জগৎ থেকে পালিয়ে গেছি, কিন্তু জগতের তো কোন উপায় নাই, সে তো আমার কাছ থেকে পালাতে অক্ষম! আমি মনে করছি এটাই সত্য! তা হলে তো শেষ পর্যন্ত আফসোস করতে হবে আমাকে, আমার কারণেই তো দেশে ঘটেছে অঘটন, অনুতপ্ত থাকতে হবে আমাকে সারাটা জীবন!
থিয়ান চৌ থেকে ফিরে আসার পথে, ভিক্ষা করে আনা রূপার খন্ড গুলো ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে বহন করছিলাম। আমার কোন রকম লজ্জা বোধ হচ্ছিলো না। শুধু মাত্র রূপা আনতে গিয়ে এতটা পথ ভ্রমণের কারণে আমি একেবারেই কোন আক্ষেপ করি নাই, কোন হাহুতাশ করার দীর্ঘশ্বাসও ফেলি নাই। দক্ষিণ অঞ্চলের বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ, এখন ফসল কাটার পর হয়ে পড়েছে শূন্য স্থান। দূরে তাকালে দেখা যায় দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ আর জনবসতি হীন বিশাল প্রান্তর! আমার নজরে আসছে অসংখ্য কালো হয়ে যাওয়া বৃষ্টিতে ভেজা খড়ের গাদা। আমি দেখতে পাচ্ছি কয়েক জন রাখাল বালক ওদের গরুর পালের পিছনে ছুটতে ছুটতে গিয়ে উঠে পরেছে স্বজন পরিত্যাক্ত পুরনো সমাধি সৌধের উপরে। এখন হঠাৎ করেই আমার উপলব্ধি হচ্ছে এ জগতে মানুষের নিয়তিই হচ্ছে একটা শ্রমসাধ্য কষ্টকর ভ্রমণ ! অনেকটা যেন, ঐ রাখাল বালকদের মতো, যারা কিনা অনাবাদি পরিত্যক্ত জমি আর কবরস্থানের মধ্যে পশু চড়ায়! ওরা শুধু খুঁজে বেড়ায় অন্য মানুষের অজনা এমন একটা তৃণ ভূমি, যেখানে আছে একটা আচ্ছাদন, একটা আশ্রয়, জীবিকার অবলম্বন!
থিয়ান চৌ থেকে স্বচ্ছ ধারায় ফিরে আসার পথে আমি জীবনে প্রথম বারের মতো বুঝতে পারলাম যে, প্রতিটা মানুষই এক একটা নক্ষত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে! আমি জানি না আমার ক্ষেত্রে কি ঘটবে, আমি কি নীচে পড়ে যাবো, না কি উঠতে পারবো উপরের দিকে! তবে এবারই প্রথম আমি অনুভব করতে পারছি যে আমার সারা দেহে যেন জ্বলছে আগুনে! পাতলা কাপড় আর বাতাসের ধূলি কণার মধ্যে অস্পষ্ট ভাবে জ্বলছে এই অগ্নি শিখাগুলো। আমার ক্লান্ত-শ্রান্ত দু’টি হাত, দুই পা আর প্রশান্ত হৃদয় ও আত্মার মাঝে তীব্র উত্তাপ নিয়ে জ্বলছে এই আগুন!
পিতা কর্তৃক বিক্রি করে দেয়া শিশু কন্যা, ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো একটা ধূসর রঙের গাধার পিঠে চড়ে ছেড়ে গেছে সরাইখানার অঙ্গন! ঐ দিন সে পরিধান করেছিলো বেগুনি রঙের নতুন জামা এবং পায়ে দিয়ে ছিলো টক টকে লাল নতুন জুতা ! ওর মুখে ছিলো একটা চালের গুড়ার তৈরী মিষ্টি পিঠা, যা সে কট কট শব্দ করে কামড় দিয়ে চিবাচ্ছিলো! ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো যে কিনা আসলে বিক্রি হয়ে যাওয়া মানুষ ——- দেখতে ভারী সুন্দর যেন একটা বসন্ত কালের তরতাজা পীচ ফল! পুরো পথটাতেই সে ছিলো খুবই আনন্দিত, সে হাসছিলো, কথা বলছিলো উচ্ছ¡সিত স্বরে! পথে কেউ কেউ ওকে চিনতে পেরেছে যে, সে তো হচ্ছে মাও বাড়ীর সরাইখানা-র মেয়ে, ওরা প্রশ্ন করছে, ইউ সুয়ো তুমি কোথায় যাচ্ছো? ইউ সুয়ো গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে বলেছে, যাচ্ছি রাজধানী শহরে ! রাজধানী শহরে গিয়ে গাছের গুড়ি গড়ানোর খেলা দেখাবো, আয়োজন করবো প্রদর্শনীর!
লা পা উৎসব-এর আগে, কোন একটা দিনে, আবহাওয়া ছিলো অদ্ভুত সুন্দর রোদ ঝলমলে আর উষ্ণ! একটু যেন আগে ভাগেই শিল্প কলার নৈপুণ্যের কর্ম দক্ষতা প্রদর্শনের পথে আমরা নেমে পড়েছি! মোট তিন জন মানুষ —– আমি, ইয়েন লাঙ এবং আট বছরের স্বচ্ছ ধারা এলাকার ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো! পরবর্তীতে আমরা আমাদের চলার পথের চূড়ান্ত গন্তব্য ঠিক করলাম দেশের রাজধানী শহরে। সব কিছুই করা হচ্ছে ছোট্ট মেয়েটার স্বপ্ন পূরণের নিমিত্তে! তিন জন মানুষ চলছে দু’টো গাধার পিঠে চড়ে, একটা গাধা বড়, আরেকটা গাধা ছোট। সাথে আছে এক টুকরা দড়ি আর দু’টি গাছের গুড়ি। স্বচ্ছ ধারা ছেড়ে ওরা যাচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চলের দিকে। যে দলটি যাচ্ছে তারা হচ্ছে ভবিষ্যতের জগৎ বিখ্যাত দড়াবাজী খেলায় দক্ষ ‘দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার রাজা’ দলের ক্ষুদ্র সংস্করণ!
।৩।
‘দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার রাজা’ দলের দড়াবাজী খেলার দক্ষতার বিচার বিশ্লেষণ স্থান, প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন হলো সৌরভ জেলা সদরের রাজপথের এক প্রান্তে। দক্ষতার বিচার বিশ্লেষণের প্রদর্শন অপ্রত্যাশিত ভাবেই সাফল্যের মুখ দেখলো! অনেক উঁচুতে টান টান করে টাঙ্গানো দড়ির উপর দিয়ে বানরের মতো দ্রুত ছুটে চলার সময়, আকাশে ভেসে আসছিলো এক টুকরা রহস্যময় লাল মেঘ! ওটা যেন আমার ঠিক মাথার উপর দিয়ে কুচকাওয়াজ করতে করতে যাচ্ছিলো। ওটা যেন পাহারা দিচ্ছিলো রাজ পরিবারে জম্ম নেয়া এক জন দড়াবাজ শিল্পীকে! নৈপুণ্যের দক্ষতা দেখতে রাস্তার মাথায় ভীড় করে জড়ো হওয়া মানুষ এক টানা বিরতিহীন ভাবেই প্রকাশ করছিলো তাদের আনন্দের উচ্ছ¡াস! কেউ কেউ সাথে এনেছে আশীর্বাদের উপহার, ওরা মন থেকেই কৃতজ্ঞতা আর সন্তুষ্ট চিত্তে টাকা রাখার তামার গামলায় ছুঁড়ে দিচ্ছিলো তাম্র মুদ্রা! কেউ কেউ কাঠের দালানের উপর দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলছিলো, ‘আগাও, লাফ দাও, শীর্ষাসনে দাঁড়াও, আবার ডিগবাজির খেলা দেখাও!’
অর্থ-বিত্তের জৌলুশ আর অবাধ যৌনাচারের দূষিত বাতাসে পূর্ণ সৌরভ জেলা-র বড় রাস্তা! আমি আমার গোটা জীবনকে যেন কর্তন করে দু’ভাগে ভাগ করেছি। সম্রাট হিসাবে আমার জীবনের ঐ অংশ এরই মধ্যে সিয়ে রাজ প্রাসাদের প্রাসাদ দেয়ালের নীচে নরম হয়ে পঁচে গলে ঝরা পাতার মতোই ঝরে পড়ে গেছে। আর আমার জীবনের পরের অংশে দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার কৌশলে আমি হচ্ছি সমসাময়িক কালের অদ্বিতীয় দক্ষতার অধিকারী, আমার যেন জম্মই হয়েছে নয় হাত লম্বা ঝুলন্ত দড়ির উপর দিয়ে সাবলীল ভাবে হাঁটার নিমিত্তে! আমি টানা দড়ির উপর দাঁড়িয়ে কি শুনেছি? আমি শুনেছি উত্তরের বাতাসের কান্না আর জয়ধ্বনি! আমি শুনেছি আমার সামনে থাকা নীচে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষের উচ্চ স্বরে প্রকাশিত আনন্দের উচ্ছ¡াস! ‘দড়ির উপর হাঁটার রাজা! তুমি এগিয়ে যাও! লাফ দাও! শীর্ষাসনে যাও!’, তাই আমি সত্যি সত্যিই এগিয়ে যাই! লাফ দেই! শরীরটাকে উল্টিয়ে গড়াগড়ি খাই, দড়ির উপর সাময়িক ভাবে দাঁড়াই একটুও নড়াচড়া না করেই! আমি দড়ির উপরে দাঁড়িয়ে কি দেখতে পাই? আমি দেখতে পাই সৌরভ জেলার সন্ধ্যার আগে হেলে পড়া সূর্যের আলোয় দ্রæত বর্ধিত হওয়া আমার সত্যিকারের ছায়া! আমি দেখতে পাই একটা সুন্দর সাদা পাখী যা কিনা আমার আত্মার গভীর থেকে উড়ে আসে, স্বাধীন ভাবে দাম্ভিকতা নিয়ে সাধারণ মানুষ জনের মাথার উপর দিয়ে চোখের পলকেই মিলিয়ে যায় বিস্তৃত সীমাহীন শূন্যে!
আমি হচ্ছি দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার রাজা!
আমি হচ্ছি পাখী!
সৌরভ জেলাটা হচ্ছে এক টুকরা উদ্বেগ শূন্য স্বর্গ রাজ্য । যদিও এ বছরটায় বিরামহীন যুদ্ধ বিগ্রহ আর মানব সৃষ্ট দূর্যোগের সাথে এসেছে প্রাকৃতিক দূর্যোগ, তবুও সৌরভ জেলাবাসিদের বিলাস বৈভব আর কাম-আনন্দ অনুসন্ধানের কোন কমতি দেখা যায় নাই! কোন একবার নীল দালানের ফুর্তি পাড়ায় এক মাতাল যুবককে আমি দেখেছি পাগলের মতো রাস্তা দিয়ে যাওয়া প্রতিটা মেয়েকে উত্যক্ত করতে! কয়েকটা বড় লোকের ছেলেকে দেখেছি একটা কুকুরকে ঘিরে দাঁড়াতে। ওরা কুকুরটার পায়ু পথ দিয়ে একটা লম্বা মোচরানো কাগজের পটকা বাজি চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। উচ্চ শব্দে কাগজের বাজিটা বিস্ফোরিত হওয়ার পর ঐ কুকুরটা পরিণত হয়েছিলো পাগলা কুকুরে। ওটা পাগলের মতো ডাকতে ডাকতে রাস্তায় ছুটাছুটি শুরু করেছিলো। ওকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তায় চলা পথিকরা রাস্তার এক পাশে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছিলো! আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারি নাই, ঐ ছেলেগুলো কেনো একটা সুস্থ শান্ত ভালো কুকুরকে পরিণত করেছে একটা পাগলা কুকুরে! আমি বুঝতে পারি নাই, ঐ ছেলেগুলো কি তালাশ করছে! কি ধরনের বিকৃতি আর বিকৃত যৌন আনন্দ খুঁজছে ওরা?
অগ্নি ময়ুর দালান-এর সামনে আগের মতোই আছে গাড়ী ঘোড়ার ভীড়! আমি কয়েকবার এই দালানের সামনে গিয়ে মাথা তুলে দালানের উপরের জানালা দিয়ে ভিতরে তাকিয়েছি! নজরে এসেছে প্রদীপের শিখা আর মানুষের ছায়া। শুনতে পেয়েছি পতিতালয়ে ঘন ঘন যাতায়াত কারী অসভ্য, অভদ্র কিছু লম্পট মানুষের কাম উদ্দীপক কথাবার্তা আর অশ্লীল ইঙ্গিত পূর্ণ হাসির শব্দ! হুই ছোট রানী এই দালানের ভিতরে নেই, সে এরই মধ্যে এই পতিতালয়টি ছেড়ে চলে গেছে। দালানের সামনে থাকা লন্ঠনের উপরে লেখা ফিন চৌ থেকে আসা ‘পাই চিউ নিয়াং’ নাম সম্বলিত অক্ষর গুলো মুছে ফেলা হয়েছে! এর বদলে লন্ঠনের উপর নতুন করে লেখা হয়েছে থা চৌ থেকে আসা লি পদবীর একটা মেয়ে এবং শৈত্য প্রবাহ জেলা থেকে আসা চাং পদবী ধারী আরেকটি মেয়ের নাম। (চলবে)