শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : যা কিনা আমার মন একে বারেই নিতে পারছিলো না। স্বচ্ছ ধারা জেলার দিকে হোঁচট খেয়ে টলতে টলতে হাঁটতে লাগলাম আমি। আমার মাথাটা যেন খালি হয়ে গেছে , ধূয়ে মুছে গেছে সব কিছু! শুধু অবশিষ্ট আছে দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া দড়াবাজ শিল্পীদের পায়ের নীচে থাকা নারকেলের ছোবড়ার দড়িটা! দুই প্রান্ত টান টান করে বাঁধা দড়িটা যেন আমার চোখের সামনে উপরে নীচে উঠা নামা করছে, নাচানাচি করছে! যেন একটা ভাসমান চলতে থাকা পানির ঢেউ, যেন একটা অলীক চমৎকার উজ্জ্বল ফিতা, ওটা যেন রাতের আঁধারে সমুদ্রের মধ্যে আমার জন্য শেষ আশার একটা বাতি ঘর!
। ২।
স্বচ্ছ ধারা জেলা-র জোড়া মিনারের বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে, দড়াবাজী কৌশলী খেলোয়াড় দলের উপস্থিতির কিছু চিহ্ন আমার নজরে আসলো। আমার চোখে পড়লো এক গাদা বানরের মল, আর ছিঁড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া দড়াবাজ খেলোয়াড়দের ব্যবহার করা লাল রঙের পশম যুক্ত এক পাটি জুতা! আমি বৌদ্ধ মন্দিরের পুরোহিতকে প্রশ্ন করে জানতে চাইলাম যে দড়াবাজী খেলার দলটা কোন দিকে গেছে। পুরোহিত প্রশ্নের উত্তর দিলেন খুব শীতল নিরুত্তাপ কন্ঠে, আর তার জবাবটা ছিলো অপ্রাসঙ্গিক! তিনি বললেন, “এসেছে, আবার চলেও গেছে!”, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কোথায় গেছে?”, তিনি বললেন, “একটা শান্তিতে ভরা নিরবতার দৃষ্টি কি ভাবে নজরে রাখবে অশ্লীল হট্টগোল ভরা কোন কিছুর গতিবিধি? তুমি বাজারে ঘুরাঘুরি করে এমন কাউকে জিজ্ঞেস করো গিয়ে!”
আমি ঘুরে দাঁড়ালাম, তারপর ফল বিক্রেতার দোকানে গিয়ে কয়েকটা নাশপতি কিনলাম। সৌভাগ্যক্রমে, ফল বিক্রেতাও আমারই মতো দক্ষিণ অঞ্চলের শিল্পকলার ধারক দড়াবাজী খেলার এক জন ভক্ত! সে খুবই আগ্রহ ভরে কয়েক দিন আগে এখানে দড়াবাজী খেলার যে প্রদর্শনী হয়েছিলো, তার একটা চমৎকার বিবরণ দিলো। সবশেষে সে তার দাঁড়ি পাল্লাটা দিয়ে দক্ষিণ দিকে ইঙ্গিত করে বললো, “দুর্ভাগ্য, ওরা স্বচ্ছ ধারা জেলায় ওদের খেলার প্রদর্শনী করেছে মাত্র একদিন! ওরা বলেছে যে, ওরা আরও দক্ষিণে যাবে। দলের লোকজন বলেছে যে, ওরা খুঁজতে যাচ্ছে একটা শান্তি পূর্ণ জগৎ, যেখানটায় ওরা তাবু গাড়বে, তৈরী করবে তাদের অনুশীলন কেন্দ্র । কিন্তু কোথায় আছে শান্তি পূর্ণ জগৎ?”, ফল বিক্রেতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “সীলমোহর দেশটায় এখন আছে সব চাইতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ! সম্ভবত ওরা সীলমোহর দেশের দিকেই গেছে। অনেক মানুষই তো ঐ দিকেই চলে যাচ্ছে! শুধু লাগবে টাকা, যদি আপনার কাছে টাকা থাকে তবে সীমান্ত রক্ষী সৈনিকদের আপনি ঘুষ দিতে পারবেন, আর তা হলেই আপনি পালাতে পারবেন এই দুর্ভাগা সিয়ে দেশ থেকে!”
আমি ছোট একটা চুঙ্গাকৃতির ছুরি তুলে নিয়ে একটা নাশপতি দুই খন্ড করে ফেললাম। একটা খন্ড মুখ পুরলাম, বাকী অর্ধেক ফেলে দিলাম মাটিতে। ফল বিক্রেতা খুবই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো, ওর কাছে হয়তো মনে হচ্ছে, আমার নাশপতি খাওয়ার পদ্ধতিটা সাধারণ মানুষের মতো নয়! “আপনি কি ভাবে দড়াবাজী খেলার ভক্ত হলেন?”, ফল বিক্রেতা বললো, “আপনার নাশপতি খাওয়ার ধরণ দেখে মনে হয়, আপনি হচ্ছেন রাজধানীর কোন সম্ভ্রান্ত বংশের মানুষ!” আমি ফল বিক্রেতার কথার কোন জবাব দিলাম না। আমি ভাবছি, স্বপ্ন পূরণের নিমিত্তে হাজার লি পথ পাড়ি দেয়ার কাজে আমার ভাগ্যটা যেন পরিপূর্ণ ভাবে ঢাকা পড়ে আছে একটা বিয়োগান্তক রঙের প্রলেপে! আমার এই কঠোর পরিশ্রম যুক্ত কষ্টকর অনুসন্ধান কাজের প্রাপ্তি হিসাবে যে খবরটা আমি জানতে পারছি, সেটা হচ্ছে ঐ ভ্রাম্যমান দড়াবাজী কৌশল প্রদর্শন করার দলটি ইতিমধ্যেই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ঢুকে পড়েছে সীলমোহর দেশ-এর ভিতরে, ওরা যে ক্রমশই আমার কাছ থেকে চলে যাচ্ছে দূরে বহু দূরে!
“যদি যেতে হয়, তা’ হলে যাও! এটা কোন ব্যাপার না!”, আমি নিজে নিজে বিড়বিড় করে বললাম!
“জনাব, আপনি কি কিছু বলছেন?”, খুব বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ফল বিক্রেতা জিজ্ঞেস করলো!
“তুমি কি দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার কৌশলের দড়াবাজী খেলাটা পছন্দ করো?”, আমি ফল বিক্রেতাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, “তুমি মনে রেখো, কোন একদিন আসবে, যখন আমি হবো পৃথিবীর সব চাইতে ভালো দড়াবাজী কৌশলের খেলোয়াড়, আর দক্ষ শিল্পী!”
আমি ফিরে গেলাম বৌদ্ধ মন্দির-এর সামনের চত্বরে! মন্দির আর সন্ন্যাসী আশ্রমের সামনের বেদীর উপর বসে রইলাম আঁধার ঘনিয়ে আসা অবধি, মন্দিরে আগর বাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করতে আসা নারী-পুরুষ বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী ভক্তরা মন্দির থেকে আস্তে আস্তে ঘরে ফিরে যেতে শুরু করেছে। সন্ন্যাসী এবং সেবকবৃন্দ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চুল্লী ও পাত্র গুলো ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করার কাজে, ওরা সরিয়ে নিচ্ছে আগর বাতির ছাই এবং পুড়ে যাওয়া মোমবাতির পরিত্যক্ত মোম। একজন সন্ন্যাসী ধীরে ধীরে হেঁটে আমার পাশে এসে বললো, “আগামীকাল ভোরে আবার এসো! তীর্থ যাত্রীদের মধ্যে যে প্রথম এসে বাতি জ্বালাবে নিঃসন্দেহে সে জম্ম নিয়েছে সৌভাগ্যের রাশিতে, ভাগ্য সব সময়ই তার অনুক‚লে থাকবে!”, আমি মাথা নাড়লাম এদিক ওদিক! আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো ওকে বলি যে, মন্দিরে পূজা দেয়ার মধ্যে আমি কোনই অর্থ খুঁজে পাইনা! খুঁজে পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছি, আমি আছি সত্যিকারের কঠিন অবস্থার মধ্যে! মন্দিরে খুবই আন্তরিক আর ভক্তি ভরে আগর বাতি আর মোমবাতি জ্বালানোর কাজ আমাকে রক্ষা করতে পারবে বলে মনে হয় না! যেটা আমাকে রক্ষা করতে পারে সেটা হচ্ছে আমার নিজের শক্তি!
আঁধার ঘনিয়ে এসেছে, স্বচ্ছ ধারা জেলা-র জেলা সদরে মানুষের কর্ম চাঞ্চল্যের কোলাহল থেমেছে, নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা আর একটা আরাম দায়ক শীতল পরিবেশ! এখানকার বাতাস ফিন চৌ নগরের বাতাসের চেয়ে অনেক বেশি পরিষ্কার দূষণ মুক্ত! পুদিনা ঘাস এবং অন্য একটা রাস্না ফুল-এর হালকা সুবাস বাতাসে ভেসে আসছে! আমার মনে হয় স্বচ্ছ ধারা জেলার উত্তর প্রান্তে থাকা বিশাল হ্রদের জল রাশি আর হ্রদের ওপাড়ের গিরি মালার অবস্থান, এই এলাকাটাকে ফিন চৌ থেকে আসা মহামারী আর ছত্রাকের হাত থেকে পৃথক করে বাঁচিয়ে দিয়েছে! স¤প্রতি কালে এমন একটা সাধারণ শান্তি পূর্ণ নীরব রাত আমার জন্য অর্জন করাটাও বেশ দুঃসাধ্য! আমার ঘুম পাচ্ছে, চোখ বুঁজে আসছে, আসছে গভীর ঘুম! বৌদ্ধ মন্দিরের প্রধান ফটকটা বন্ধ করার অস্পষ্ট শব্দ শুনতে পেলাম। সন্ন্যাসীদের সান্ধ্য মন্ত্র পাঠের সাথে সাথে কাঠের মন্দিরা বাজাবার ঠক ঠক্ সুরালো আওয়াজ কানে আসছে। সব শেষে মন্দিরের হলুদ দেয়ালে হেলান দিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম! খুব ভোরে আমার মনে হলো কে যেন একটা পাতলা জামার মতো কাপড় দিয়ে আমার শরীরের উপরের অংশ ঢেকে দিলো। কিন্তু আমি চোখ খুলতে পারলাম না, আমি সত্যিই চরম ক্লান্ত হয়ে পড়েছি!
আমার বিশ্বস্ত দাস —— আমাকে অনুসরণ করা পথের সঙ্গী ইয়েন লাঙ, ভোরের আলো ফোটার সময়ই উপস্থিত হয়েছে আমার সামনে! আমার ঘুম ভাঙ্গার পর আমি দেখতে পেলাম আমার পা দু’টি জড়িয়ে ধরে সে নিশ্চল হয়ে বসে আছে! আমি দেখতে পাচ্ছি ওর ঝুঁটি বাঁধা চুলের উপর জমেছে মুক্তার মতো রাতের বাতাস থেকে ঝরে পড়া শিশির বিন্দু গুলো, চুলের ঝুঁটি পূর্ণ হয়ে আছে ফোঁটা ফোঁটা পানিতে! আমার সন্দেহ হচ্ছিলো, আমি কি বাস্তবে আছি, না কি ডুবে আছি স্বপ্নের ঘোরে! আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে ইয়েন লাঙ আবার আমার পথের সঙ্গী হবে, শুধু তাই নয় স্বচ্ছ ধারা জেলায় খোলা আকাশের নীচে ঘুমিয়ে থাকার রাতেই সে এসে উপস্থিত হবে আমার পাশে!
“কি ভাবে খুঁজে পেলে আমাকে?”
“আমি ঘ্রাণ নিয়ে বুঝতে পারি জাঁহাপনার শরীরের গন্ধ, যত দূরেই থাকুন না কেন, আমি ঘ্রাণ নিতে পারি! জাঁহাপনার কাছে কি ব্যপারটা অদ্ভুত লাগছে! জাঁহাপনার কি মনে হয় আমার নাক কুকুরের মতো?”
“হেঁটেছো কতোটা পথ?”
“জাঁহাপনা যতটা পথ পাড়ি দিয়েছেন, আমিও ঠিক তত টুকু পথই হেঁটেছি!”
আমি বাক্য হারা হয়ে ইয়েন লাঙ-কে জড়িয়ে ধরলাম। ওর শীতের জামা সহ সারা দেহটা ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে! আমি জড়িয়ে ধরে আছি ইয়েন লাঙ-কে, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি যেন আঁকড়ে ধরে আছি একটা জীবন রক্ষাকারী ধানের খড়, যেটা কিনা হারিয়ে গিয়েছিলো আমার জীবন থেকে! আমাদের সেই বিদায় পর্ব থেকে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া নানা তুচ্ছ ঘটনার বিস্তারিত বিষয় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করলাম। এই আলাপ করার সময়ই আমি অনুভব করলাম যে, আমার ও ইয়েন লাঙ-এর মাঝে থাকা প্রভু-ভৃত্যের ব্যবধানটা মিলিয়ে গেছে! এখন আমারা পরিণত হয়েছি দুই ভাই-এ, যাদের মধ্যে নির্মিত হয়েছে একই ভিত্তিশিলার জীবন-মৃত্যু আর দুঃখ-সঙ্কটের প্রগাঢ় ভ্রাতৃত্ব!
স্বচ্ছ ধারা জেলা-র জনাকীর্ণ কোলাহল মুখর সরাইখানা, যেটা ছিলো দক্ষিণ মুখি শরনার্থীদের দ্বারা পরিপূর্ণ, সেখান থেকেই আমি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর চমৎকার সিদ্ধান্তটি নিলাম, আমি ইয়েন লাঙ-কে বললাম, “আমি আমার ভাসমান জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে যাচ্ছি! আমি ভাবছি স্বচ্ছ ধারা জেলায় থেকে গিয়েই অনুশীলন করবো দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার কলা কৌশল! তারপর লাপা উৎসবের সময় জনতার সামনে দড়াবাজী খেলার নৈপুণ্য কৌশলের প্রদর্শনী করবো। আমার মনে হয়, দু’জন মানুষ নিয়েও একটা দড়াবাজী খেলার দল তৈরী করা যেতে পারে! আর আমার আত্মবিশ্বাস আছে যে, আমিই হবো জগতের সবচেয়ে চৌকস দড়াবাজী খেলার শিল্পী!”
“কি ভাবে অনুশীলন করবেন?”, ইয়েন লাঙ অনেকক্ষণ নিশ্চুপ রইলো। তারপর কতোগুলো বাস্তবতার সাথে সম্পৃক্ত প্রশ্ন উত্থাপন করলো। “কোথায় গিয়ে অনুশীলনের প্রশিক্ষক খুঁজে পাবেন? কোথায় পাবেন দড়াবাজী খেলার যন্ত্রপাতি আর অনুশীলন করার জায়গা?”
“বিশেষ কোন যন্ত্রপাতির দরকার নাই!”, আমি সরাইখানার জানালাটা খুলে ফেললাম। আমি ওকে ইশারা করে উঠানের মধ্যে থাকা দু’টি টক বড়ুই গাছ-কে দেখালাম। আমি বললাম, “তুমি কি দেখেছো ঐ গাছ দু’টিকে? এ দু’টি গাছ হতে পারে দড়াবাজীর দড়ি টানাবার থাম, ঈশ্বরের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য দেয়া সর্বোত্তম উপহার! তুমি শুধু আমার জন্য জোগাড় করো এই বুড়ো আঙ্গুলটার মতো মোটা এক টুকরা নারিকেলের ছোবড়ার তৈরী দড়ি! তাহলে আমি আগামীকাল থেকেই অনুশীলন শুরু করতে পারি!”
“জাঁহাপনা যদি দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার অনুশীলন করেন, তা হলে আমি শিখবো গাছের গুড়ি গড়িয়ে নেয়ার খেলাটা।”
সব কিছুরই শুরুটা হয়েছিলো গ্রীষ্মের সমাপ্তি আর শরতের প্রারম্ভের ঐ প্রভাতটা থেকে! আমার মনে আছে, ঐ দিন স্বচ্ছ ধারা জেলার আকাশটা ছিলো অনেক উঁচু, অনেক নীল! সূর্যটা ছিলো অনেক লাল, আর অনেক বড়! সরাইখানায় রাত যাপন করতে আসা ভ্রমণ পথের যাত্রীরা তখনও শরতের ভোরের হাওয়ায় গভীর নিদ্রায় মগ্ন। আমি বাম পাশের টক বড়ুই গাছটা বেয়ে উপরে উঠলাম, দুলতে দুলতে অনেক উঁচুতে টান টান করে বাঁধা রশির উপর উঠে দাঁড়ালাম। ধাম করেই পড়ে গেলাম নীচে! তারপর ডান দিকের গাছটা বেয়ে দড়ির উপরে উঠলাম। একটু একটু করে হেঁটে এগুবার পরই পড়ে গেলাম, কিন্তু এবার মাটিতে না পড়ে ধরে ফেললাম রশি, ঝুলে পড়ে আস্তে নেমে আসলাম মাটিতে। এমনটারই পুনরাবৃত্তি ঘটলো বেশ কয়েক বার। আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, পিছিয়ে আসছিলাম। আমি শুনতে পাচ্ছিলাম আমার হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত উচ্ছ¡াস যা ছিলো কতটাই না ক্ষিপ্তবৎ আর উম্মাদনায় ভরা, ছিলো কতোটাই না মর্মান্তিক বীরত্বের স্পর্শ মাখা! ইয়েন লাঙ উপরের দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখছিলো। ওর শুকিয়ে যাওয়া চেহারাটায় দেখা দিচ্ছিলো স্ফটিক স্বচ্ছ মুক্তার মতো অশ্রæর ফোঁটা। সরাইখানার দরজার সামনে দাঁড়ানো ছোট মেয়েটা, সম্ভবত সরাইখানার মালিকের কন্যা, সে ঘুম জড়ানো চোখে আমার প্রারম্ভিক অনুশীলনের দৃশ্য অবলোকন করছিলো। শুরুতে মেয়েটি হাত তালি দিয়ে হি হি করে হাসছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই সে ভয় পেয়ে গেলো, ওর কন্ঠ থেকে বেরিয়ে আসলো আতঙ্কের কান্নার আওয়াজ। ছোট মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে দৌড় দিয়ে সরাইখানার ভিতরের দিকে চলে গেলো, মেয়েটি দৌড়াতে দৌড়াতে চেঁচিয়ে বললো, “আব্বা! এসে দেখো, লোকটা! ঐ লোকটা কি করতে যাচ্ছে?”
সরাইখানার সবার একটা সাধারণ ধারণা, আমি হচ্ছি একটা ক্ষয়িষ্ণু বনেদী পরিবারের কর্ম বিমুখ নতুন প্রজন্মের মানুষ! আমার প্রতিদিনের কঠোর অনুশীলন ওদের চোখে আমার নিজের একটা অদ্ভুত সখের খেয়াল বৈ অন্য কিছু নয়। চলবে