শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : তুমিও জানো কেবল মাত্র ফিন চৌ-তেই পাওয়া যায় সব চাইতে উন্নত মানের তীর ধনুক।”
“তীর ধনুক ক্রয় করার ব্যপারটা বানানো মিথ্যা কথা, সশস্ত্র বিদ্রোহ আর অরাজকতা সৃষ্টি করাই ছিলো তোমার লক্ষ্য, আর এটাই সত্য কথা। আমি জানি তোমার মনের মধ্যে কি আছে। তুমি বরাবরই বিশ্বাস করো, আমাদের বাবা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার দিয়ে গেছেন তোমাকে। আর এটাই তোমার ধ্যাণ জ্ঞান, তুয়ান উ-ও এমনটাই ভাবে। আর আমি কখনোই ভাবি নাই, কোন কিছুই আশা করি নাই। কিন্তু আমি হয়ে গেছি সিয়ে দেশের সম্রাট! আমি তো তোমারও সম্রাট। তোমার চোখের দৃষ্টিতে থাকা ক্ষোভের আগুন আমি পছন্দ করি না। ধিক ধিক করে ক্রমাগত পুঞ্জীভূত হচ্ছে ঘৃণা, সেই সাথে আছে দুর্বিনীত ক্রোধের অহঙ্কার। তুমি কি জানো, কখনও কখনও আমার সত্যিই ইচ্ছা করে তোমার চোখ দু’টো উপড়ে ফেলতে?”

“আমি জানি। শুধু চোখই নয়, আমার হৃদপিণ্ডটাও যদি তোমার অপছন্দ হয় তবে তুমি তো আমার হৃদপিণ্ডটাও উপড়ে ফেলতে পারো!”

“তুমি খুব বুদ্ধিমান। কিন্তু আমি তোমার অতিরিক্ত বুদ্ধিমান মাথাটাকে পছন্দ করি না, আরও পছন্দ করি না তোমার এই মেধা যদি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার চিন্তায় ব্যয় করো। আর সেই রকম যদি চিন্তা করতে থাকো তবে আমি তোমার অতি বুদ্ধিমান মাথাটা কেটে ফেলবো। আর ঐ জায়গায় বসিয়ে দেবো একটা শুকরের মাথা কিংবা কুকুরের মাথা। তুমি কোনটা চাও? কুকুরের মাথাওয়ালা, না কি শুয়োরের মাথাওয়ালা মানুষ!”
“জাঁহাপনা যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন যে আমাকে মরতে হবে, তবে এমন অপমান এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আমি নিজেই মৃত্যুকে স্বাগত জানাবো।”

আমি দেখলাম তুয়ান ওয়েন পাথের বেদী থেকে উঠে দাঁড়ালো। সে আমার দিকে পিছন ফিরে ঘুরলো, তারপর চলে গেলো নৈকট্য পাহাড় গুরু গৃহের ভিতরে। অল্পক্ষণ পরেই সে ফিরে আসলো। সে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলো একটা তলোয়ার এবং সেটা বের করলো! কেতাদুরস্ত পোশাক পরিহিত দেহরক্ষীরা তত্ক্ষনাত ওকে ঘিরে ফেললো, ওরা আসলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তুয়ান ওয়েনের গতি বিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলো, ওরা ছিলো খুবই সতর্ক! আমি দেখতে পাচ্ছি তুয়ান ওয়েনের চেহারা তুষারের মতো সাদা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। ওর ঠোঁটের কোণায় এক মুহূর্তের জন্য ফুটে উঠেছে এক চিলতে হাসির রেখা, আবার পরের মুহূর্তে সেটা যাচ্ছে মিলিয়ে! লাল তামার তৈরী ছোট তলোয়ারটা উঁচু করে তুলে ধরা হয়েছে, সেটার উপর আলোর প্রতিফলন তৈরী করছে একটা হীমেল আতঙ্কের ঝলসানি! তীক্ষ্ণ ধারালো পৃষ্ঠের উপর সেই হীমেল আতঙ্কের ঝলসানি ক্ষণিকের জন্য আমার সচেতনতাকে লোপ পাইয়ে দিলো। আমার চোখের সামনে আরেক বার জ্বলজ্বল করে উঠলো পশ্চিম সীমান্ত পরিদর্শনের পথে অবলোকন করা ধ্বংস লীলার রক্তাক্ত দৃশ্যাবলী। আমি দেখতে পাচ্ছি শিক্ষা নবিশ সেনা কর্মকর্তা ইয়াং সোং-এর হাতের তালুতে ধরা আছে ওর নিজের দেহের ক্ষুদ্রান্তের বেরিয়ে আসা অংশ বিশেষ, যব ক্ষেতের কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা তার দেহটা। আমি দেখতে পাচ্ছি ইয়াং সোং-এর সহোদর ইয়াং তোং-এর রক্তে ভেজা কর্তিত মস্তকের ক্রোধ উন্মত্ত চোখের দৃষ্টি। তীব্র একটা ঘোর আমাকে আচ্ছন্ন করেছে। আমি এলিয়ে পরলাম, একজন দেহরক্ষী আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার পতন ঠেকালো।

“না, ওকে মেরো না, মরা মানুষ দেখলে আমার বমি আসে”, কথাগুলো আমি বিড়বিড় করে বললাম।
কেতাদুরস্ত পোশাক পরিহিত দেহরক্ষীরা কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে তুয়ান ওয়েনের ছোট তলোয়ারটা জব্দ করেছে। তুয়ান ওয়েন এখন একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে দেখছে দূরের রৌদ্রস্নাত তাম্র কাঠি পাহাড়ের একটা চূড়া! তার চেহারার অভিব্যক্তি দুঃখেরও নয়, খুশীরও নয়। ওর কপালের উপর আমি দেখতে পাচ্ছি প্রয়াত সম্রাটের ছায়া!
“প্রাণ ভিক্ষা চাওয়া যাবে না! মৃত্যুদন্ডও পাওয়া যাবে না! জাঁহাপনা, আপনি আমাকে নিয়ে কি করতে চান?”, তুয়ান ওয়েন আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

“আমি কোন কিছুই করবো না। আমি শুধু ভাবছি, তোমাকে পড়াশোনা করতে দেবো নৈকট্য পাহাড় গুরু গৃহের চার দেয়ালের মধ্যে থেকে। আমি ঘোষণা করছি, নৈকট্য পাহাড় গুরু গৃহের দশ কদম সীমার বাইরে যাওয়া তোমার জন্য নিষিদ্ধ!”

নৈকট্য পাহাড় গুরু গৃহ ত্যাগ করার আগে আমি তলোয়ারের তীক্ষ্ণ ডগা দিয়ে বড় ঝাউ গাছটার নীচে একটা দাগ টানলাম। এটা আমার নির্ধারণ করা তুয়ান ওয়েনের চলাফেরা করার চূড়ান্ত সীমানা। আমি মাথা তুলে বড় ঝাউ গাছটার দিকে তাকিয়ে খুবই অবাক হলাম! ঝাউ গাছটার শক্ত বাকলের উপর অসংখ্য ছোট ছোট ক্ষত চিহ্ন, বেরিয়ে এসেছে সাদা কষ! আমি দেখেই বুঝতে পারছি, এগুলো হচ্ছে তীরের ধাতব ফলার দ্বারা তৈরী ক্ষত। কোন সন্দেহ নাই তুয়ান ওয়েন তার মনের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্যই নিয়মিত অনুশীলন করছে নির্দিষ্ট নিশানায় তীর নিক্ষেপের, আর গাছের বাকলের উপর সৃষ্টি হওয়া এই দাগ গুলোই এর স্বাক্ষী!

তুয়ান ওয়েনের গৃহ বন্দীত্বের তথ্যের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে খবরটা দ্রæত ছড়িয়ে পরলো প্রাসাদ ভৃত্যদের মধ্যে, শুরু হলো গুঞ্জন। খবরটা আমার দাদী হুয়াং ফু ফুরেন এর কানে গিয়েও পৌঁছালো। তিনি আমাকে খুব একটা তিরস্কার করলেন না। কিন্তু মং ফু রেন খেলেন তাঁর হাতের লাঠির বাড়ির তিনটা ঘা! মং ফু রেন-কে সইতে হলো তীব্র ভর্সত্না, এমন কটু কথা তাঁকে আগে কখনও শুনতে হয়নি! তিনি অপমানিত বোধ করলেন, তাঁর মনে হলো, তাঁর নিজের আর মুখ দেখাবার যো নেই! ক্ষোভ আর অপমানের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে আরেকটু হলেই তিনি ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিলেন স্বাগত বসন্ত গৃহের পিছনের পানির কুয়াটাতে!
তুয়ান ওয়েনের গৃহ বন্দীত্বের ব্যপারটা জানাজানি হওয়ার পর তৈরী হলো খানিকটা বিভ্রান্তি। রাজ প্রাসাদের বাইরে রাজ দরবারের সভাসদদের মধ্যে একজন একজন করে ব্যপারটা নিয়ে আলোচনা করলেন। ভাইয়ে ভাইয়ের মধ্যাকার দ্ব›দ্ব খুব খারাপ পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলে অনেকেই সতর্ক করলেন, কিন্তু সমস্যার কোন কার্যকরী সমাধান নির্দেশক কথা বলতে পারলেন না কেউ। এক মাত্র প্রধানমন্ত্রী ফং আও প্রস্তাব করলেন একটা বাস্তব সম্মত সমাধানের। তার প্রস্তাবটা হচ্ছে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে তুয়ান ওয়েনের শুভ বিবাহের আয়োজন, যা কিনা তুয়ান ওয়েনের বিপজ্জনক জীবন ধারাকে নিয়ে আসবে একটা সুস্থিতি শীল অবস্থায়। ফং আও এর সতর্কতা মূলক বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে বিবাহের পর তুয়ান ওয়েনের বিষয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপ! ফং আও-এর অভিমত, জেষ্ঠ রাজকুমারকে যেন এক জন সামন্ত রাজা বানিয়ে দেয়া হয়! আর এ রকম হলে তুয়ান ওয়েন-কে থাকতে হবে প্রাসাদের বাইরে ওর নিজের জমিদারির এলাকায়। ওকে আর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে না। অন্ততপক্ষে সিয়ে দেশের রাজ প্রাসাদের ভিতরে রাজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সশস্ত্র বিবাদের মতো বিব্রত কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। ফং আও-এর কণ্ঠ স্বর গমগমে, তার চুলদাড়ি সব পেকে সাদা হয়ে গেছে। ফং আও হচ্ছেন সিয়ে দেশের দু’জন সম্রাটের শাসন আমলের প্রধানমন্ত্রী, তিনি যথেষ্ট ক্ষমতাধর, আর সেই সাথে তিনি হচ্ছেন হুয়াং ফু ফুরেনের আস্থাভাজন ব্যক্তি। ফং আও-এর বার বার ব্যক্ত করা সতর্কতামূলক পরামর্শের মধ্যে, হুয়াং ফু ফুরেন অবিরাম মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করলেন।

আমি জানি ফং আও-এর পরামর্শ দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কার্যকরী হবে!

আমি হয়ে গেছি এক জন দর্শক! হুয়াং ফু ফুরেনের নেয়া কোন সিদ্ধান্তে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না, হস্তক্ষেপ করতে চাইও না! শুধুমাত্র অনুসন্ধিত্সার কারণে, আমার দেখতে ইচ্ছা করছে, হুয়াং ফু ফুরেন তুয়ান ওয়েনের জন্য কি ধরনের মেয়ে পছন্দ করবেন! সিয়ে দেশের বিশাল রাজ প্রাসাদের ভিতরে আছে প্রয়াত সম্রাটের রেখে যাওয়া বহু মেয়ে মানুষ, যাদের যৌবনে আসছে ভাটার টান, চেহারায় ফুটে উঠছে শীর্ণতার লক্ষণ। যদি আমার ইচ্ছার বাস্তবায়ন সম্ভব হতো, তা’হলে আমি তুয়ান ওয়েনের জন্য বাছাই করতাম ঐ মেয়ে লোকগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে বয়স্ক আর সবচেয়ে বদ সুরত মহিলাটিকে! কিন্তু আমি জানি এমনটা হবে প্রাসাদের রীতি বিরোধী ব্যাপার, তাই আমার এমন ইচ্ছার বাস্তবায়ন কখনোই সম্ভব নয়। আমার মাতা মং ফু রেন খানিকটা অবজ্ঞা আর ঘৃণার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তুয়ান ওয়েন-এর বিবাহ সম্পর্কে কিছু ভবিষ্যত বাণী করলেন। তিনি আমাকে বললেন, “অপেক্ষা করো, আর দেখ! ঔ ডাইনী বুড়ী অবশ্যই ওনার বাপের বাড়ির কোন মেয়েকে তুয়ান ওয়েনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন। আগে হোক আর পরে হোক, দেখবে, সিয়ে রাজ প্রাসাদ ভরে যাবে ‘হুয়ং ফু’ পরিবারের মানুষের ভীড়ে! ওরা হাতে পাবে স্বর্গের রাজ্য!”
মং ফুরেনের ভবিষ্যত বাণী খুব অল্প দিনের মধ্যেই সত্য বলে প্রমাণিত হলো! যেমনটা প্রত্যাশা করা হয়েছিলো, তুয়ান ওয়েন স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করলো দেশের সংস্থাপন বিভাগের আমলাদের সভাপতি এবং মন্ত্রী হুয়াং ফু পিন-এর ষষ্ঠ কন্যাকে। প্রকৃত পক্ষে এ মেয়েটি হচ্ছে হুয়ং ফু ফুরেনের আপন ভাই এর নাতনী! আমি জানি এই মেয়েটা দেখতে মোটেও সুশ্রী নয়, ওর গায়ের রঙ মোটেও সুন্দর নয়। এই মেয়েটার একটা চোখ খানিকটা ট্যারা! বিবাহ বিষয়ে তুয়ান ওয়েনের প্রায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকার ব্যাপারে প্রাসাদের মধ্যে বেশ গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। এক কালের প্রাণবন্ত আর তেজী রাজ কুমার তুয়ান ওয়েন, এ কালে যেন হয়ে ‘উঠেছেন’ ঐ বৃদ্ধা মহিলার হাতে বানানো কলের পুতুলে, আর এমনটাই ভেবে বয়স্ক প্রাসাদ ভৃত্যরা ফেলছে দীর্ঘশ্বাস। কম বয়সী প্রাসাদ দাসী আর খোজা দাসরা বিবাহ অনুষ্ঠান উপলক্ষে আনন্দে উল্লসিত হলো। ওরা দর্শন জানালার পেছনে বসে নানা রকম শুকনো ফল, পিঠা, কেক, পুডিং, নানা রকম ফল মিশ্রিত মোরব্বা, বাদাম, পেস্তা, কিসমিশ মনের আনন্দে পরিতৃপ্তির সাথে আহার করলো।

শেয়াল খায় খরগোশের গোস্তো। শুনেছি খরগোশ মরার খবর শুনলে শেয়াল নাকি শোক প্রকাশ করে! তুয়ান ওয়েনের দুর্ভাগ্য দেখে আমি কিন্তু মনে মনে বেশ পুলকিত হলাম। তেজী আর দাম্ভিক তুয়ান ওয়েনের মুখ অবয়ব প্রথম বারের মতো আমার কাছে বেশ ম্রিয়মাণ মনে হলো। কারণ একটাই, সে বিবাহ করছে একটা ট্যারা চোখের মেয়েকে। আমি ইয়েন লাঙ-কে বললাম, “হুয়াং ফু পরিবারের ঐ মেয়েটিকে আমি আমার চাকরানী করতেও রাজি হোতাম না, তুয়ান ওয়েনের কপালটাই মন্দ!”

তুয়ান ওয়েনের বিবাহ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো পার্শ্ব প্রাসাদের সবুজ গরুড় পক্ষী দলানে। সিয়ে রাজ পরিবারের পূর্বসূরিদের রীতি অনুযায়ী দেশের সম্রাট কোন মন্ত্রীর পুত্র কন্যার বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। বিবাহ অনুষ্ঠানকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অনুষ্ঠানের দিন আমি অবস্থান করছিলাম শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে। শুনতে পাচ্ছিলাম পার্শ্ব প্রাসাদের দিক থেকে আসা ঢোল, ঘন্টা আর তারের বাদ্য যন্ত্রের শব্দ। আমি আমার তীব্র অনুসন্ধিত্সাকে দমন করতে পারলাম না। ইয়েন লাঙ-কে সাথে নিয়ে পিছনের বাগানের পার্শ্ব দরজা দিয়ে চুপি চুপি প্রবেশ করলাম পার্শ্ব প্রাসাদে! পার্শ্ব প্রাসাদের সবুজ গরুড় পক্ষী দলানের সামনে দাঁড়ানো নিরাপত্তা রক্ষীরা আমাকে চিনতে পারলো। তারা খানিকটা ভীত সন্ত্রস্ত হত বিহ্বল হয়ে হা করে তাকিয়ে দেখছিলো, আমি দাঁড়াতে যাচ্ছি ইয়েন লাঙের কাঁধের উপরে। ইয়েন লাঙ আমাকে নিয়ে ধীরে ধীরে ওর দেহটা খাড়া করতে যাচ্ছে। আর আমি ধীরে ধীরে উঠছি উপরের দিকে!

সবুজ গরুড় পক্ষী দলানের দেয়ালের উপরের ছোট জানালা দিয়ে ভিতরে চলমান বিবাহের অনুষ্ঠানের দৃশ্য আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম।
বড় ঢোলে বাড়ি দেয়ার আওয়াজ হলো আরেক বার। লাল মোমের আলো, যেন বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া সবার উপরই একটা বর্ণীল রঙের প্রলেপ লেপন করেছে। মর্যাদাবান রাজ পরিবারের অভিজাত বর্গদের মেদ বহুল শরীরের কাঠামোগুলোকে খানিকটা ভৌতিক অবয়বে আচ্ছন্ন বলে মনে হচ্ছে! তাদের মাথায় আছে উঁচু টুপি, কোমরে আছে প্রসস্থ কোমর বন্ধ যা আভিজাত্যের নির্দেশক। তাদের চুলে আছে মূল্যবান পাথর খোচিত খোঁপা বাঁধার কাটা। তাদের শরীর থেকে আসছে সুগন্ধি দ্রব্যের প্রাণ জুড়ানো সৌরভ। মানুষের ভীড়ের মধ্যে আমি দেখতে পেলাম আমার মা মং ফুরেনকে। পুরু প্রসাধনী মাখা তাঁর মুখমণ্ডলে আন্দোলিত হচ্ছে একটা স্মিত হাসির রেখা, যা কিনা নিজের কৃত্রিমতাকে লুকিয়ে রাখতে পারছে না একে বারেই!

হুয়াং ফু ফুরেন বসে আছেন একটা চেয়ারে, হাতে ধরা আছে তাঁর লম্বা ছড়িটা। তাঁর গ্রীবাদেশের ডানে ও বাঁয়ে ঢিলা হয়ে আসা মেদ ও মাংস বহুল ত্বক ঝুলে পরেছে, কাঁপছে থর থর করে। (চলবে)