অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে চীন যে অনেক বেশি কার্ড হাতে রেখেছে, তা ট্রাম্প হয়তো পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। এই অবস্থায় চীনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এর আগে, গত ৯ এপ্রিল, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করে দেন, যা আগের শুল্কসহ মোট ১৪৫ শতাংশে দাঁড়ায়।
দিন যত যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির ওপর কিছুদিন পরপর নতুন শুল্ক ঘোষণা করে ওয়াশিংটন। এরই ধারাবাহিকতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের ওপর শুল্কের হার আরও বাড়িয়েছেন। ফলে চীনা পণ্যে এখন মার্কিন শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪৫ শতাংশে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাতে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় হোয়াইট হাউস। তিনি অভিযোগ করেন, চীন ‘বিশ্ববাজারকে সম্মান দেখাচ্ছে না’। জবাবে, ১১ এপ্রিল চীন এই সিদ্ধান্তকে ‘রসিকতা’ আখ্যা দিয়ে মার্কিন পণ্যের ওপরও সমপরিমাণ শুল্ক আরোপ করে। খবর দ্য কনভারসেশনের।
তবে এইবারের চিত্র অনেকটা আলাদা। ২০১৮ সালের বাণিজ্যযুদ্ধের সময় চীন আলোচনার পথে হাঁটলেও এবার তারা আরও দৃঢ় এবং কঠোর, কারণ এখন তাদের হাতে রয়েছে বেশ কিছু কৌশলগত সুবিধা।
চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির হার ২০১৮ সালে ছিল ১৯.৮ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে নেমে আসে ১২.৮ শতাংশে। সেই সঙ্গে চীনের অর্থনীতি ধীরগতির হলেও আরও ধাক্কা সহনশীল হয়ে উঠেছে।
রেয়ার আর্থ বা বিরল খনিজের ওপর চীনের একচেটিয়া দখল রয়েছে। এগুলো উচ্চপ্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পে অপরিহার্য। চীন ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২৭টি প্রতিষ্ঠানের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি রপ্তানি বিশেষ করে সয়াবিন ও মুরগির মাংসের ওপর চীন সহজেই আঘাত হানতে পারে, যা মূলত রিপাবলিকান-সমর্থিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে উৎপাদিত হয়।
অ্যাপল ও টেসলার মতো বিশালাকার প্রতিষ্ঠানগুলো চীনা উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল, যা ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টির এক হাতিয়ার হতে পারে।
ইলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি, যিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এবং চীনে বড় বিনিয়োগকারী, তাকেও চীন কার্যত বিভেদ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
আন্তর্জাতিকভাবে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি চীনের কূটনৈতিক সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এখন একটি ত্রিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া চীনা প্রেসিডেন্ট শিগগিরই ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করবেন। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের সম্পর্কও উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ চীনের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করলেও, বেইজিং এটিকে এক বিরল কৌশলগত সুযোগ হিসেবে দেখছে যা দিয়ে তারা শুধু পাল্টা আঘাতই নয়, বরং বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস করার দিকেও এগিয়ে যেতে পারে।