অনলাইন ডেস্ক : কম্পিউটার ছোট হতে হতে ঢুকে গেছে মানুষের পকেটে। চলছে মঙ্গল গ্রহে বসতি গড়ার চেষ্টাও। এসবই সম্ভব হচ্ছে প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে। এরই ধারাবাহিকতায় শিগগিরই আসছে চালকবিহীন পণ্য সরবরাহকারী গাড়ি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য এরই মধ্যে এ ধরনের গাড়ির অনুমোদন দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, চালকবিহীন গাড়ি নিয়ে এর আগেও পরীক্ষা চলেছে। তবে এবারই প্রথম কোথাও পণ্য সরবরাহ সেবা দিতে চালকবিহীন গাড়ির অনুমোদন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নুরো আগামী বছরের গোড়ার দিকে তাদের এই চালকবিহীন গাড়িটি সড়কে নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে নুরোর গাড়িটির গতি ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটারের বেশি হবে না। এ ছাড়া প্রতিকূল আবহাওয়ায় এই গাড়ি সড়কে চালানো যাবে না বলেও শর্ত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ক্যালিফোর্নিয়ার মোটরযান দপ্তরের পরিচালক স্টিভ গর্ডন বলেছেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়ায় চালকবিহীন যানবাহনের যাত্রা শুরুর ক্ষেত্রে ওই অনুমোদনের ঘটনা একটি মাইলফলক। তবে জননিরাপত্তার বিষয়টি সব সময়ই আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলের সাবেক দুই প্রকৌশলী রোবটিকস কোম্পানি নুরো প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা তহবিল পেয়েছেন জাপানি প্রতিষ্ঠান সফটব্যাংক থেকে। নুরোর উদ্ভাবিত গাড়ি আরটু এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এটি কোনো চালক বা যাত্রী ছাড়াই চলতে পারবে। পথ চলতে এটি রাডার, থার্মাল ইমেজিং ও ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা ব্যবহার করবে। এতে নেই কোনো স্টিয়ারিং হুইল, প্যাডেল কিংবা সাইডভিউ মিরর।
বিবিসির খবরে জানানো হয়, আরটু গাড়িতে ডিমের আকৃতির অবকাঠামো রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে চলা অন্যান্য গাড়ির তুলনায় ছোট। গাড়িটির ভেতর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত দুটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। পণ্য নিয়ে গাড়িটি ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছানোর পর এর গায়ে থাকা স্ক্রিনে গ্রাহককে কোড চাপতে হবে। এরপরই কেবল গাড়ির দরজা খুলবে, ভেতরের প্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসবে কাঙ্ক্ষিত পণ্য।
এর আগে গত এপ্রিলে ক্যালিফোর্নিয়ায় গাড়িটির পরীক্ষা করা হয়। তার আগে গত ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা করা হয় টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে। এখানে আরটু গাড়িটি ডমিনো’স পিৎজা থেকে পিৎজা, সুপারমার্কেট চেইন ক্রোগার থেকে মুদিপণ্য এবং ওয়ালমার্ট থেকে পণ্য পৌঁছে দিয়েছে সঠিক ঠিকানায়।
এরপরও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের মন থেকে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের অধ্যাপক ডেভিড বেইলি বলেন, গাড়িটির গতি খুব বেশি হবে না। তা ছাড়া আরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এরপরও চালকবিহীন গণপরিবহনের ভবিষ্যতের পথে এটি বড় ধরনের অগ্রগতি।
তবে চালকবিহীন গাড়ি এই প্রথম সড়কে নামছে না। এর আগে গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্স শহরে গুগলের ওয়েমো সেবার অংশ হিসেবে সড়কে নামে চালকবিহীন ট্যাক্সি। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আলিবাবাও চীনের সাংহাইয়ে একই ধরনের একটি সেবার পরীক্ষা চালাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে এ রকম আরও অনেক জায়গায় চালকবিহীন গাড়ির পরীক্ষা চলছে।