বাহারুল হক
১)
পৃথিবীর আঁচল ধরে এত ঘুর ঘুর করো কেন?
পাড়ি দাও দূর-দূরান্তরে অন্য কোথাও।
ঐ তো মঙ্গল।
শুনেছি ওখানকার লাল মৃত্তিকা হাতছানি দিচ্ছে সবাইকে।
ওখানে নদী আছে, সমুদ্র আছে
আরো নাকি আছে উচ্চপর্বতমালার বিপুল সমারোহ।
যাও, ছুটে যাও।
অভিবাসী হও এই যে আমি হয়েছি এখানে।
নয়তো যাও, ছুটে যাও দূরে আরো বহু দূরে
যেখানে ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো
চোখ ধাঁধানো রঙিন চামরী নিয়ে অপেক্ষমাণ।
বিম্বিসার নিশা হয়তো ওখানে আছে
কিন্তু ভয় কী? সূর্য্যতো আছে।
তুমি বিভান্বিত হবে তারপর নিশিনাথ
হয়ে সবকিছু আলোকিত করবে।
শুক্লপক্ষ কৃষ্ণপক্ষের এই অনিস্পীত
দোদল্যমানতা আর কত দিন?
(২)
নদীর শাখা আছে, পর্বতের আছে উপত্যকা,
আছে মরুভূমির মরুদ্যান।
পরাস্ত এই আমার আছে শুধু স্মৃতিকথা।
বিস্মৃতির অতল গহব্বর থেকে শুধু টেনে তুলে আনা
নানা বর্ণ, শব্দ ও বাক্যের তিক্ত সংমিশ্রণ,
ভুলা না বুলার দ্রৌপদী বার্নিক।
পাহাড়ের উপর মেধহীন বাঁকা চাঁদ,
বিগতযৌবনা, ক্ষয়িষ্ণু, অধরা, প্রস্থানোদ্যত।
আমার অপলক দৃষ্টি ঐ শ্রীহীন বাঁকা চাঁদের দিকে।
আসমুদ্র হিমাচল ব্যাপী পরাস্ত সব মানবের
স্থির প্রতিবিম্ব ঐ চাঁদ, স্তব্ধ, নিস্প্রভ, বেজার, হতোদ্যম।
ইচ্ছে করে চাঁদের মুখে রুপের পলেস্তরা এঁকে দেই।
ইচ্ছে করে চাঁদের কানে কানে বলি-
ফিরে আস হিমাংশু, ফিরে দেখ
আমিতো যুযুৎসু নই,
তুমি একবার মৃণাল হও,
আমি পদ্ম হয়ে ফুটি।
(৩)
বাগড়ম্বরতা আমার বাগদত্তা।
আমি পরিপৃক্ত বাগীশ্বর।
আছি আজ এখানে,
কাল ছিলাম মথুরার বৃন্দাবনে;
সেখানে সঙ্খচিল মৃদঙ্গ বাজিয়েছে
আমি বন ময়ুরীর সাথে নৃত্য করেছি।
আগের দিন ছিলাম শ্রীরাঙাপত্তম,
মহীসূরের নৃপতি মহামতি
টিপু সুলতানের অতিথি হয়ে।
পূতাত্মা বীরবর টিপু সুলতান
বক্ষে তরবারি তুলে আমাকে বলেছিল-
‘তোমাকে সালাম’।
আগামীকাল চাঁদে যাব
আলোর বাহন চেপে।
চাঁদের লাস্যময়ী গালে এঁকে দেব কালো তিল।
চাঁদের হাসিতে চমকিত হবো,
চমকিত হবে মহীতল।
নিমীলিত চক্ষে চাঁদ অবলোকন করবে
পর্বতচূড়া, অবারিত মাঠ, নিতল উত্তাল সমুদ্র।
দূরে নিকেতনে বসে নির্মৎসর কবি লিখবে-
এসো হৃদয়েশ্বরী দূরস্থ চাঁদমুখ,
ঐ তিলের পরিবর্তে নেয়ে যাও
কাঞ্চনজঙ্ঘা, সমরকন্দ আর বোখারা।