সোনা কান্তি বড়ুয়া : ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের ইতিহাসে জয় বাংলার শহীদ দিবস! ইসলাম ধর্মের নামে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশে বাংলা ভাষা, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে ঢাকায় এসেছিল কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ধর্মভিত্তিক চোরাবালির রাজনৈতিক মঞ্চে ধর্মের মুখোষ পরে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের উর্দূ ভাষা প্রচলনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের ক্ষেত্রে বাঙালির অখন্ড সাধনা এবং এই অখন্ড সাধনার ফলেই সালাম, বরকত, রফিকসহ অনেক নাম না জানা শহীদদের জীবন দান!
বাংলাদেশে অতীত ও ঐতিহ্যে বৌদ্ধ অবদান চর্যাপদের ২৫৬৬ (বুদ্ধাব্দ) বাংলা সাল বাদ দিয়ে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন, বাংলা একাডেমীর অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসেবে “ভাষা চেতনা বাঙালির গর্বের বিষয়” শীর্ষক ভাষণে বলেন, “অনেকেই মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন করে যে ১৪০০ সাল হলো কী ভাবে। এখন ১৪১৭ তে কী ভাবে এলো, ১৪১৭ হচ্ছে মক্কা থেকে মদীনায় মোহাম্মদের (সা.) যাওয়ার দিন থেকে গণনার স্মারক। প্রথম দিকে লুনার এবং তারপরে সোলার ক্যালেন্ডার এই দুটি মিলিয়ে করা। আকবর সোলার ক্যালেন্ডারে বিশ্বাস করতেন। এটি কিন্তু বাংলা ছাড়া সাব কন্টিনেন্টের কোনো অঞ্চলে আর থাকেনি। (‘সাপ্তাহিক আজকালে পৃষ্ঠা ১৩, ফেব্র“য়ারী ৪, ২০১১ সাল, টরন্টো)!”
মুসলমানদের বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির বানানোর মত হিন্দুরাজনীতি ইসলামিক হিজরি (১৪৪৪) সালকে ভেঙে (চন্দ্র বা ইংরেজিতে সূর্য ক্যালেন্ডারের নামে) হিন্দুমার্কা বঙ্গাব্দ (১৪২৯) রচনা করতে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে হিন্দুরাজনীতির “আল্লাহ উপনিষদে” রচিত হলো: “আল্লো জ্যেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং, পূর্ণং ব্রহ্মানং অল্লাম। অর্থাৎ দেবতাদের রাজা আল্লাহ আদি সকলের বড় ইন্দ্রের গুরু।” তবে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে সোনার বাংলার অন্যতম শাসক মহাবীর ঈশা খাঁ সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। ১৪৪৪ হিজরিতে ১৪২৯ বঙ্গাব্দ জনবিদ্রোহের উপাদান ১ হিন্দুরাজনীতির “আল্লাহ উপনিষদে” ১৪৪৪ হিজরিতে ১৪২৯ বঙ্গাব্দ! ইংরেজিতে প্রথমে ঢাকা (Dacca) বানান ভুল ছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তা শুদ্ধ (Dhaka) করা হয়েছিল।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় :
“কথা কও, কথা কও। / অনাদি অতীত, অনন্ত রাতে
কেন বসে চেয়ে রও? / কথা কও, কথা কও।
যুগযুগান্ত ঢালে তার কথা / তোমার সাগরতলে,
কত জীবনের কত ধারা এসে / মিশায় তোমার জলে।”
আজ ২৫৬৬ বাংলা বর্ষ (থাইল্যান্ডের পঞ্জিকায় বুদ্ধবর্ষ ২৫৬৬) হবার কথা ছিল। চর্যাপদের ২৫৬৬ সাল বাদ দিয়ে ১৪৪৪ হিজরিতে ১৪২৯ বঙ্গাব্দ হিন্দুরাজনীতির জাল-জালিয়াতি প্রত্যহ ব্যাপকতর, প্রকটতর- এবং নির্লজ্জতর! নির্লিপ্ত থেকে যেতে চাওয়া বহু মানুষ যে-কোনও ঘটনার বিচার সেরে ফেলতে চান পলকে। মিডিয়া ট্রায়াল আর সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রোলিং’-এর দৌলতে সে কাজ আজ খানিক সহজও হয়েছে বটে। হিন্দুরাজনীতির গালিভারকে দেখে মানুষ বলে ভাবার ক্ষমতা ছিল না বৌদ্ধ লিলিপুটদের। তাদের যাপনের সমবায় যে আয়নার জন্ম দিয়েছিল সেখানে গালিভার কেবলই এক লেভয়াথান। অনুরূপ দৃশ্য মাঝেমাঝে দেখা যায় আমাদের টিভি-স্ক্রিনেও। ক্ষমতার মাথায় চড়ে বসা লোকগুলোর মাথায় যখনই অক্সিজেন কম যেতে শুরু করে, তখনই তারা চার পাশের মানুষের লজ্জা, হায়া শুষে প্রশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে; যে ভাবে দ্রৌপদীর শাড়ি ছিনিয়ে নিয়ে দুর্যোধন, দুঃশাসন নিজেদের ক্ষমতা-স্তম্ভ আর অসহ্য দম্ভের অনন্ত নগ্নতাকে ঢাকার চেষ্টা করেছিল। লজ্জা তখন দ্রৌপদীর ছিল, এখন হাথরস কিংবা হাঁসখালির মেয়েটার আছে। পল ভালেরির কথায়, “পাওয়ার উইদাউট অ্যাবিউজ? লুজ?েস ইটস চার্ম।”
ধর্মান্ধ হিন্দুরাজনীতি এমন এক অভিশাপ ধর্মান্ধ জটিল ধাঁধা, যা থেকে নিস্তার পাইনি মানবতাবাদী বৌদ্ধময় ভারতবর্ষ! ব্রাহ্মণ্ পুরোহিত ও হিন্দু রাজ শক্তিই হিংস্র জীব-জানোয়ারের চেয়েও ভয়ঙ্কর মানুষরূপী কোন জীব। ব্রাহ্মণরা নিজেদের সংরক্ষণকে ধর্ম বলে থাকে। ধর্মকে আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে জুড়ে অন্ধবিশ্বাসের সৃষ্টি করায়। সেইজন্য তাদের সংরক্ষণের উপর আলোচনা হয় না। অপরদিকে বহুজনের সাংবিধানিক অধিকারকে (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) সংরক্ষণ বলে তাকে আলোচনার প্রধান বিষয় রূপে উপস্থাপন করে থাকে এবং সমস্ত প্রকার শক্তিসামর্থ্য লাগিয়ে তার বিরোধিতা করে থাকে। ধর্মরূপ চাদরের মধ্যে ব্রাহ্মণের সংরক্ষণ সুরক্ষিত হয়ে আছে।
বৌদ্ধ বিহার ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে হিন্দুরাজনীতির তিরুপতি, বালাজী, ও পুরীর জগন্নাথ মন্দির”! আনন্দবাজার পত্রিকার (সম্পাদকীয়, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩) মতে, … সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেমন করিয়া ভুলিয়া গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করিয়া একদিন গড়িয়া উঠিয়াছিল রাশি রাশি হিন্দু মন্দির।“ ভারতে গৌতমবুদ্ধকে হিন্দুকরণ এবং ভারত দেশের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। ভারতের মন্দিরগুলির বার্ষিক আয় ২২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি, অর্থাৎ দেশের আর্থিক অবস্থানের চেয়ে ঢের বেশি। ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত সোনার পরিমাণ হচ্ছে ৩২৫০ টন। কিন্তু দেশের মন্দিরগুলিতে ৩০ হাজার টন সোনা পড়ে আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির কথা বাদ দিন, সর্বশক্তিশালী আমেরিকার কাছেও এত পরিমাণে সোনা নেই। দেশের উপর বিদেশি দেশগুলির ১৫ লক্ষ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। কিন্তু কেবল কেরলের পদ্মনাভ মন্দিরে ২৫ লক্ষ কোটির বেশি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। অর্থাৎ দেশের একটি মন্দির দেশের সমস্ত বেদেশিক ঋণ শোধ করতে সক্ষম। সেইরূপ শিরিড সাই, তিরুপতি, বালাজী, সিদ্ধিবিনায়ক ও জগন্নাথের মতো বড়ো বড়ো বাজেট বিশিষ্ট মন্দিরগুলিতে অমাপা ধনভাণ্ডার রয়েছে। তা ছাড়া ভূসম্পত্তি, হীরা, মোতি, মাণিক্য, সোনা, রুপার হিসাব কষতে ক্যালকুলেটরও ব্যর্থ হবে। এইসমস্ত মন্দির এবং এর সম্পত্তিতে শত শত বৎসর ধরে অধিকার কায়েম করে থাকা প্রথম সংরক্ষণ প্রাপ্ত বর্গ হচ্ছে ব্রাহ্মণ।
১৪৪৪ হিজরিতে ১৪২৯ বঙ্গাব্দ হিন্দুরাজনীতির সেই ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার কি কেবল রাজনীতির আঙিনায় থাকা মানুষরাই করেন? শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা গান, ‘মানুষ মানুষের জন্য’ শুনে অনেকে বলেন, গানের শেষে উনি কেন লিখলেন না, ‘যদি মানুষ কখনও বা হয় দানব’? সুবিধে হত তবে। রিকশায় বসে সে দিনের সওয়ারির কিন্তু মনে হল, একতরফা বিচারের পরিসর নেই আর পৃথিবীতে, প্রতিটি দানব কোনও না কোনও মানবিক কাজ করে গেছে। কে জানে, ইচ্ছে করেই হয়তো শেষ লাইনটা ওপেন-এন্ডেড রেখেছিলেন শিবদাসবাবু। মানুষ দানব হয়ে যাবে এটাই তো সমস্যা নয় কেবল, “যদি দানব কখনও বা হয় মানুষ,/ লজ্জা কি তুমি পাবে না/ ও বন্ধু?”
বাংলাদেশে অতীত ও ঐতিহ্যে বৌদ্ধ অবদান চর্যাপদের ২৫৬৬ (বুদ্ধাব্দ) বাংলা সাল বাদ দিয়ে বৌদ্ধগণকে নিশ্চিহ্ন করতে ১১৯২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র হিন্দু রাষ্ট্রধর্মের নেতা হয়ে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করতে ‘শেখ শুভোদয়া’ শীর্ষক বই লিখেছিলেন। তিনি তাঁর (হলায়ুধ মিশ্র) রচিত দিনলিপির (ডায়েরী) উক্ত বইতে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করতে মুসলিম তুর্কী মিশনের যোদ্ধাদের সাথে মহামন্ত্রীর (হলায়ুধ মিশ্র) গোপন ষড়যন্ত্র এবং রাজা লক্ষণ সেনকে সরিয়ে বখতিয়ার খিলজিকে বাংলার সিংহাসন আরোহনের নীলনক্সার পুঞ্জীভূত লোমহর্ষকর বাস্তব ঘটনাবলী অকপটে রচনা করে স্বীকার করলেন। রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র এবং বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন! রাতারাতি ইতিহাস তৈরী হয় না। এমনকি রাজা লক্ষন সেনের সভাকবি উমাপতি ধর পরে বখতিয়ার খিলজির সভাকবি হলেন কেন? ইহাই বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্মের ট্রাজেডি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে বাংলার বৌদ্ধগণ ইসলাম ধর্ম কবুল করেছিলেন। ১২০২ সালে রাজা লক্ষন সেনের হলায়ুধ মিশ্র মহামন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয় করেছিলেন!
বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া এবং মুসলমানদের বারাণসী জ্ঞানবাপী মসজিদে হিন্দুরাজনীতির শিবলিঙ্গ কেন? হিন্দুরাজনীতি শিবলিঙ্গ দিয়ে বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া দখল করেছে । ব্রাহ্মণ্যধর্মী বল্লাল সেন যখন বাংলার রাজা হলো, তখন সে বৌদ্ধধর্মীদের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে হুলিয়া জারি করলো। বল্লাল সেনাবাহিনীকে হুকুম দিল, ওদের (বৌদ্ধধর্মীদের) পিছনে ধাওয়া করে হত্যা করো। (গুরুচাঁদচরিত ষষ্ঠ সংস্করণের ২৩৮ ও ২৩৯ পৃষ্ঠা দেখুন)। বাংলাদেশে ধর্মান্ধ হিন্দুরাজনীতির ভুয়া আইডি ইসলাম ধর্মের নামে বৌদ্ধগণকে নিশ্চিহ্ন করতে চর্যাপদের ২৫৬৬ বাংলা সাল বাদ দিয়ে ১৪৪৪ হিজরিতে ১৪২৯ বঙ্গাব্দ করেছেন!
স¤প্রতি ভারতে বারাণসী দায়রা আদালত থেকে (আনন্দবাজার পত্রিকা ২৯ মে, ২০২২ ) অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’র তরফে বারাণসী আদালত ঘোষিত ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা, তহ্খানা-সহ মসজিদের একাংশ) এলাকা সিল করার নির্দেশ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর সময় বলা হয়েছিল, ওজুখানার জলাধারে পর্যবেক্ষক দল যে পাথরটি দেখেছেন সেটি আদতে ফোয়ারা। হিন্দুরাজনীতির গভীর চক্রান্তে “জগন্নাথ বুদ্ধ পুরাণ“ শীর্ষক তিন হাজার পৃষ্ঠার বই লিখে উড়িষ্যায় রথ যাত্রা এবং পুরীর বৌদ্ধ জগন্নাথ মন্দির নাম বদলিয়ে হিন্দুরাজনীতি দখল করেছে।
ধর্মান্ধ হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ধর্মচক্রকে বদলায়ে অশোকচক্র বানিয়েছে এবং সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারতকে হিন্দু ভারত করেছেন। বাঙালির আত্মপরিচয়ের খোঁজে ১৯২৮ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুলাহ (ইংরেজীতে তাঁর পি.এইচ. ডি. থিসিসি ছিল) ‘বুড্ডিষ্ট মিষ্টিক সংস (বা বৌদ্ধ চর্যাপদ)’ শীর্ষক বই লিখেছেন এবং বলেছেন, “আমরা বলিতে পারি যে বৌদ্ধগানই (চর্যাপদ) যেমন একদিকে গজলের, তেমনি অন্যদিকে বৈষ্ণব পদাবলীর মূল উৎস। বৌদ্ধগানের শূণ্যতা বৈষ্ণব পদাবলিতে রাধা হয়েছে!”
পষকিস্তানী রাজনীতির মাফিয়া চক্রে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বাংলা ভাষার শহীদদের হত্যাযজ্ঞ! ইতিহাসে জয় বাংলার শহীদ দিবস! বাংলাদেশে ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রæয়ারীর বীভৎস হত্যালীলার অন্তর্লোক এবং সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ব দলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র আবদুল মতিন ও গাজীউল হক উভয়ই ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার প্রস্তাব করলে চতুর্দিকে গগন বিদারী শ্লোগান ওঠে, ১৪৪ ধারা মানি না। পাকিস্তানী রাজনীতির বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলা ভাষা হত্যাযজ্ঞ কেন?
“বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠান গঠন করার সাথে সাথে বিরাট সাড়া পাওয়া গেল। এক মাসের মধ্যে আমি প্রায় সকল জেলায়ই কমিটি করতে সক্ষম হলাম। যদিও নইমউদ্দিন কনভেনর ছিল, কিন্তু সকল কিছুই প্রায় আমাকেই করতে হত। একদল সহকর্মী পেয়েছিলাম, যারা সত্যিকারের নিঃস্বার্থ কর্মী।’ [পৃষ্ঠা ৮৯]!”
গোয়েন্দা সূত্র ( সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রথম খণ্ড) থেকে আমরা জানতে পারি, “১১ মার্চের (১৯৫০) কয়েকদিন আগে বঙ্গবন্ধু খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলা সফরের এক ফাঁকে টুঙ্গিপাড়ায় স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও সাড় পাঁচ বয়সী কন্যা হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান। স্ত্রীকে বলেন- জিন্নাহ সাহেব, নাজিমুদ্দিন সাহেব আমাদের উর্দু শেখাতে চান। তোমার মেয়ে স্কুলে গেলে বাংলা পড়বে না, উর্দুতে পড়তে হবে। মানতে পারবা? উত্তরে বেগম মুজিব বলেন- আসুক না কেউ উর্দু পড়াতে, ঝাটা পেটা করব। বাংলা ভাষার মান রাখার জন্য যা কিছু কর, আপত্তি নাই। ১১ মার্চের হরতাল সফল করার জন্য পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শিরোনামে যে লিফলেট বিলি করেছে সেটা ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এই লিফলেট স্কুল-কলেজে-দোকানে বিলি হয়।”
সম্রাট অশোকের অশোকচক্র খচিত বর্তমান ভারতের জাতীয় পতাকায় বৌদ্ধধর্ম বিরাজমান। সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারতের বুদ্ধাব্দ (২৫৬২) সালকে বাদ দিয়ে প্রতিদিন সকালে আকাশবানীতে সংস্কৃত ভাষায় সংবাদ পরিবেশনের সময় হিন্দুরাজনীতির শকাব্দ (১৪৪৬) সাল ঘোষনা করা হয়! ঐতিহাসিকদের দৃষ্ঠিতে গৌতমবুদ্ধ বিশ্বশান্তির উৎস! মহাকালের বিবর্তনের ধারায় চর্যাপদের অপাপবিদ্ধ সিদ্ধপুরুষ কবি ভুসুকু ‘বাঙালি’ শব্দের আবিষ্কারক ছিলেন। পাল রাজত্বের চারশত বছরকে (৮ম শতাব্দী থেকে ১১ শতাব্দী) বাঙালি জাতির এনলাইটেনমেন্ট যুগ বলা হয় এবং সেই যুগে বুদ্ধাব্দই (গৌতমবুদ্ধের জয়ন্তি সাল) বঙ্গাব্দ ছিল। ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী (ভুসুকু আজ আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হলেন)”! ব্রাহ্মণ্য ধর্মের এবং সন্ত্রাসী তুর্কি ইসলাম (বখতিয়ার খিলজি) ধর্মের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধে রামাই পন্ডিতের রচিত “শূন্য পুরান” শীর্ষক বইয়ের উৎপত্তি (১৪ শতাব্দী)! যীশু খৃষ্ঠের নামে খৃষ্ঠাব্দ আছে এবং বাংলা ক্যালেন্ডারে গৌতমবুদ্ধের নামে বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন বুদ্ধাব্দ (২৫৬৬ ) চর্যাপদে আছে!
আজ ১৪২৯ বাংলা বর্ষ লেখা আমাদের ঐতিহাসিক রাজনীতির পরাজয়। আড়াই হাজার আগের বাংলা লিপিতে লেখার বয়স আজ ১৪১৯ বঙ্গাব্দ কেন? দু’শত বছর আগে বিশ্বে বাংলা ভাষার প্রথম বই “চর্যাপদের” একটা পৃষ্ঠা এবং পালি ভাষার একটা বই বাংলাদেশে কোথাও খুঁজে পাওয়ানি। প্রসঙ্গত: উলেখযোগ্য যে, (নারায়ন স্যানালের লেখা বই “অজন্তা অপরুপা”) ভারতের অজন্তা গুহাচিত্রে বঙ্গবীর বিজয় সিংহের ঐতিহাসিক শ্রীলংকা জয়ের ইতিকথা বিরাজমান অথচ চর্যাপদ বা বাংলা বর্ষ গণনায় আজ ১৪২৯ বর্ষ হবার কথা নয়।
২৫৬৬ বছর পূর্বে শ্রীলংকার মহাবংশ এবং দ্বীপবংশ শীর্ষক ঐতিহাসিক গ্রন্থদ্বয়ের মতে রাজা বিজয় সিংহ বাঙালি ছিলেন। আজ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ লেখা হয় হিজরি (১৪৩৭) সালকে বিকৃত করে। আমরা আরব দেশে গিয়ে আজ ১৪২৩ হিজরি সাল বলতে পারি না। এমন ভয়ঙ্কর মিথ্যা দিয়ে বঙ্গাব্দের ইতিহাস রচিত হ’লো অথচ আমাদের জাতীয় বিবেকের জবাবদিহিতার শক্তি মরে ধর্ম নামক বিভিন্নভয় ভীতির কবলে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে Bakhtiar Khilji’s Political Islam and হিন্দুরাজনীতির খাঁচা ভাঙতে অবশেষে নিরুপায় হয়ে বাংলার বৌদ্ধগণ (& Dalits) ইসলাম ধর্ম কবুল করেছিলেন। যার ফলে পশ্চিম বাংলায় আজ ও বুদ্ধ পূর্ণিমায় সরকারি ছুটি নেই। আরবীয় সভ্যতা ও ইসলাম ধর্ম বাংলাদেশে আসার পূর্বে আমাদের ছেলে বিজয় সিংহ শ্রীলংকা জয় করে ‘সিংহল রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করার ইতিহাস উক্ত দেশের ‘মহাবংশ ও দ্বীপবংশ’ নামক ইতিহাসদ্বয়ে সগৌরবে বিরাজমান। আমরা সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় শ্রীলঙ্কা বিজয়ী সর্বপ্রথম বঙ্গবীর বিজয় সিংহ সম্বন্ধে পড়েছি, যিনি ২৫৬০ বছর পূর্বে শ্রীলংকা জয় করে “সিংহল” নামে রাজ্য শাসন করতেন and today Bengali year is 1429.
বাংলা ভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রুপ এবং বাংলা লিপি বহু চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে এবং নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হলো অনাগত বংশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্দোলন প্রবর্তন সূত্রময় ‘শহীদ দিবস।’ প্রসঙ্গত: উল্লেখযোগ্য যে, বাংলা বর্ণমালার বয়স কত? প্রায় ২৫৬৪ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতমবুদ্ধ তাঁর বাল্যকালে যে বাংলা লিপি অধ্যায়ন করেছিলেন তা বাংলা বিশ্বকোষে (১৩শ ভাগ, পৃঃ ৬৫) সগৌরবে বিরাজমান।
বাংলা ব্যাকরণের সাথে পালি, থাই, বার্মা, কম্বোডিয়া, লাওস ও শ্রীলংকার ব্যাকরণের সাদৃশ্য বিদ্যমান। পাঁচটা দেশের ব্যাকরণের সাথে বাংলা ব্যাকরণের সাদৃশ্য পালি ভাষার কারণে। আমার আজও মনে পড়ে থাইল্যান্ড বা শ্যামদেশের রাজধানী ব্যাঙ্কক এয়ারপোর্টের নাম “সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট।” সুবর্ণভূমি নাম তো বাংলা শব্দ এবং সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (২৩০০ বছর আগে) দক্ষিণপূর্ব এশিয়া (সুবর্ণভূমি) বিশ্বমানবতায় (গৌতমবুদ্ধের মহাকরুনা ও মৈত্রী) আলোকিত হয়ে ওঠেছিল।
ব্রাহ্মণ নিয়ন্ত্রিত সমাজে মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচার করার মানসে বৌদ্ধধর্মের প্রয়োজন আজও বিরাজমান। প্রসঙ্গত: হিন্দু শাসক শশাঙ্ক, (630 A.D.) আদি শঙ্করাচার্য্য (830 A.D.) এবং কুমারিল ভট্ট ফতোয়া দিলেন, বৌদ্ধ মাত্রই বধ্য বা বৌদ্ধদেরকে হত্যা কর (পৃষ্ঠা ১২, দেশ, কলিকাতা, ৪ মে, ২০০১)।” ভারতে বৌদ্ধদের সমাধির উপরে হিন্দুস্থান প্রতিষ্ঠিত হল। ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ত্রিপিটকের পালি বর্ণমালাকে ব্রাহ্মী বর্ণমালা করেছিল! বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া কেড়ে নিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে বৌদ্ধদের ভারত ভূমি ও দেশ দখল করার নাম হিন্দু ধর্ম! অহিংসা মানুষের ধর্ম এবং জাতিভেদ প্রথায় হিংসার নাম হিন্দুধর্ম!
রাম মন্দির আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় ১৯৯২ সালে ৬ই ডিসেম্বর প্রায় দুই হাজার অপাপবিদ্ধ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল! এই প্রসঙ্গে ইহা ও বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যে, কলিকাতার দেশ (৪ মে, ২০০১, পৃষ্ঠা, ১৩) পত্রিকায় সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের মতে, “হিন্দু মন্দিরের মধ্যে আত্মগোপন করে থাকা বৌদ্ধ উপাসনা গৃহগুলি ও কি অত:পর একই যুক্তিতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বৌদ্ধদের হাতে? বস্তুত, ইতিহাসের সমস্ত অসংগতির ক্ষতিপূরণ বর্তমানে দাবী করার রীতি এইভাবে স্বীকৃত হতে থাকলে ‘বর্ণ হিন্দু’ আধিপত্যহীন হিন্দুধর্মে ধ্বজাধারীদেরও সুনিদ্রা সুনিশ্চিত থাকার কোনও কারন আদৌ নেই।“ একে বলা হয় হিন্দুধর্মের সহনশীলতার বকওয়াস।
ডঃ আম্বেদকর সহ ভারতীয় পার্লামেন্ট ভারতের সংবিধানে বৈদিক সভ্যতাজাত জাতিভেদ প্রথাকে” বেআইনি ঘোষণা করেন এবং ভারতের রাষ্ঠ্রীয় প্রতীকে বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের “অশোক চক্র” (বৌদ্ধধর্মের ধর্মচক্র) সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করার নাম বৈদিক হিন্দুধর্ম! হিন্দুরাজনীতি শিবলিঙ্গ দিয়ে বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া দখল করেছে এবং “সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে আল্লাহ উপনিষদ দিয়ে হিন্দুমার্কা বঙ্গাব্দ (১৪২৯) রচনা করেছে! হিন্দুরাজনীতির “আল্লাহ উপনিষদে” আমাদের জাতীয় বিবেকের জবাবদিহিতার শক্তি মরে ধর্ম নামক বিভিন্নভয় ভীতির কবলে।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি