সোনা কান্তি বড়ুয়া : পহেলা বৈশাখকে নিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভাবনায় হারানো বঙ্গাব্দের খোঁজ ও হিন্দু এবং মুসলমানদের ধর্মান্ধ রাজনীতি! ইতিহাসের জানালায় হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয়! প্রথম বাংলা গ্রন্থ চর্যাপদের বঙ্গাব্দ ২৫৬৭ (বুদ্ধাব্দ) এবং ভারতের জাতীয় পতাকায় বৌদ্ধধর্ম! সর্বপ্রথম ‘বাঙালি শব্দ’ চর্যাপদের মহাকবি ভুসুকু কর্তৃক আবি®কৃত হল। ভারতীয় উপমহাদেশ সাতচল্লিশে ধর্মের জন্য ভারত ও পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়ে হিন্দু এবং মুসলমানদের ধর্মান্ধ রাজনীতি তৈরি করলে ও গৌতম বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র উপদেশ প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বৌদ্ধ চিন্তাধারাপুষ্ঠ ধর্মচক্র (অশোক চক্র) ভারতের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় এমবেøম (EMBLEM) বা সরকারী স্মারক চিহ্ন রুপে “সত্য মেব জয়তে” বিরাজমান!
‘চর্যাপদ’ বাংলা ভাষার প্রথম এবং এবং ২৫৬৭ বুদ্ধাব্দই আজকের বঙ্গাব্দ। বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে বাংলা বছরের প্রথম মাস পাল্টে গিয়ে স্থান নেয় ‘বৈশাখ।’ এ মাসের পূর্ণিমায় (৬২৩ খৃষ্টপূর্ব) বুদ্ধের জন্ম। বৌদ্ধ প্রভাবিত বাঙ্গালীরা তাই বুদ্ধের জন্মমাসকে অগ্রাধিকার দিতে ‘বৈশাখ’ মাসকে বছরের প্রথম মাস রূপে স্বীকৃতি প্রদান করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলা ভাষার (চর্যাপদ) স্রষ্টারা হলেন বৌদ্ধ।’ (কোলকাতা হতে প্রকাশিত ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ নামক সর্বাধিক প্রচারিত খবরের কাগজে ১৫ই এপ্রিল ২০১৫ তারিখে উল্লিখিত হয়েছে)! বিউ পরবের শুভেচ্ছা ও নতুন বছরের সকলের মঙ্গল কামনা করি। প্রীতি ও প্রেমের পুন্য বাঁধনে মনুষ্যত্ব!
চর্যাপদের বঙ্গাব্দ ও ভারতের জাতীয় পতাকায় বৌদ্ধ ধর্মের বিশ্বমানবতা, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, “প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী, কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ। সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হয় বৃহৎ। সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ। …
নিশি অবসানপ্রায়, ওই পুরাতন
বর্ষ হয় গত!
আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন
করিলাম নত।
বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও,
ক্ষমা করো আজিকার মতো
পুরাতন বরষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।
আজি বাঁধিতেছি বসি সংকল্প নূতন
অন্তরে আমার,
সংসারে ফিরিয়া গিয়া হয়তো কখন
ভুলিব আবার।
তখন কঠিন ঘাতে এনো অশ্রু আঁখিপাতে
অধমের করিয়ো বিচার। (চিত্রা, নববর্ষে –
জোড়াসাঁকো, নববর্ষ, ১৩০১)!
ভারতীয় স্বাধীনতার সংবিধানের কাছে পরাজিত হিন্দু জাতিভেদ প্রথার ধর্মান্ধ রাজনীতি! সম্রাট অশোকের শিলালিপি পালি ভাষায় পালি (ব্রাহ্মী) অক্ষরে লেখা আছে এবং উক্ত পালি ( ব্রাহ্মী ) লিপি (বর্ণমালা) থেকে বাংলা, হিন্দী, সংস্কৃত, থাই বর্ণমালাসহ ৩৫টি ভাষায় বর্ণমালার উৎপত্তি। বাংলা ব্যাকরণের সাথে পালি, থাই, বার্মা, কম্বোডিয়া, লাওস ও শ্রীলংকার ব্যাকরণের সাদৃশ্য বিদ্যমান! গৌতম বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র উপদেশ প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বৌদ্ধ চিন্তাধারাপুষ্ঠ ধর্মচক্র (অশোক চক্র) ভারতের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় এমবেøম বা সরকারী স্মারক চিহ্ন রুপে “সত্য মেব জয়তে” বিরাজমান! ভারতীয় উপমহাদেশ সাতচল্লিশে ধর্মের জন্য ভারত ও পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মান্ধ রাজনীতি তৈরি করল কাঁটাতারের বেড়া আতঙ্ক! হিন্দু মুসলমান লেখকদের আক্রমণের শিকার বৌদ্ধধর্ম কেন? বাংলাদেশে চর্যাপদের বঙ্গাব্দ ও ভারতে ভারতের জাতীয় পতাকায় বৌদ্ধ ধর্ম!
প্রতিবেশী ভারতের রাষ্ঠ্র প্রধান চারজন মুসলমান হলে বাংলাদেশে একজন ও হিন্দু বা সংখ্যালঘু নেতা দেশের রাষ্ঠ্রপ্রধান হতে পারছেন না কেন? প্রসঙ্গত: প্রতিবছর নববর্ষ উপলক্ষে ১৪ বা ১৫ই এপ্রিল জুড়ে থাইল্যান্ড, লাওস, বার্মা, ভারত, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিংগাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় “পানি খেলা সহ বৈশাখ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ইংরেজিতে প্রথমে ঢাকা (Dacca) বানান ভুল ছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তা শুদ্ধ (Dhaka) করা হয়েছিল। সেই উগ্র মুসলমান রাজনীতি কেমন করে ভুলে গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করে আফগানিস্থান এবং পাকিস্তানের বৌদ্ধ ভ‚মি দখল করে নিয়েছে! মুসলমান রাজনীতির গভীর চক্রান্ত ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বখতিয়ার খিলজির মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ!
সম্রাট অশোকের বুদ্ধ বন্দনার অমর এ্যালবাম গৌতম বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র উপদেশ আজ ভারতের জাতীয় পতাকার কেন্দ্রস্থলে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় ২৪টি দÐযুক্ত (প্রতীত্যসমূৎপাদ বা সমগ্র কার্যকারণ প্রবাহ) ঘন নীল রঙের অশোকচক্র সংবলিত ভারতীয় গেরুয়া, সাদা ও ভারতীয় সবুজ এই তিন রঙের একটি আনুভ‚মিক আয়তাকার পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই আয়োজিত গণপরিষদের একটি অধিবেশনে পতাকার বর্তমান নকশাটি গৃহীত হয় এবং সেই বছর ১৫ অগস্ট এটি ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকার স্বীকৃতি লাভ করে। এরপরে এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রেও জাতীয় পতাকার স্বীকৃতি বজায় রাখে। ভারতে এটিকে “তেরঙা” নামে অভিহিত করা হয়। পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কৃত “স্বরাজ” পতাকার আদলে। বর্তমানে নয়া দিল্লিস্থ ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনে দরবার প্রাঙ্গনে এখন সুদীর্ঘ ধ্যানমগ্ন পূজনীয় গৌতমবুদ্ধ দিল্লির সিংহাসনে বিরাজমান, যিনি ভারতের জনগন ও শাসকবৃন্দকে আশির্বাদ করছেন। এর পাশে আছে সম্রাট অশোক হল, এখানে ভারতীয মন্ত্রীরা শপথ নেন এবং বিদেশী রাষ্ঠ্রদূতগণ মাননীয় রাষ্ঠ্রপতির নিকট তাঁদের পরিচয় পত্র পেশ করেন। সাধু সাধু সাধু।
নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন, বাংলা একাডেমীর অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসেবে “ভাষা চেতনা বাঙালির গর্বের বিষয়” শীর্ষক ভাষণে বলেন, “অনেকেই মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন করে যে ১৪০০ সাল হলো কী ভাবে। এখন ১৪১৭ তে কী ভাবে এলো, ১৪১৭ হচ্ছে মক্কা থেকে মদীনায় মোহাম্মদের (সা.) যাওয়ার দিন থেকে গণনার স্মারক। প্রথম দিকে লুনার এবং তারপরে সোলার ক্যালেন্ডার এই দুটি মিলিয়ে করা ‘(সাপ্তাহিক আজকালে পৃষ্ঠা ১৩, ফেব্র“য়ারী ৪, ২০১১ (সাল, টরন্টো)’!
সর্বপ্রথম বাংলা সাহিত্য গ্রন্থ চর্যাপদে ( ২৫৬৭ ) বাংলা সাল হলো কী ভাবে। এখন ১৪৩০ তে কী ভাবে এলো প্রথম বাংলা সাহিত্যে নববর্ষ প্রসঙ্গ এবং স¤প্রতি বাংলা নববর্ষ সম্বন্ধে অনেকেই মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন করে যে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাংলা সাহিত্য গ্রন্থ চর্যাপদে ২৫৬৭ বাংলা সাল হলো কী ভাবে। এখন ১৪৩০ তে কী ভাবে এলো? হিন্দুরাজনীতির ব্রাহ্মণ্যবাদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের ২৫৬৭ বাংলা সাল (বুদ্ধাব্দ) কে বাদ দিয়ে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে ‘আল্লাহ উপনিষদ’ রচনা করলো এবং ইসলামিক বঙ্গাব্দের জন্মদাতা হিজরি সালকে ১৪৪৪ বিকৃত করে ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বানিয়েছিল!
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়:
“বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি।
শুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়াইয়ে ঊর্ধমুখে নরনারী ।
না থাকে অন্ধকার, না থাকে মোহপাপ, না থাকে শোকপরিতাপ।
হৃদয় বিমল হোক, প্রাণ সবল হোক, বিঘ্ন দাও অপসারি।।
কেন এ হিংসাদ্বেষ, কেন এ ছদ্মবেশ, কেন এ মান-অভিমান।
বিতর’ বিতর’ প্রেম পাষাণহৃদয়ে, জয় জয় হোক তোমারি।”
বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু ‘মুসলমান নেস’ আপত্তিকর না হলেও সংখ্যালঘুর ‘বৌদ্ধনেস’ এবং হিন্দু নেস ঢের সমস্যাজনক। সংখ্যাগুরু মুসলমানদের ধর্মাচরণে, সংস্কৃতিতে কেউ বিপন্ন বোধ করে না। কিন্তু সংখ্যালঘু হিন্দু বৌদ্ধদের বেলা গল্প আলাদা। তখন তাঁদের ক্ষেত্রে সংবিধানস্বীকৃত আত্মপরিচয়ের বৌদ্ধদের রামুর বৌদ্ধ বিহার অধিকারকে ও দেশের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেওয়া চলে! কেবল পর্দাতেই নয়, বাস্তবেও নাগরিক থেকে রাষ্ট্র সকলের চোখে হিন্দু বৌদ্ধকে সহজেই ‘ভিলেন’ বানানো চলে। তখন ধর্মান্ধ সংখ্যাগুরুর এই রাষ্ট্র তাঁর এমন একটি ভাবমূর্তি নির্মাণ সম্পূর্ণ করে, যাতে তার আত্মপরিচিতির অন্যতম অভিজ্ঞানবৌদ্ধনেস- হিন্দুনেস ও খোদ হিন্দু বৌদ্ধ সমাজের মধ্যেই আতঙ্ক তৈরি করে।
বাংলাদেশে দিন বদলের যে মডেল বা প্যারাডাইমে মুসলমান রাজনীতির (B.C.S. Text Book in 2017) পরধর্মবিদ্বেষের ভাইরাস মানবাধিকার বিরোধী! বৌদ্ধধর্মে মনের অহং কে জয় করা মানে কনকোয়েষ্ট অব এবং হ্যাপীনেস ! বাংলা ভাষার প্রথম বই চর্যাপদে! বৌদ্ধগণ কি অমানবিক পলিটিক্যাল ইসলাম ধর্মের গোলাম? মুসলমান লেখকদের আক্রমণের শিকার বৌদ্ধধর্ম কেন? ধর্মের নামে মুসলমান সর্বস্ব রাজনীতি!
পাল রাজাদের সাথে ইন্দোনেশীয়া ও কম্বোডিয়ার রাজাদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। তেমনি বিজয় সেন সুদূর কর্ণাটক থেকে এসে বাংলা দখল করে নিল এবং বহিরাগত সেন রাজারা যে চারশ বছরের পাল সাম্রাজ্যের সমদর্শী সংস্কৃতি ও প্রচলিত বৌদ্ধ ধর্মের বিলোপ ঘটিয়েছে। বৌদ্ধ সমাজকে নিয়ে মুসলিম রাজনীতির ভয় কেন? মুসলমান রাজনীতির “বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞে প্রাচীন বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন এবং প্রাচীন বৌদ্ধ রাজ্য আফগানিস্থান (বামিয়ান বুদ্ধমূর্তি), পাকিস্থান (তক্ষশীলা), কাশ্মীর, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং ইব্দোনেশিয়া দখল করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছে। আজও বাংলাদেশে বৌদ্ধ হয়ে জন্ম গ্রহন করা কি অপরাধ? মুসলমান রাজনীতির আক্রমণের শিকার বৌদ্ধধর্ম কেন?
বাংলা ব্যাকরণের সাথে পালি, থাই, বার্মা, কম্বোডিয়া, লাওস ও শ্রীলংকার ব্যাকরণের সাদৃশ্য বিদ্যমান! এই সব কথা কি করে আমি আপনাদেরকে সবিস্তারে বর্ণনা করবো? বৈশাখ উদযাপন বা মঙ্গল শোভাযাত্রায় একটি শব্দযুগলের মুখোমুখি হই আমরা– স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ধর্মানুভ‚তিতে আঘাত’। যুগ যুগ ধরে কারও ধর্মীয় অনুভ‚তি আক্রান্ত হয়নি। ইদানীং কেন তবে আমাদের দেশী ধর্মীয় অনুভ‚তি এতটা স্পর্শকাতর হয়ে উঠল? কেন কথায় কথায় আমাদের ধর্মীয় ‘ধর্মানুভ‚তিতে আঘাত’।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এখনো দেশে আস্ফালন করে। এখনো সক্রিয় এই অপশক্তি দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে খুশি নয়। নানা সময় তারা দেশের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। তারা করোনার সময়, পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে এবং এখন তারা দেশের মানুষকে নিয়ে মশকরা শুরু করেছে। এই অপশক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।”
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, দেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা ও আগুনসন্ত্রাস চালায়; ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি ঘটানোর অপচেষ্টা করে এই দেশবিরোধী ও মানবতাবিরোধী ধর্মব্যবসায়ীরা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর, ইসলামের হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ছদ্মবেশে মাঠে নামে রাজাকারদের বংশধররা। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থির প্রচেষ্টা করছে এরা।
“ভারতবর্ষে লোভী ব্রাহ্মণদের হাত থেকে বঙ্গলিপি সহ বিভিন্নলিপি রক্ষা করতে বুদ্ধ সর্বপ্রথম চেষ্ঠা করেন এবং সফলও হন (দেশ, কোলকাতা, ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২)। ধর্মচক্র মূদ্রা বা ভ‚মিস্পর্শ মূদ্রায় বজ্রসত্ত¡ বা বুদ্ধকে বর্ণনা করার মতো কলম, অথবা এঁকে দেখাবার মতো তুলি আমার নেই। বিশ্ব সভ্যতা এবং বাংলা ভাষার জনক গৌতমবুদ্ধ বাংলাদেশে পুন্ড্রবর্ধনে (বগুড়ার মহাস্থানগড়) প্রাচীন বাংলাদেশের জনতাকে দিনের পর দিন দান শীল সমাধি এবং প্রজ্ঞা শিক্ষা দিয়ে বিশ্বশান্তি স্থাপন করেছিলেন।
আমার দেশ আমার পরম তীর্থভ‚মি! শুধু আমি আমার বিদ্যাবুদ্ধিতে এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের বুদ্ধমূর্তির চিত্রে এমন একটা কিছু আছে যার জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা যায়। বাব বার ফিরে ফিরে এঁকে দেখলে ও চোখ ক্লান্ত হয় না, পীড়িত হয় না। বাংলাদেশে একাধিক বুদ্ধমূর্তি আছে যা নাকি শুধু বিভিন্ন পদার্থ দিয়ে বানানো নয়, যেন তাঁর মধ্যে হাজার বছর ধরে বন্দী হয়ে আছে শিল্পীর অনুক্ত কথা, একটি অপ্রকাশিত ধ্যানের মন্ত্র। যা খোলা নয়, ঢাকা।
বাংলা নববর্ষ প্রসঙ্গ! এবং হিন্দু মুসলমান লেখকদের আক্রমণের শিকার বৌদ্ধধর্ম কেন? হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধগণ নু ভড়ৎপব মুসলমান হয়েছিলেন! এবং মুসলমানদের বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির বানানোর মত হিন্দুরাজনীতি ইসলামিক হিজরি সাল (১৪৪৪) কে ভেঙে চন্দ্র বা সূর্য ক্যালেন্ডারের নামে হিন্দু মার্কা বঙ্গাব্দ ১৪৩০) রচনা করেছেন। প্রথমে ইংরেজিতে ঢাকা (Dacca) বানান ভুল ছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তা শুদ্ধ (Dhaka) করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের বিক্রমপূরের বজ্রযোগীনি (কালী বা তারা দেবী বোধিসত্ত¡) গ্রামের অতীশ দীপংকর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের প্রতিনিধি এবং বঙ্গরতœ অতীশ দীপংকরের বিশ্ববিজয়ী স্মৃতি বাংলাদেশের সর্বকালের আলোকিত সারস্বত সমাজ প্রতিষ্ঠার উৎস! ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কারণে প্রায়ই এ দেশের এক শ্রেণির মানুষ বলে থাকে, তাদের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত লেগেছে বলে তারা সংক্ষুব্ধ। এই ধর্মানুভ‚তি নিয়ে দেশে কম রাজনীতি চলে না। প্রগতিশীল লেখক-বøগার-প্রকাশক-সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের মতো বর্বর ঘটনাও ঘটেছে এই ‘ধর্মানুভ‚তি’ নিয়ে। আজকাল সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করতে এই শব্দযুগলের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। কখনও পহেলা বৈশাখ উদযাপন বা মঙ্গল শোভাযাত্রা, কখনও বাউল গানের আসর, আবার কখনও ধর্মেরই নানা প্রথা নিয়ে এই অনুভ‚তির রাজনীতি চলছে। অথচ বাংলায় বিভিন্ন ধর্মের বিকাশের ইতিহাস পড়লে দেখা যায়, শত শত বছরের এই ঐতিহ্য একই ধর্ম পালনকারীকে কখনও বিব্রত করেনি।
হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্ঠান সহ সকল মানব সন্তান মিলে আমাদের মানবজাতি। বিদেশী মুসলমান সভ্যতার হাজার বছর আগে বাঙালির গৌরব সন্তান অতীশ দীপঙ্কর বিশ্বমানবতা, মানবাধিকার ও অহিংসার মন্ত্র দিয়ে তিব্বত ও চীন সহ পৃথিবী জয় করেছিলেন। অতীশ দীপঙ্করের দেশ বিক্রমপূরের বজ্রযোগিনী অন্ধকারে ডুবে গেল কেন? ‘গত কয়েক বছর যাবৎ সমাজে বিচ্ছিন্নভাবে ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে। যা সামাজিকভাবে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কতিপয় সদস্য যখন সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে শিক্ষক, শিল্পী ও সাধারণ মানুষকে নানাভাবে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত করছে তখন জনগণের মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে, সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের মূল চার নীতি এবং মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করতে সচেষ্ট নয়। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিকে বিধর্মীদের সংস্কৃতি বলে মিথ্যাচার করে সরকারের ও রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থান নেওয়া স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদরের উত্তরসূরিরা আজ রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিপর্যন্ত করে ফেলার প্রয়াস নিয়েছে।’
সা¤প্রদায়িকতার মূলোৎপাটনের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দায়িত্বে থাকাকালে প্রতিক্রিয়াশীলদের এ ধরনের ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে, আমাদের নির্লিপ্ততায় ধর্মান্ধদের রাষ্ট্রক্ষমতার অভ্যন্তরে শিকড় বিস্তার। এখনই সময় এ প্রবণতা রোধ এবং এর শিকড় উৎপাটনের। আর এই দায?িত্ব মূলত সরকারের। এক্ষেত্রে দ্বিধা ও বিলম্ব মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।’
রাজনীতি ও ধর্ম মানবাধিকারকে ধ্বংস করা অমানবিক অপরাধ বলে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভাষায়, “গোত্র দেবতা গর্তে পুরিয়া, / এশিয়া মিলাল শাক্যমুনি (গৌতমবুদ্ধ)।
কোন আইনে লেখা আছে যে, বাংলাদেশে একজন নারী বাংলা নব বর্ষবরণে কপালে টিপ পরতে পারবেন না? আমাদের জাতীয় বিবেকের জবাবদিহিতার শক্তি মরে ধর্ম নামক বিভিন্নভয় ভীতির কবলে এবং বাংলাদেশ আরব দেশ নয়! শনিবার (2 April 2022) রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তিনি অভিযোগ করেন, টিপ পরায় পুলিশের পোশাক পরা একজন তাকে হেনস্তা করেছেন। রাষ্ট্রকাঠামোর অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে। লতার অভিযোগ, তিনি প্রতিবাদ করায় পুলিশের ওই সদস্য মোটরসাইকেল চালিয়ে তার গায়ের ওপর উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সরে গিয়ে রক্ষা পেলেও আহত হন তিনি। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি পাশেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে বিস্তারিত জানান। বাংলা নববর্ষ বরণে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ!
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান,
মিলিয়া বাউলগান আর মুর্শিদী গাইতাম।
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম,
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।“
সেই উগ্র মুসলমান রাজনীতি কেমন করে ভুলে গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করে আফগানিস্থান Bangladesh, India, Indonesia, Malayasia এবং পাকিস্তানের বৌদ্ধ ভ‚মি দখল করে নিয়েছে! মুসলমান রাজনীতির গভীর চক্রান্ত ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বখতিয়ার খিলজির মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ! ভারতীয় উপমহাদেশ সাতচল্লিশে ধর্মের জন্য ভারত ও পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের কাঁটাতারের বেড়া আতঙ্ক তৈরি করল ধর্মান্ধ রাজনীতি! হেফাজতে ইসলামীর পরামর্শে পাঠ্যপুস্তকে প্রগতিশীল লেখক-সাহিত্যিকদের লেখা বাদ দিয়ে সা¤প্রদায়িক ধ্যান-ধারণা যুক্ত করা হয়েছে। শাসকদলের বয়ানেই আজ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচিত হচ্ছে। সেখানে একক নেতৃত্ব আছে কিন্তু জনগণ নেই। ভিন্ন মতামত আসলে তাকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হচ্ছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্যকে পুরোপুরি বাজারি পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ বরণে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ!
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান,
মিলিয়া বাউলগান আর মুর্শিদী গাইতাম।
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম,
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।”
বৌদ্ধ প্রধান দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক মহানগরীর বিখ্যাত রাজকীয় এমারেল্ড (মরকত মনি) বুদ্ধ মন্দিরের চারিদিক জুড়ে আছে দশরথ জাতকে রামকীর্তির অভিনব চিত্রশালা। সুদূর কর্ণাটক থেকে এসে বাংলা দখল করে নিল এবং বহিরাগত সেন রাজারা যে চারশ বছরের পাল সাম্রাজ্যের সমদর্শী সংস্কৃতি ও প্রচলিত বৌদ্ধধর্মের বিলোপ ঘটিয়েছে। বাঙালীর মুখ থেকে বাংলা ভাষা কেড়ে নিয়ে উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতি তন্ত্র চাপিয়ে দিল। বলতে গেলে সমাজ জীবনের ও ব্যক্তি জীবনের সর্বত্র তখন ব্রাহ্মণ আধিপত্য। নিপীড়িত মানবাত্মার জয়গানে মুখরিত এই চর্যাগুলো।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!