অনলাইন ডেস্ক : টানা পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্বিচার এই আগ্রাসনে ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দাবি, গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ‘সন্ত্রাসীর’ সংখ্যা ১৩ হাজার। সোমবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কমপক্ষে ১৩ হাজার ‘সন্ত্রাসী’ রয়েছে বলে রোববার দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। আর এটি এমন একটি পদক্ষেপ যাকে ‘রেড লাইন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক এবং হামাস যোদ্ধাদের সংখ্যা আলাদা করে উল্লেখ করেনি। তবে তারা বলেছে, নিহতদের মধ্যে ৭২ শতাংশই নারী ও শিশু।
এই পরিস্থিতিতে রোববার নেতানিয়াহু জার্মান মিডিয়া কোম্পানি অ্যাক্সেল স্প্রিংগারের সঙ্গে কথা বলেন। এই সংস্থাটি পলিটিকো, জার্মানির বিল্ড সংবাদপত্র এবং সম্প্রচারকারী ওয়েল্ট টিভির মালিক। অ্যাক্সেল স্প্রিংগারকে নেতানিয়াহু বলেন, দক্ষিণ গাজার রাফাহতে ইসরায়েলের আক্রমণ সম্প্রসারিত করাই হচ্ছে হামাসকে পরাজিত করার মূল চাবিকাঠি।
নেতানিয়াহুকে উদ্ধৃত করে বিল্ড সংবাদপত্র বলেছে, ‘আমরা বিজয়ের খুব কাছাকাছি … একবার আমরা রাফাহতে অবশিষ্ট সন্ত্রাসী ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করলে, এটি কেবল কয়েক সপ্তাহের ব্যাপার।’
অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার সহযোগীরা নেতানিয়াহুকে জোরালো ভাষায় রাফাহতে বড় ধরনের আক্রমণ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। গাজার ২৩ লাখ মানুষের অর্ধেকের বেশি বর্তমানে রাফাহ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।
এর আগে গাজায় যুদ্ধ ঘিরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গি ‘ইসরায়েলকে সহায়তা করার চেয়ে ক্ষতিই বেশি’ করছে বলে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এমএসএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘ইসরায়েলকে রক্ষার এবং হামাসের লাগাম টানারও অধিকার আছে নেতানিয়াহুর। কিন্তু সেখানে নেওয়া পদক্ষেপের পরিণতিতে নিষ্পাপ মানুষের প্রাণহানির ঘটনার দিকে তাকে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে।’
মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার মতে, তিনি (নেতানিয়াহু) ইসরায়েলকে সহায়তা করার চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছেন।’
রাফাহ আগ্রাসনের বিষয়ে ৮১ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন বলেন, ‘এটা একেবারে চূড়ান্ত সীমা। আমি কখনোই ইসরায়েলকে ছেড়ে যাব না। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। এখানে কোনও চূড়ান্ত সীমা নেই; যেখানে আমি সব অস্ত্রের সরবরাহ বন্ধ করতে চাই। কারণ তাদের সুরক্ষার জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম নেই।’
তবে নিজের এমন মন্তব্যের পাল্টাও কথা বলেছেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, আসলে এখানে রেড লাইন আছে… কারণ আপনি আরও ৩০ হাজার ফিলিস্তিনিকে মেরে ফেলতে পারেন না।
মূলত হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতপার্থক্য ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে। গত মাসেও তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধের নীতি নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন।
গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করায় বাইডেন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ইসরায়েলে সামরিক অভিযান চালানোর হুমকির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া পলিটিকো রোববার নেতানিয়াহুকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহতে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেছেন: ‘আপনি জানেন, আমার সামনে একটি রেড লাইন আছে। আপনি জানেন, সেই রেড লাইন কী। আর তা হচ্ছে- ৭ অক্টোবর আবারও ঘটবে না। আর কখনও তেমন কিছু হবে না।’
হামাস ব্যাটালিয়নের তিন-চতুর্থাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এখন আক্রমণ বন্ধ করা হলে তারা পুনরায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে বলেও নেতানিয়াহুকে উদ্ধৃত করে বলেছে বিল্ড।