Home আন্তর্জাতিক খাবার-পানি-বিদ্যুৎ ছাড়া বেঁচেও গাজাবাসী বলছে ‘ধন্যবাদ আল্লাহ’

খাবার-পানি-বিদ্যুৎ ছাড়া বেঁচেও গাজাবাসী বলছে ‘ধন্যবাদ আল্লাহ’

অনলাইন ডেস্ক : গাজার দক্ষিণের খান ইউনুস এলাকায় একটি হেলে পড়া ছাদের নিচে চুলা জ্বালিয়ে কিছু সবজি রান্না করছেন হানান আল-কারা নামের ফিলিস্তিনি এক নারী। রসদ হিসেবে তার কাছে আছে কুড়িয়ে আনা কয়েকটি কাঠ, কিছু ফুলকপি, ক্যাপসিকাম, বেগুন এবং আলু। সেগুলোই কোনোমতে আগুনে জ্বালিয়ে খাবার উপযুক্ত করছেন তিনি। হানান বলছিলেন, শত শঙ্কটের মধ্যে কোনোমতে সন্তানদের পেট বাঁচানোর ব্যবস্থা করছেন তিনি।

হিজাবী নারী হানান আল-কারা বলেন, আমি একজন নারী। আমাদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এখানে একটি ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে আমাদের জন্য গ্যাস বা প্রয়োজনীয় কিছুই নেই। পরিস্থিতি এখন খুবই কঠিন। কোনও সহায়তা আমাদের কাছে পৌঁছেনি। আমি একটু আগুনের ব্যবস্থা করে বাচ্চাদের জন্য খাবার তৈরি করছি। আমাদের কাছে কিছুই নেই, পরিস্থিতি খুব কঠিন এবং খারাপ হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের সহায়তা করুন

খান ইউনুসের অনেকটা পরিত্যক্ত স্কুল ও মসজিদগুলোতো এখন বসবাস করছেন গাজায় উত্তর প্রান্ত থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসা হাজার হাজার মানুষ। তাদের জন্য এখানেও নেই তেমন কোনো সরঞ্জাম। পৌঁছেনি কোনো সহায়তাও। নেই গ্যাস -বিদ্যুৎ এবং গাড়ির জ্বালানি। জ্বালানি সংকটে গাড়ি বন্ধ থাকায় আনা যাচ্ছে না খাদ্য সামগ্রীও। জ্বালানি ও কাঁচামাল সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে বেকারি গুলোও। নেই রান্নার জন্য সংগ্রহ করার মতো কোনো খাদ্যপণ্যও। ফলে চরম খাদ্য সংকটও ঘিরে ধরেছে এই বেসামরিক মানুষদের।

মরিয়ম সাহলৌল নামে আরেক নারী বলেন, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, মেঝেতে ঘুমাচ্ছি। আমাদের শিশুরা খুব কষ্ট পাচ্ছে। এর চেয়ে আর কি বলবো? আমরা ক্লান্ত। আমরা বলি আল্লাহ আমাদের ত্রাণকর্তা এবং আমাদের বিষয়ের নিষ্পত্তিকারী।

মাহমুদ আবু হাতব নামে এক যুবক বলেন, এখানে জীবনের সব পথ থেমে গেছে। নেট নেই, যোগাযোগ নেই, মোবাইল নেই, মেসেজ নেই, আমরা আমাদের মোবাইল চার্জ করতে পারি না, বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জল নেই, টাকা নেই, যুদ্ধের সাথে এই সব বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই ২০২৩ সালে আমরা সবচেয়ে খারাপ জীবন যাপন করছি। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন, আল্লাকে ধন্যবাদ কারণ তিনি আমাদের বিজয় দেবেন।

শুধু যে খাদ্য বা জ্বালানির সংকট তা নয়। খান ইউনুস শহরে ভেঙে পড়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও। বোমার আঘাতে ভেঙে পড়া স্থাপনার ইট-সুরকি পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে নগরীর ড্রেন ও ম্যানহোলগুলো। ফলে রাস্তার ওপর দিয়েই বয়ে যাচ্ছে পয়োবর্জ। এতে ছড়াচ্ছে ডায়েরিয়া ও শ্বাস প্রশ্বাসের নানান রোগ।

মরিয়ম সাহলৌল বলেন, রাস্তায় আবর্জনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়েছে। এর চেয়ে আমি আপনাকে আর কী বলতে পারি – আপনি দেখতে পারেন। জ্বালানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, পানিও নেই।

ইজ্জ আল-দীন আল-জালামা নামে মধ্যবয়সী এক পুরুষ বলেন, এখানে সমস্ত জীবন থেমে গেছে – নর্দমাগুলি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, কোনও জ্বালানী নেই, সর্বত্র আবর্জনা উপচে পড়ছে, বেকারিগুলি থেমে গেছে, সমস্ত জীবন থেমে গেছে। আপনি বলতে পারেন আমাদের জীবনের আর মাত্র ১৫ শতাংশ বাকি আছে।

বর্তমানে গাজার বেসামরিক নাগরিকরা যেভাবে বাস করছে এতে বোমা ছাড়াই তারা মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়তে পারে জানিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, এখানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে নানান রোগ ইতোমধ্যে ছড়ানো শুরু করেছে।

খান ইউনুস শহরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আদম আল-কাহলোত বলেন, আগে এটি একটি পরিষ্কার জায়গা ছিল। এখন কোথাও পরিষ্কার নেই। আপনি যদি এই এলাকায় যান তবে আপনি একটি জঘন্য দেখতে পাবেন। গন্ধে টেকা মুশকিল। আমরা যদি এভাবে থাকি, এটি কেবল রোগই আনবে না, এটি মানুষকে হত্যা করবে। কেননা আবর্জনার কারণে রোগ বাড়ে। দুই দিন আগেই এখানে একজন মহিলা মারা গেছেন। আমরা এখানে বাস্তুচ্যুত হয়েছি, এবং এখন আমরা এখানে আবর্জনার কারণে মারা যাচ্ছি।

জাতিসংঘ খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপি বলছে, খাদ্য সরবরাহের সংকটে গাজার বেসামরিক নাগরিকরা অনাহারে প্রাণ হারানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অপরদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই অঞ্চলে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং ডায়রিয়াসহ নানান সংক্রমক রোগ বিস্তারের আশঙ্কা করছে তারা। যদিও মার্কিন অনুরোধের প্রেক্ষিতে গাজায় প্রতিদিন সহায়তা পৌঁছানোর জন্য মাত্র দুটি জ্বালানির ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল প্রশাসন।

 

Exit mobile version