অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা এলিফ্যান্ট রোড-নিউ মার্কেট। পুরো এলাকাজুড়ে ছোট-বড় অন্তত ১০-১৫টি শপিংমল-মার্কেট রয়েছে। রয়েছে বিপণিবিতান। শপিং করতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় এখানকার স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু বর্তমানে সে দৃশ্য একেবারেই অনুপস্থিত। ঈদুল আজহার দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও কোনো আমেজ নেই বিপণিবিতানগুলোতে। মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় নেই, খোশগল্পে কাটছে বিক্রেতাদের সময়। চোখেমুখে হতাশার ছাপ কর্মচারীদের।

কারণ বেতন পাননি ৩-৪ মাসের। এমন চিত্র শুধু নিউমার্কেট বা এলিফ্যান্ট রোডে নয়, রাজধানীর সব শপিংমল-মার্কেটের চিত্র এখন এমনই। সরজমিন বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ বন্ধের পর দোকান খুললেও বিকিকিনি নেই। তাদের ভাষ্যমতে, আগে থেকেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দাবস্থা ছিল। এরপর লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল মাকের্টগুলো। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। ঈদুল ফিতরের পর দোকাগুলো খোলা হলেও নেই আগের মতো বেচাকেনা। গত ঈদুল ফিতরের বিশাল ক্ষতির বোঝা মাথায় নিয়েও আসন্ন ঈদুল আজহায় কিছুটা আশাবাদী ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঈদের বিকিকিনি এখনো শুরু না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় তারা। নতুন পণ্যের কালেকশন বাড়ালেও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না। বিক্রি না হলেও দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ সব খরচই দিতে হচ্ছে। তবে বেতন পাচ্ছেন না কর্মচারীরা। এ অবস্থায় অনেক কর্মচারী স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। অধিকাংশ দোকানে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। পুনরায় ব্যবসায় ফিরলেও ক্ষতি কাটিয়ে ওঠাতো দূরের কথা, বরং ব্যবসায় টিকে থাকাই যেন দায় হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আসন্ন ঈদেও যদি আশানুরূপ ব্যবসা না করতে পারেন, তবে আবারও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।

এলিফ্যান্ট রোডের সুবাস্তু শপিং, ইস্টার্ন মল্লিকা, ট্রপিক্যাল সেন্টার, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা এবং বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের কয়েকটি দোকানের বিক্রেতারা বলেন, ঈদুল ফিতরে ব্যবসা পুরোটাই লোকসানের ওপর ছিল। ঈদের পর দোকান খুললেও বিক্রি নেই। এ অবস্থায় আমাদের মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এরপরও ঈদুল আযহা উপলক্ষে আমাদের একটা আশা ছিল যে, কিছুটা হলেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্রেতাদের কোনো সাড়া নেই। ২০% থেকে ৩০% ছাড় দিয়েও কাস্টমার মিলছে না।

ইস্টার্ন প্লাজার দেশ ফ্যাশনের বিক্রেতা ফাহিম বলেন, সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মাত্র ৪-৫ জন কাস্টমার এসেছেন। এরমধ্যে মাত্র একটি প্রোডাক্ট সেল করতে পেরেছি। দুই-একজন যারাই আসেন দেখে চলে যান। আগে দোকানে নিত্যনতুন কাস্টমার আসতেন। এখন ছোটখাটো কিছু কাস্টমার আসেন। তাও একেবারে জরুরি না হলে আসেন না। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে পথে বসতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের কপালেও বড় দুঃখ আছে। এখন পর্যন্ত আমাদের ২-৩ মাসের বেতন বাকি রয়েছে। আগে যেখানে ৭-৮ জন কর্মচারী কাজ করতো সেখানে এখন মাত্র ৩ জন। তবু মালিক বেতন দিতে পারছেন না। তাহলে আপনারাই ভাবুন ব্যবসার কী অবস্থা!

বসুন্ধারা শপিংমল ও ইস্টার্ন প্লাজার আরো কয়েকটি দোকানের বিক্রেতা জানান, আগের তুলনায় বিক্রি কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। গতবছর এমন সময় দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। এবার তার উল্টো। মানুষ সবাই এখন অভাবের মধ্যে আছে। এ অবস্থায় তারা কেনাকাটা করতে আসছেন না। কোনোমতে খেয়েপরে বেঁচে আছে। আগেতো সখ করেও ঘুরতে অনেকে মার্কেটে আসতো। এখন খুব প্রয়োজন না হলে কেউ আসছেন না।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, গত ঈদুল ফিতরে আমাদের ২০-২২ হাজার কোটি টাকা নাই হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদুল আজহায় ব্যবসায়ীরা কিছুটা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু ঈদের বিকিকিনি এখনো শুরু হয়নি। ক্রেতারা দোকানে আসছেন না। এমন হলে অবস্থা আগের মতোই হবে। আবারো আমাদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। সেজন্য আমরা ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার আবেদন করেছি। যাতে কিছুটা বিক্রি বাড়ানো যায়। কিন্তু যে অবস্থা দেখছি তাতে এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। কারণ এখন পর্যন্ত আমাদের আর্থিক কোনো সহযোগিতা দেয়া হয়নি। প্রণোদনার আওতায় যে ঋণ সেটাও ব্যাংকগুলো দিচ্ছে না। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে সত্যিই ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে।