অনলাইন ডেস্ক : প্রায় ২০ বছর যাবত মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত মানুষের সেবা করে আসছেন অটোয়া হাসপাতালের থেরাপিস্ট ক্রিস্টিনা ভার্নন। এই কাজটি তার খুবই পছন্দের। তিনি বলেন, আমি সব সময় মানুষের সেবা করতে চেয়েছি। তাই বলতে পারেন আমি সেই ভাগ্যবানদের একজন যারা নিজেরা যা করতে পছন্দ করে সারা জীবন তাই করতে পেরেছে। কিন্তু রোগাক্রান্ত মানুষের সেবা করতে করতে ভার্নন নিজেই কখন মারণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন তা টেরই পাননি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তার আগ্নাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। কিন্তু এই ক্যান্সার দমাতে পারেনি তাকে। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোড়ে একদিকে নিজের চিকিৎসা নিয়েছেন অন্যদিকে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

চিকিৎসকেরা বলছেন ৫৪ বছর বয়সী ভার্ননের ক্যান্সার এখন ৪র্থ ধাপে পৌঁছে গেছে, যার মানে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া এর কোন প্রতিকার নেই। ভার্নন বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি জানি এটা খারাপ একটা রোগ। কিন্তু আমি ছিক আছি। আমি আমার কাজের মধ্যে শান্তিতেই আছি।’ চাপমুক্ত থাকার জন্য তিনি তার রোগীদের সাথে নানান রকম রসিকতা করেন।
ভার্ননের চিকিৎসা ডা: ক্রিস্টিন ওয়েটার বলেন, আবেগ, আনন্দ আর প্রাণশক্তিতে ভরপুর ভার্নন হয়তো আর কয়েক মাস বাঁচবেন। কিন্তু এতে তিনি ভেঙে পড়েননি। এমনকি কঠিন দিনেও তিনি কখনো ওষুধ, কখনো থেরাপি অথবা কখনো আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে অসুস্থ্যতাকে জয় করে চলেছেন। ভার্নন এখন ব্যথা কমাতে একটি হাইড্রোমর ফোন পাম্প ব্যবহার করেন। শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পরপরই তিনি হাসপাতালের বাগানে বন্ধুদের নিয়ে একটি টিউলিপের চারা রোপন করেছিলেন। গত বসন্তে সেটিতে ফুল ফুটেছে। ভার্নন তা দেখিয়ে বন্ধুদের বলেন, ‘এটি আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, আমার যাত্রা শেষ হয়নি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি মানুষের সেবা করতে চাই।

গায়ক ও গীতিকার ক্রিস ডি বার্গের ভক্ত ও অনুরাগী ভার্নন গত এপ্রিলে দারুন আনন্দিত হয়েছিল এই খবর শুনে যে তার প্রিয় শিল্পী অটোয়াতে আসছেন। ২০ এপ্রিল অটোয়াতে একটি কনসার্ট হওয়ারও কথা ছিল। হুইল চেয়ারে বসে হলেও সেই কনসার্টে যোগ দেয়ার ইচ্ছা ছিল ভার্ননের। তার স্বামী টিকেকও জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে এটি আগামী বসন্ত পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ডা: ক্রিস্টিন বলেন, ভার্নন তার জীবনের শেষ কয়েক মাস অতিক্রম করছেন। ওই কনসার্টটি তার জন্য খুবই দরকার ছিল। সত্যি কথা বলতে কি ভার্ননের এখন ব্যথার ওষুধের চেয়ে বেশি প্রয়োজন ক্রিস ডি বার্গের সঙ্গীত। ওই কনসার্ট তার জীবনে হয়তো টিউলিপ ফুলের মতো কাজ করতো, যা এখন নাগালের বাইরে বলেই মনে হচ্ছে। কেননা ২০২৩ সালের বসন্ত পর্যন্ত ভার্নন বেঁচে থাকবে কি-না, তা আমরা জানি না।

এদিকে বার্ননের বিষয়টি জানতে পেরে গায়ক ক্রিস ডি বার্গ তাকে একটি ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছেন। এতে তিনি কনসার্ট বাতিল হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। চার মিনিটের বার্তা শেষে ভিডিওতে ‘লেডি ইন রেড’ ও ‘প্যাট্রিসিয়া দ্য ট্রিপার’ গান দু’টি যোগ করা হয়েছে। ভার্নন এগুলো শুনে যারপর নাই খুশি হয়েছেন। ভার্নন অসংখ্যবার ভিডিও বার্তাটি দেখেছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি তার জন্য ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকরী। ভার্নন তার ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে বলেন, ‘আমি জানি আমার জীবনের শেষের কাছাকাছি চলে এসেছি। কিন্তু এতে আমার দুঃখ নেই। আমি একটা সুন্দর জীবন কাটিয়েছি, আমার জন্য মানুষের ভালবাসা আছে। আমি এখন হাসতে হাসতে ঈশ্বরের কাছে যেতে চাই। সূত্র : সিবিসি