অনলাইন ডেস্ক : ইতিহাসে এই প্রথমবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী কমলা লড়ছেন আমেরিকায় ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় মিশ্রণের সিনেটর কমলা হ্যারিসকে রানিং মেট হিসেবে ঘোষণা করেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যদি বাইডেন জেতেন, আমেরিকাতে তাহলে প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত হবেন কমলা।
যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে কখনো দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের কোনোটি থেকে অশ্বেতাঙ্গ কোনো নারীকে প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে গ্রহণ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো নারী জয়ী হননি।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর হোয়াইট হাউসে যাওয়ার লড়াইয়ে কমলার এটি দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। এর আগে তিনি নিজে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ না হলেও ডেমোক্রেটিক টিকিটে আরেকবার হোয়াইট হাউসের স্বপ্ন দেখতে পারছেন তিনি।
জো বাইডেনকে টুইট করে কমলা সম্পর্কে বলেছেন, ‘তিনি একজন সাহসী যোদ্ধা এবং দেশের অন্যতম সেরা জনগণের সেবক। কমলা হ্যারিসকে রানিং মেট হিসেবে বেছে নিয়েছি। তিনি আমেরিকার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন, আমার আশা। সারা জীবন ধরে তিনি সবার জন্য লড়াই করে আসছেন। এবার হ্যারিসকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সবাই মিলে ট্রাম্পকে হারাতে চলেছি আগামী দিনে।’
৫৫ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম একটি জনপ্রিয় মুখ হিসেবে পরিচিত কমলা। তিনি এমন সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়তে যাচ্ছেন, যখন করোনার জেরে আমেরিকার অর্থনীতি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। বাড়ছে বেকার সংখ্যা।
হিন্দুস্তান টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, কমলার জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায়। তাঁর মা শ্যামলা গোপালন ছিলেন ও ক্যানসার গবেষক। ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। কমলার বাবা ডোনাল্ড হ্যারিসের জন্ম জ্যামাইকায়। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। খুব কম বয়সেই কমলার মা–বাবার বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। তিনি হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৩ সালে হ্যারিস প্রথমবার নির্বাচনে জেতেন এবং সেন্ট ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নির্বাচিত হন। তিনি ২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হন।
বিবিসি জনায়, সান ফ্রান্সিস্কোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ও ক্যালিফর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে থাকাকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান সমালোচক ছিলেন কমলা। গত বছরে একটা সময় কমলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার লড়াইয়েও ছিলেন। কিন্তু ডেমোক্রেটদের পার্টির অন্দরের লড়াইয়ে জো বাইডেনের কাছে হেরে যান তিনি। দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের সময় একাধিক বিতর্কে বাইডেনকে তীব্র সমালোচনাও করেছেন কমলা। কিন্তু সেই বাইডেনের সঙ্গেই তিনি এবার নির্বাচনে যাচ্ছেন।
হ্যারিস বরাবরই নিজের কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয় দিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। তিনি নিজেকে ‘আমেরিকান’ বলে সব সময় বর্ণনা করেন। ২০১৯ সালে ওয়াশিংটন পোস্টকে কমলা বলেন, ‘আমি যা আমি তাই। আমি এর সঙ্গেই ভালো মানায়। আপনাকে এটা খুঁজে দেখতে হলেও আমি এতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি।’
দুই বছরের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করার সময় হ্যারিস ডেমোক্রেটিক পার্টির উঠতি তারকা হিসেবে সম্মান অর্জন করেন। ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়র ইউএস সিনেটর নির্বাচনে বাজিমাত করেন। বিতর্কে ঝানু কমলা হ্যারিসকে ডেমোক্রেটিক পার্টির উদারনৈতিক পক্ষের সঙ্গে বনেদিদের মধ্যে একটা যোগসূত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক নাগরিক আন্দোলনের সময়ে কমলা হ্যারিসকে অগ্রভাগে দেখা গেছে। এসব বিবেচনায় কমলা হ্যারিসই জো বাইডেনের রানিং মেট হিসেবে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন।
এক টুইটে কমলা হ্যারিসকে নিজের রানিং মেট হিসেবে বাছাই করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছেন বলে জানান জো বাইডেন।
কমলা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমেরিকার মানুষদের একত্র করতে পারবেন জো। কারণ তিনি সারা জীবন আমাদের জন্য লড়াই করেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি এমন এক আমেরিকা গড়ে তুলবেন, যা আমাদের আদর্শ মেনে চলবে। দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আমি সম্মানিত এবং তাঁকে কমান্ডার ইন চিফ বানানোর জন্য যা করার প্রয়োজন, তা করব।’
কমলাকে বেছে নেওয়া সিদ্ধান্তে ভারতীয়রা উচ্ছ্বসিত হলেও খোঁচা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার লক্ষ্যে লড়াইয়ে থাকা ট্রাম্প মন্তব্য করেন, বাইডেনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়া সত্ত্বেও কমলাকে নিজের ডেপুটি হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তে তিনি ‘অবাক’ হয়েছেন।
৭ অক্টোবর উটাহর সল্ট লেক সিটিতে বিতর্কে মাইক পেন্সের মুখোমুখি হবেন কমলা হ্যারিস।