অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ভাইরাস আমাদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে। তার পরও কৃষির যে অগ্রগতি সেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। কেননা মানুষের খাদ্যের অভাব যাতে না হয় সেটা দেখতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার শুরুতে তিনি এ কথা বলেন। করোনার বাস্তবতায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। আগারগাঁওস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে অর্থনীতি হোঁচট খেলেও, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে গতিশীলতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। এসডিজির যে ১৭টি নির্দেশনা রয়েছে, তারমধ্যে যে কয়েকটা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য, সেগুলোকে নিয়ে আমরা কাজ করব এবং সেটা বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী নিজ দপ্তর হতে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান, সভায় ১৩ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সংশোধনের মাধ্যমে দুটি প্রকল্পে ব্যয় হ্রাস করা হয়েছে।
সভায় আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ৪র্থ সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির আগের নাম ছিল একটি বাড়ি একটি খামার। প্রকল্পটি এ বছর শেষ হওয়ার লক্ষ্য ছিল। এ বিষয়ে সভায় জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটি সমগ্র দেশের ৪৯২টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি সর্বমোট ৮ হাজার ১০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য থাকলেও গতকাল সংশোধনের মাধ্যমে ১১৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। অর্থাত্ ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হলো। সেই সঙ্গে আরো এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পটি সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব আইডিয়া থেকে গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক চালু করে দরিদ্র্য মানুষদের সহায়তা করা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি চিরদিনের জন্য নয় তাদের স্বাবলম্বী হতে হবে। ঋণ আনে ঋণ খায়, এমন চক্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ঋণের পাশাপাশি সঞ্চয় করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এই সঞ্চয় দিয়ে তাদের পরবর্তীকালে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে।
সভায় ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (আইএসপিপি) যত্ন প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের নগদ সহায়তা, শিশুদের পুষ্টি ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে নগদ সহায়তা দেওয়া হতো। কিন্তু প্রকল্পটি হতে বিশ্বব্যাংক ৫ কোটি ডলার প্রত্যাহার করায় প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পটি ধীরগতির কারণে অর্থ কেটে নিয়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তার জন্য দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটির ব্যয় ৪৬০ কোটি টাকা কমিয়ে ১৯৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও আরো দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। সভায় জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সময়মতো দরিদ্র্য মানুষের ডাটাবেইজ তৈরি করতে না পারায় প্রকল্প এলাকার উপকারভোগীদের বাছাই করে অন্তর্ভুক্ত করা ও উপকারভোগীদের ক্যাশ ট্রান্সফার করা সম্ভব হয়নি। এজন্য সময় আরো দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। ধীরগতির কারণে বিশ্বব্যাংক ৫ কোটি ডলার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ ধরনের প্রকল্প মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় করে থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাদের সাথে ভবিষ্যতে সমন্বয় করে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমানে প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবায়ন করছে।
সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো, ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনর্বাসন প্রকল্প, ২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প, ৬৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তুলা গবেষণা উন্নয়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্প, ২৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৯৩৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন (২য় পর্যায়) প্রকল্প।