নাদিরা তাবাস্সুম : সকাল বেলা বিশ্বের আলোচিত সব সংবাদে যুদ্ধ বিধধস্ত অঞ্চলগুলো দেখে দিদারের মনে একটা অশুভ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, না জানি কবে আবার বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এমন সময় বন্ধু রুহানের ফোন আসে। রুহান জানতে চায় দিনের কোন গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা আছে কি না। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি এবং আসন্ন খাদ্য সংকটে সকলেই বেশি বেশি খাদ্য মজুদের ব্যবস্থা করছে। এমন কোন পরিকল্পনা দিদার করছে কিনা। দিদার বলে, সংবাদে বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে ও শুনে মনটা ভালো নেই । সত্যি কি বিশ্বযুদ্ধ লাগতে পারে?

রুহান- কালের আবর্তনে ঘুর্ণায়মান পৃথিবীর অস্থির উদ্বিগ্ন দিকভ্রান্ত মানুষ নানাবিধ আশংকায় ভীত সন্ত্রস্ত, এই বুঝি লেগে যায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেখানে একবিংশ শতকে এসে মানুষ আজও প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ও নৃশংসতা বয়ে বেড়াচ্ছে। করোনা মহামারী শেষ হতে না হতে আরও নতুন ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। ওদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বিভক্ত হয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিতে পারে যে কোন সময়। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর- দক্ষিণ কোন গোলার্ধেই এর প্রভাবমুক্ত নয়।

দিদার- ইতোমধ্যে ধনী দেশগুলোই যেখানে খাদ্য সংকটের মুখোমুখি সেখানে গরীব দেশগুলোর কি অবস্থা হবে? দুর্ভিক্ষের হাহাকার দেখা দিতে যাচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। জাতিসংঘের সাবধান বাণী এবং যুদ্ধ বন্ধের আহবান কেউ শুনছে না। অনেক দেশ এবং অনেক মানুষ আছে যারা প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত। কিন্তু সাধারন খেটে খাওয়া মানুষগুলো বুঝেও না বুঝে, জেনেও না জেনে প্রস্তুতি নেয়া তো দূরের কথা দুবেলা আহার যোগাড়ের চিন্তায় ব্যস্ত। তাদের যেন এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই আর থাকলেও কিছু করার উপায় নেই।

রুহান- বিশ্বে উপায়হীন মানুষের সংখ্যাই যেহেতু বেশি তাই এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে ভাগ্যকে। ভাগ্যক্রমে যদি বিশ্ব বিধাতা সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রাখেন তো কে ঠেকাতে পারে! “রাখে আল্লাহ, মারে কে”- এ রকম একটা ভাবনা নিয়ে চলে। আবার একটা কথা শোনা যায় যে আমরা শেষ জমানার মানুষ। শেষ জমানায় একটা বড় রকমের যুদ্ধের আশংকা আছে। আমাদের ইসলাম ধর্ম মতে ইমাম মাহদি (আঃ) এবং ঈসা (আঃ) এর পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে এ ধরনের যুদ্ধ সংঘটিত হতে পারে। মহান আল্লাহতায়ালাই সব কিছু ভালো জানেন। তিনি দৃশ্য অদৃশ্য সকল জ্ঞানের অধিকারী।

দিদার- আমার মনে হয় সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা যা করতে পারি তাহলো, বিশ্বে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত রাখা। অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে আমরা ব্যয় সঙ্কোচন করতে পারি, নিজেদের যা আছে যতটুকু আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারি এবং পরিবার ও সমাজে সবার সাথে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি।

রুহান- সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তাকে খুশী রেখে তাঁর সৃষ্টির সেবা করতে পারায় অনেক শান্তি নিহিত আছে। Thomas Paine-র মতে “Country is the world and my religion is to do good”. মানুষের মাঝে উত্তম কাজ কি প্রশ্নের উত্তরে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কি বলেছেন জানো? তিনি বলেছেন, “মানুষের মনে আনন্দ দেয়া, ক্ষুধার্তকে আহার করানো, উৎপীড়িতকে সাহায্য করা, দুঃখীর দুঃখভার লাঘব করা এবং অত্যাচারিত ব্যাক্তির উপর অন্যায়ের প্রতিকার করা”।

দিদার- শর্তহীনভাবে ভালোবাসতে পারা খুউব কঠিন কাজ। কিন্তু শর্তহীনভাবে ভালোবাসার চেষ্টা করা উচিৎ। মার্টিন লুথার কিং-এর মতে “Love is the only force capable of transforming an enemy into a friend”. এজন্যে মাদার তেরেসা বলেছেন, “if you judge people , you have no time to love them”. The more we judge people , the less we love them. লোভ, লালসা ও স্বর্থপরতা ত্যাগ করে ভাবতে হবে যে ‘জন্মের সময় শূণ্য হাতে আসা, মৃত্যকালেও শূণ্য হাতে চলে যাওয়া; অর্থ বিত্ত, ধন সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি কিছুই সংগে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই জ্ঞানীদের মতে, ‘God has provided enough for our need but not for our greed’ .

রুহান- লোভ লালসা কমানোর উপায় হলো বেশি বেশি দান করা। বিপদ আপদে, অভাব অনটনে একে অপরকে সাহায্য করা, গরীব দুঃস্থদের মাঝে দান করা এবং মানব কল্যাণে অর্থ ব্যয় করা। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে ভালো মন্দ উভয় কাজ করার ইচ্ছাশক্তি প্রদান করা হয়েছে। তাই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। মহান আল্লাহতায়ালা বেশি বেশি সৎকর্ম করার এবং মন্দ কর্ম ত্যাগ করার জন্য নির্দেশ করেছেন। তিনি মানুষকে দান ও মানব কল্যাণে অর্থ ব্যয় করার কথা বলেছেন।

“আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের পাপ সমূহ অবশ্যই আমি মিটিয়ে দেব আর তাদের কর্মের উত্তম ফল দেব” (সূরা আনকাবুত : আয়াত ৭)
“হ্যাঁ যে কেউ আল্লাহতে সমর্পিত এবং সৎকর্মপরায়ণ হয়, তবে তার ফল রয়েছে তার রবের নিকট, আর তাদের নেই কোন ভয় আর না তারা দঃখিত হবে” (সূরা বাকারা : আয়াত ১১২)
“আত্মশুদ্ধিতে যে সম্পদ দান করে। আর কারও অনুগ্রহের প্রতিদান হিসেবে নয়। কেবল তার রবের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে” (সূরা লাইল : আয়াত১৮-২০)

“যারা ব্যয় করে স্চ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায়, আর তারা ক্রোধ দমন করে, আর ক্ষমা করে মানুষকে; আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন” (সূরা আল ইমরান: আয়াত ১৩৪)
দিদার- মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সতত সৎকর্ম করার এবং তাঁর সৃষ্টির সেবা করে যাওয়ার তৌফিক দান করুন।