অনলাইন ডেস্ক : কিছু আন্তর্জাতিক ছাত্র যারা কানাডায় পোস্ট সেকেন্ডারি স্কুলে পড়তে চাইছে এবং যারা ইতোমধ্যে তাদের অনলাইন শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেছে, তারা অভিযোগ করেছে যে তাদের কানাডিয়ান ভিসা মাসের পর মাস অনুমোদনের জন্য পড়ে আছে। অভিবাসন প্রক্রিয়ায় জটের কারণে অটোয়া প্রশাসন তাদের পড়াশোনার অনুমতি অনুমোদনের জন্য কয়েক মাস ধরে অপেক্ষা করছে। এতে তাদের শিক্ষা জীবন আটকে রয়েছে।

ভারতের পাঞ্জাবে বসবাসকারী রবনিত কাউর বলেন, আমার অবস্থা প্রকাশ করার মতো কোন শব্দ আমার কাছে নেই। এমন কি আমি বেশি কিছু বলতেও পারছিনা। আমরা স্বপ্ন পূরণের আশায় আবেগের পাশাপাশি আমাদের অর্থও বিনিয়োগ করেছি। ফলে এখন আমরা আর্থিক ও মানসিক উভয়দিকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

অন্টারিওর উইন্ডসরে সেন্ট ক্লেয়ার কলেজে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে কাউরের আবেদন গৃহীত হয়েছিল। ২০২১ সালের জুলাইয়ে তিনি কানাডায় স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করেছিলেন। করোনা মহামারির কারণে অনলাইন কোর্সের একটি সেমিস্টারের জন্য তিনি অর্থ পরিশোধ করেন এবং কোর্সটি সম্পন্ন করেন। কাউর আশা করছিলেন ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা (আই আর সিসি) ইতোমধ্যে তার স্টাডি পারমিট অনোমোদন করবে এবং তিনি স্বশরীরে কানাডায় তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শীতকালীন সেমিস্টারে যোগ দিতে পারবেন। কিন্তু মহামারি ও যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় জট লেগে যাওয়ায় তার আশা এখনো পূরণ হয়নি। এদিকে মহামারির বিধি-নিষেধ তুলে নেয়ায় অনলাইনেও আর ক্লাস চলছে না। ফলে কাউরের মতো অনেকেরই শিক্ষা জীবন ‘আটকে’ গিয়ে ‘থমকে’ গেছে।

কাউর বলেন, দ্রুত কানাডা যাওয়ার অনুমতি না পেলে তার কোর্স শেষ করার সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। একদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে ক্লাসে হাজির হওয়ার তাগাদা দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ভিসার অনুমতি না পাওয়ায় ক্লাসে হাজির হওয়া যাচ্ছে না। কাউর বলেন, আমরা একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আছি। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি। আমরা এখানে নতুন কোন কোর্সের জন্যও নিবন্ধন করতে পারছি না। আমাদের বর্তমান ব্যক্তিগত জীবন এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবন সবকিছুই নষ্ট হতে চলেছে। নিজেদের জন্য আমরা কিছুই করতে পারছি না, আমরা শুধু আটকে যাচ্ছি।

সিবিসি নিউজ ভারতের আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রের সাথে কথা বলেছে যারা প্রায় ১ বছর যাবত কানাডিয়ান স্টাডি পারমিট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। নয়াদিল্লির বাসিন্দা সিধ মির্জা (২০) বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি যে, কানাডায় পৌঁছানোর জন্য এত সময় নষ্ট করতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকা সত্বেও ৬ মাস হয়ে গেছে, কিন্তু আমি এখনো স্টাডি পারমিট পাইনি। আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় এটি সময়ের সম্পূর্ণ অপচয়’।

শর্মা ২০২১ সালের নভেম্বরে সেন্ট ক্লেয়ারে বিজনেস মার্কেটিং প্রোগ্রামে আবেদন করেছিলেন এবং এখনো স্টাডি পারমিটের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, এটা একটা হতাশাজনক পরিস্থিতি। আমার পরিবার বলছে, তারা যদি তোমার আবেদনে সাড়া না দেয় তবে তুমি অন্য কোন দেশে নতুন করে আবেদন কর। কিন্তু আমি এটা করতে চাই না। আমি কানাডাকে পছন্দ করি, কানাডার লোকজনকে পছন্দ করি। এই দেশটির সাংস্কৃতিক ও বহু ধর্মীয় বৈচিত্র্য আমার খুবই পছন্দ। তাই আমি আমার আবেদন বাদ দিতে চাই না।

কাউরের মতো শর্মাও অনলাইনে তার শিক্ষা বর্ষের একটি সেমিস্টার শেষ করতে পেরেছে। কিন্তু এখন তার দ্বিতীয় সেমিস্টার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কানাডায় উপস্থিত হতে না পারলে সময় মত এটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।

শর্মা বলেন, কলেজ স্টাফ ও শিক্ষকেরা খুবই মিষ্টভাষী ও সহায়ক। কিন্তু আমাদের আবেদনগুলি প্রক্রিয়া করা হচ্ছে না। আমি জানি না আই আর সিসি আমাদের আবেদনগুলো নিয়ে কি ধরনের পর্যালোচনা করছে। প্রসঙ্গত, সেন্ট ক্লেয়ার কলেজ, তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অভিবাসন ভিসা অনুমোদিত না হলে তা ফেরত প্রদান করে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ৮০০ জন ছাত্র স্টাডি পারমিট ছাড়াই অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছিল। বর্তমানে মাত্র ৯০ জন ভিসা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এদিকে আই আর সিসির একজন মুখপাত্র বলেন, মহামারির কারণে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের আাবেদনে জট লেগে গেছে। আমরা তাদের হতাশা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি আাবেদনগুলো দ্রæত নিষ্পতি করতে। তিনি বলেন, ফেডারেল সরকার স্টুডেন্ট পারমিট জারির বিষয়ে অগ্রগতির জন্য কাজ করছে। বর্তমানে স্টাডি পারমিট প্রক্রিয়াকরনে ১১ সপ্তাহ সময় লাগছে। আমরা আশা করছি শিক্ষার্থীরা সময়মত তাদের পারমিট পেয়ে যাবে। তবে অভিবাসন আইনজীবী এডি কাদরি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ফেডারেল আবেদন সিস্টেম প্রায় ভেঙে পড়েছে। আগামী দিনগুলোতে এটি আরো খারাপ হতে পারে। তিনি বলেন, আই আর সিসি এখন আফগান ও ইউক্রেন শরনার্থীদের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করছে। তাই শিক্ষার্থীদের দিকে নজর দেয়ার সময় নেই। সূত্র : সিবিসি