বাংলা কাগজ ডেস্ক: শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করে অনলাইনে শিক্ষাদান যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে অনলাইন বা ভার্চুয়াল শিক্ষা কতটা কার্যকারী তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বৈশ্বিক করোনা মহামারীর প্রারম্ভেই যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। একদিকে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় আর অন্যদিকে গৃহবন্দী হয়ে থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক সমস্যার হার অনেকাংশে বেড়ে যায়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের শুরু হয় আশংকা আর উদ্বিগ্নের পালা। বর্তমান ফল সেমিস্টার শুরুর পূর্বে এখানকার স্কুলগুলো খুলে দেবার প্রশ্নে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদের, আর শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে এবং নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বিস্তারির আলোচনার পরে স্কুলগুলো খুলে ইনপারসন ক্লাস চালু হয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া করতে আসা ছাত্রছাত্রীদের বিষয়ে এখানকার সরকারের মনোভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে একেবারেই ভিন্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারীর সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন অনলাইনে ক্লাস শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার ভিসা দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল। সেখানকার সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল এম আই টি ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও আগের মতই আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে।

অনলাইনে শুরু হওয়া ক্লাসগুলোতে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদানসহ বিশেষ আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হলেও অনলাইন ক্লাস নিয়ে অভিভাবকদের ভিতরে যথেষ্ট উদ্বিগ্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ইনপারসন ক্লাস নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক আর ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে অনলাইন ক্লাসের বিকল্প ব্যবস্থাও পাশাপাশি চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে স্কুলগুলোকে একদিকে যেমন কন্টাক্ট ট্রেসিংসহ সরকারের আরোপিত নানা অতিরিক্ত বিধিমালা মেনে চলতে হচ্ছে, অন্যদিকে ইনপারসন ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ইন পার্সন ক্লাসে ইতোমধ্যে কানাডার কয়েকটি প্রদেশের স্কুলে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে পুনরায় চালু করা হয়। এদিকে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় শতভাগই অনলাইন কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত তা চালিয়ে যাবে বলে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারির ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. আনিস হক বলেন, কানাডার স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের অনলাইন পাঠদানের উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেবার পরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার মান সমুন্নত রাখাটা সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, মনে রাখতে হবে যে আধুনিকমানের প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারই মানসম্পন্ন পাঠদানের শেষ কথা নয়। অনলাইন পাঠদানে ছাত্রছাত্রীদের সঠিক অংশগ্রহণ, বিষয়বস্তুর উপর তাদের অনুপ্রেরণা ধরে রাখা, পরিবর্তীত পরিস্থির সাথে খাপখায়িয়ে ছাত্রদের মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ণয় করা এমনকি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের বর্ধিত হার মোকাবেলা করার মত বিষয়গুলোও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।