Home কানাডা খবর কানাডায় এক মাসে বেকার ২ লাখ ৭ হাজার জন

কানাডায় এক মাসে বেকার ২ লাখ ৭ হাজার জন

অনলাইন ডেস্ক : কানাডায় করোনা মহামারির বিস্তার রোধে সরকারের নতুন আরোপ করা লকডাউনের ফলে গত এপ্রিল মাসে ২ লাখ ৭ হাজার জন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার জন ছিলেন ফুল টাইম চাকুরিজীবি আর বাকি ৭৮ হাজার জন পার্ট টাইমার। স্ট্যাটিসটিকস কানাডা গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রসঙ্গত গত জানুয়ারি থেকে কানাডায় করোনার ৩য় ঢেউ বাড়তে থাকায় সরকার সেখানে লকডাউন ও স্টে অ্যাট হোম অর্ডার জারি করে। এতে অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ লোক কর্মহীন হয়ে পড়েন। প্রতি মাসেই এই বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিলে এই কর্মহীনদের হার পৌঁছেছে ৮.১ শতাংশে। আগের মাসে যা ছিল ৭.৫ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছিলেন, এপ্রিলে বেকারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি হবে না। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে ওই সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আরও একটি বিষয় যা সমাজ বিজ্ঞানিদের চিন্তায় ফেলেছে তা হলো বেকারদের অর্ধেকই বয়সে তরুণ। কানাডা পরিসংখ্যান বুরোর দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত মাসে চাকুরি হারানোদের প্রায় অর্ধেকেরই বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর। এসব তরুণ ও যুবক বিপনি বিতান, হোটেল রেস্টুরেন্ট কিংবা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে কাজ করে নিজের ও পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করত। এদের অনেকেই গত বছর ১ম দফা লকডাউনের সময় চাকুরি হারিয়ে আবার নতুন করে চাকুরি খুঁজে পেয়েছিলেন। এখন আবার কাজ হারিয়ে তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব তরুণ ও যুবক দ্রæত নতুন কাজ খুঁজে না পেলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে পারে।

টরন্টোতে ২০১৮ সালে নিজস্ব সেলুন চালু করেছিলেন টেলার লুম্ব। অল্প দিনেই তার দোকান বেশ চালু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মহামারির কারণে অন্য অনেকের সাথে তার ব্যবসাতেও ধ্বস নামে। ২০২০ সালের মার্চে তিনি দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। তারপর থেকে তিনি অপেক্ষায় আছেন কখন আবার দোকান খোলার অনুমতি পাবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা পাননি। কানডিয়ান ইমার্জেন্সি রেসপন্স বেলিফিকের (সিইআরবি) পক্ষ থেকে তিনি কিছু সহায়তা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তিনি বলেন, ওই সাহায্যের অর্থ দিয়ে দোকান ভাড়াই পরিশোধ হয় না। তাই দিন যতই যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই কঠিন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার ব্যবসা বন্ধ সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছি। জানি না জীবন যুদ্ধে এভাবে আর কত দিন টিকে থাকতে পারব।

কয়েক সপ্তাহ আগে কিছু নাপিত দোকান বাদ দিয়ে পার্কে খোলা জায়গায় তাদের কাজ শুরু করেছিল। কিছু কাস্টমারও তারা পাচ্ছিল। কিন্তু এখন নতুন করে স্টে অ্যাট হোম অর্ডার জারি করায় রোজগারের এই পথও বন্ধ হয়ে গেছে। লুম্ব অভিযোগ করেন, সরকার শুধু বড় ব্যবসায়ীদের নিয়েই বেশি মাথা ঘামাচ্ছে। আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা ভাবার সময় তাদের নেই। তিনি বলেন, কবে আবার দোকানের দরজা খুলতে পারব তার নিশ্চয়তা নেই। আর যদি সহসা খুলতেও পারি তাহলে নতুন করে সব কিছু শুরুর জন্য যে মূলধন প্রয়োজন তা কোথায় পাব? সরকার ধনীদের আরো ধনী বানাচ্ছে, আমাদের দিকে তো কারো নজর নেই।

অন্টারিওতে এক বছর ১ লাখ ৩৫ হাজার জন নতুন করে বেকার হয়েছেন। সেখানে বেকারত্ব বৃদ্ধির হার ৯%। অন্যদিকে বিট্রিশ কলাম্বিয়াতে নতুন বেকারের সংখ্যা ৪৩ হাজার। আগের বছরের তুলনায় এই হার বৃদ্ধি ৭.১%। অন্যান্য প্রদেশেও চিত্র প্রায় একই। টিডি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থানাবালাসিঙ্গম বলেন, এপ্রিল মাসের বেকারত্বের চিত্র অর্থনীতিবিদদের ধারণাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

এতে বোঝা যাচ্ছে কানাডার অর্থনীতি কী কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। তাই দেশের অবস্থার উন্নয়নের জন্য বিশেষ করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গত মাসের বেকারত্বের হিসাব দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে ধারণার চাইতে একধাপ বেশি পিছিয়ে দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে তা চিন্তা করতেই গা শিউরে ওঠে। শ্রমবাজার সম্পর্কে ব্যাংকার থানাবালাসিঙ্গম বলেন, দেশের বাইরে যাওয়ার ফ্লাইট বন্ধ থাকার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব অব্যাহত আছে। চলতি মে মাসেও শ্রমিকদের জন্য তেমন কোন সুখবর থাকবে না। এই অবস্থা আগামী মাস অর্থাৎ জুনেও বজায় থাকতে পারে। তবে সরকার ভ্যাকসিন কার্যক্রম জোরদার করেছে, কোভিড আক্রান্তের হারও কমে আসছে। আশা করা যায় কানাডার শ্রমবাজারের জন্য সামনে শুভ দিন অপেক্ষা করছে। তবে এর জন্য একটু সময় দিতে হবে। সূত্র : সিবিসি নিউজ

Exit mobile version