Home কানাডা খবর কানাডায় আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ! রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের...

কানাডায় আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ! রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের ঈদ শুভেচ্ছা

সুহেল ইবনে ইসহাক, টরন্টো, কানাডা : ঈদ মানে আনন্দ! ঈদ মানে উৎসব! ঈদ মানে নতুন জামার ঘ্রাণে হৃদয় মাতোয়ারা! সংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও শুদ্ধতার মাস পবিত্র মাহে রমজানের একেবারে শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেছি আমরা। আজ মঙ্গলবার, ১১ মে সন্ধ্যায় শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে কাল বুধবার কানাডায় পবিত্র ঈদুল ফিতর। বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সঙ্গে উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশি মুসলমানরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে তাঁদের সর্ববৃহৎ উৎসব ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার মাধ্যমে ঈদ আনন্দের সূচনা হয়, রমজান মাসের সমাপ্তি ঘটে।

হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের পয়লা তারিখে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা হয়। তবে এই পঞ্জিকা অনুসারে কোনও অবস্থাতে রমজান মাস ৩০ দিনের বেশি দীর্ঘ হবে না। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের সমাপ্তিতে শাওয়ালের প্রারম্ভ গণনা করা হয়। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় “লাইলাতুল জায়জা” এবং চলতি ভাষায় “চাঁদ রাত” বলা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ অর্থাৎ সূর্যাস্তে একফালি নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ হয়, এই কথা থেকেই চাঁদ রাতটির উদ্ভব।

ঈদ উৎসবের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জড়িয়ে আছে মেহেদি রাতের সাজসজ্জা। চাঁদ রাতে মেহেদির রঙিন আলপনার মধ্য দিয়ে ঈদের সাজসজ্জা শুরু হয়। নিউইয়র্কের বাতাসে এখন বসন্তের মিষ্টি সুঘ্রাণ বইছে। চারদিকে প্রাকৃতিক মাধুর্যের মনোমুগ্ধকর হাতছানি মানুষের হৃদয়ে দোল খেয়ে যায়। যত দূর চোখ যায়, সবুজের হাতছানি আর ফুলেল সৌন্দর্যে অবলোকন করে মনে হয় পৃথিবীর মতো এত সুন্দর জায়গা অন্য কোথায়ও আর নেই। বছরের বেশির ভাগ সময় বরফে ঢাকা দেশ কানাডায় শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করে গ্রীষ্মের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য শুধু কয়েক মাসের জন্য চোখে পড়ে। প্রান্তরের পর প্রান্তরজুড়ে প্রকৃতির এই বর্ণিল সাজ সাজ রব মুসলমানদের প্রাণের উৎসব ঈদ আনন্দকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কানাডার বিভিন্ন প্রদেশের স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে গিয়ে এবার সেই আনন্দে ভাঁটা পড়বে।

আধুনিক কালে অনেক দেশে গাণিতিক হিসাবে ঈদের দিন নির্ধারিত হলেও কানাডায় ঈদের দিন নির্ধারিত হয় প্রচলিত একাধিক মতের আলোকে, নর্থ আমেরিকা সেন্ট্রাল হিলাল কমিটি, হিলাল কমিটি অফ মেট্রোপলিটন টরন্টো, নর্থ আমেরিকা শরিয়া কাউন্সিল, ইসলামিক শুরা কাউন্সিল অফ নর্থ আমেরিকা, দি হিলাল কমিটি অফ টরন্টো প্রভৃতি সংস্থা সমূহের শরিয়াভিত্তিক সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে কানাডায় ঈদের চাঁদের দেখা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে করে বিভিন্ন সময় চাঁদ দেখার সিদ্ধান্তে মতক্যের সৃষ্টি হয়। তখন কোনো কোনো বছরে দেখা যায় কানাডার একেক জায়গায়, এমনকি একই এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন দিনেও ঈদ উদযাপিত হয়েছে ।

মুসলমানদের জন্য ঈদের পূর্বে পুরো রমজান মাস রোজা রাখা হলেও ঈদের দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম। ঈদের দিন ভোরে মুসলমানরা আল্লাহর ইবাদত করে থাকে। ইসলামিক বিধান অনুসারে ২ রাকাত ঈদের নামাজ ৬ তাকবিরের সঙ্গে ময়দান বা বড় মসজিদে পড়া হয়। ফযরের নামাযের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর ঈদুল ফিতরের নামাযের সময় হয়। এই নামায আদায় করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব।

ইমাম কর্তৃক শুক্রবারে জুম্মার নামাজের আগে ইসলামিক বক্তব্য প্রদানের বিধান থাকলেও ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে তা নামাজের পরে প্রদান করার নিয়ম ইসলামে রয়েছে। ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে খুৎবা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত; তা শ্রবণ করা নামাযীর জন্য ওয়াজিব। সাধারণত: ঈদের নামাজের পরে মুসলমানরা সমবেতভাবে মুনাজাত করে থাকে এবং একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের সম্ভাষণ বিনিময় করে থাকে। ঈদের বিশেষ শুভেচ্ছাসূচক সম্ভাষণটি হলো, “ঈদ মুবারাক” কিংবা “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম”। তবে এই বছরে লকডাউনের কারণে পুরো অনুষ্ঠানের রীতি বদল হয়েছে। সকলে এই খুশির উৎসব পালন করবেন বাড়িতে থেকেই।

অন্টারিও আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফা কামাল বাঙালি কমিউনিটিকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত বছরের ন্যায় এবার আমরা ঘরে বসে ঈদ উদযাপন করবো, টেলিফোন ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে একে ওপরের সাথে আনন্দ বিনিময় করবো। বেঁচে থাকলে পরবর্তী সময়ে ঈদ উদযাপন করবো ব্যাপকভাবে, কিন্তু সরকারি স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে চলা এখন সবচেয়ে বড় কথা।”

কানাডা বি.এন.পি. নেতা ও সাপ্তাহিক ভোরের আলো পত্রিকার সম্পাদক আহাদ খন্দকার বাংলা কাগজের এই প্রতিবেদককে জানান, “ব্যাপকভাবে উৎসব পালনের চাইতে স্বাস্থ্য সচেতনতাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে, বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে ঘরে বসে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাই উত্তম।” তিনি বলেন, “পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই আমরা ঈদ করব। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য সকলের দোয়া কামনা করছি।” কমিউনিটির সকলকে তিনি ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ টরন্টো কানাডার প্রেসিডেন্ট জাকির হোসেন টরন্টোর বাঙালি কমিউনিটিসহ সকল মুসলিম উম্মাহকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, “কবিড-১৯ এর জন্য আমার মতো অনেকেই প্রিয়জন হারানোর ব্যথা বুকে নিয়ে এই ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি, তাই ঈদের প্রাক্কালে আমাদের প্রার্থনা হোক, হারানো প্রিয়জনদের আত্মার শান্তি ও মানব জাতির সর্বাঙ্গীন উন্নতি”। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে ঈদ উদযাপনের চাইতে এই মহামারিকে কিভাবে অতিক্রম করব এটাই আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়।”
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কানাডার সভাপতি ও “ক্যানবাংলা টিভি”র চেয়ারম্যান ডক্টর হুমায়ুন কবির কানাডার সকল বাঙালি কমিউনিটিসহ সর্বসাধারণকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের হৃদয়জ শুভেচ্ছা জানান। বাংলা কাগজকে তিনি বলেন, “বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে গত বছরের ন্যায় এবারও আমাদেরকে পবিত্র ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে, ধনী-দরিদ্র, জাত-মত, শ্রেণী বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার পতাকার ঊর্ধ্বমুখী উত্তরণ হোক এই ঈদের মহান শিক্ষা।” তিনি বাংলাদেশের উত্তরুত্তর সমৃদ্ধি, ও কোরোনামুক্ত বিশ্বের জন্য সকলের দোয়া কামনা করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অব কানাডা ইন্ক্ এর সভাপতি এ.এম.এম. তোহা, এসোসিয়েশনের পক্ষ হতে বাঙালি কমিউনিটিসহ সকল মুসলিম স¤প্রদায়কে ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মুবারকবাদ জানিয়ে বাংলা কাগজকে বলেন, “বিশ্বমারির এই বিষময় সন্ধিক্ষণে ঈদের আগমনে পৃথিবীর সকল মানুষের মুখে আবারো ফুটে উঠুক হাসি আর আনন্দের রেশ, দূর হয়ে যাক সব বাঁধা-বিঘ্ন, ঘুঁচে যাক সব জরা, অশ্রুবাষ্প মিলাক সুদূরে”। এছাড়াও তিনি সকলের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ জীবন কামনা করেন।

টরন্টোর বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী, সাহিত্যকর্মী ও “আলোকধারায় মিলি” অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা মুনিরা সুলতানা মিলি বাংলা কাগজকে জানান, “করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগকালে আমরা যদিও শারীরিকভাবে কাছে থাকতে না পারলেও মানসিক ও আর্থিকভাবে মানুষের পাশে থেকে আমরা যেন ঈদ উদযাপন করি। অন্যের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে আমরা যেন এই দুর্যোগ পাড়ি দিতে পারি” সকলের কাছে তিনি এটাই কামনা করেন।
আশা করি, পশ্চিমা এ দেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমাদের সন্তানেরাও ভবিষ্যতে আমাদের মতো ঈদ উৎসবে দেশি পোশাকে সজ্জিত হয়ে বিদেশিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে আমাদের ঈদ উৎসবকে, কানাডায় বাঙালিদের এমনটাই কামনা ।

Exit mobile version