মোহাম্মদ সাকিবুর রহমান খান, ম্যানিটোবা, কানাডা : বাংলাদেশের হাটগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়। আজ থেকে ৩০ বছর আগে ও বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ২–১টি করে বড় হাট বসত সপ্তাহে এক দিন করে। এখনকার উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটিতে হাট বসত। ক্রেতারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনতে পারতেন। সময়ের বিবর্তনে সেই হাটগুলো আর নেই। কৃষকদের কাছ থেকে এখন মালামাল কেনে মধ্যস্বত্বভোগীরা। ফলে কৃষক তাঁর পণ্যের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে সাধারণ ক্রেতারা অনেক বেশি দামে পণ্য কিনছেন। আগে হাটের দিনে গ্রামের মানুষের সঙ্গে একে অপরের দেখা হতো। যার ফলে সামাজিক সম্পর্কগুলো নিবিড় ছিল। এখন হাট না থাকার কারণে বাংলাদেশের সামাজিক সম্পর্কগুলো অনেকাংশে শিথিল হয়ে গেছে।
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ কানাডায় আজও টিকে রয়েছে হাট। তবে এগুলো ‘ফার্মার্স মার্কেট’ নামে পরিচিত। এ ধরনের একটি হাট হচ্ছে ম্যানিটোবার ‘সেন্ট নর্বাট ফার্মার্স মার্কেট’। এটি ম্যানিটোবা প্রভিন্সের রাজধানী উইনিপেগ শহরের দক্ষিণ দিকে।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এবং এলাকার জনগণের আগ্রহের কারণে এই হাটগুলো কানাডার আধুনিক বিপণনব্যবস্থার মধ্যেও টিকে আছে মাথা উঁচু করে। আজ থেকে ৩২ বছর আগে ১৯৮৮ সালের ১৬ জুলাই সেন্ট নর্বাট ফার্মার্স মার্কেটের যাত্রা শুরু হয়। তবে আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে থেকে উইনিপেগে ফার্স্ট নেশন (নেটিভ ইন্ডিয়ান) বসবাস করা শুরু করে। তারা রেড রিভার নদীর তীরে থাকা শুরু করে। ধারণা করা হয়, এ এলাকায় অনেক আগে থেকে তারা পণ্য কেনাবেচা করত।
শীতের সময়ে এই হাট খুবই ছোট পরিসরে হলেও সামারে এর ব্যাপকতা অনেক বেড়ে যায়। হাটটির সামনে দিকে ‘প্যামবিনা’ হাই ওয়ে আর পেছনে ‘রেড রিভার’ নদী। এই ‘প্যামবিনা’ হাই ওয়ে এবং ‘রেড রিভার’ নদী চলে গিয়েছে আমেরিকাতে। এখন থেকে আমেরিকার সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ৯৬ কিলোমিটার। যেহেতু দুই দেশের নাগরিকদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে ভিসা লাগে না, সে কারণে মাত্র এক ঘণ্টার কম সময়ে গাড়ি চালিয়ে এখানে আমেরিকা থেকে ক্রেতা–বিক্রেতারা চলে আসেন। সামারে এই হাট দুই দিন বসে। শনিবার সকাল আটটা থেকে বেলা একটা এবং বুধবার বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত।
এখানে সব পণ্যই স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত। তাঁরা সরাসরি তাঁদের খামার থেকে এখানে পণ্য নিয়ে আসেন। এখানে পাওয়া যায় আলু, টমেটো, শসা, গাজর, বিভিন্ন শাক-সবজি, পিঁয়াজ, মধু, বিভিন্ন গাছের চারা, জুয়েলারি, এমনকি হাতে বানানো জামাকাপড়। অনেক আদিবাসী নিয়ে আসেন পশুর চামড়ার তৈরি জ্যাকেট। এখানকার পণ্যগুলোর দাম একটু বেশি। কারণ, এ এলাকায় বছরের সাত মাসের বেশি সময় বরফে ঢাকা থাকে। অনেকে গ্রিন হাউসের মাধ্যমে তাঁদের পণ্য উৎপাদন করেন। দাম একটু বেশি হলেও মানুষ খুশিমনে এগুলো কিনে নিয়ে যান লোকাল কৃষকদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য।
এখানে অনেকে গিটার বাজিয়ে গান শোনান। তাঁরা এর বিনিময়ে কিছু ডলার বা সেন্টস আশা করেন। অনেকে গান শুনে তাঁদের কিছু ডলার বা সেন্টস দান করেন। এখানকার কমিউনিটির লোকজন এই সামারে বিভিন্ন কালচারাল প্রোগ্রামের আয়োজন করে বাজারের দিন। এই মার্কেটটি তাঁদের জন্য একটি মিলনমেলাও বটে।
কানাডার মূলধারার দোকানগুলোতে দামাদামির সুযোগ না থাকলেও এখানে একটু দামাদামির সুযোগ রয়েছে। হাটটি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন। আছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত টয়লেট।
কেউ যদি কানাডার ম্যানিটোবায় বেড়াতে আসেন, তাহলে এই হাটটি দেখে যেতে ভুলবেন না। আর যাওয়ার আগে প্রিয়জনদের জন্য এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত খাঁটি মধু নিতে ভুলবেন না। এখানকার খাঁটি মধু সারা উত্তর আমেরিকাতে বিখ্যাত।