অনলাইন ডেস্ক : কানাডার নির্বাচনে ভারত, পাকিস্তান ও চীন হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ তুলেছে অটোয়া। দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা এ অভিযোগ তুলেছে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ অভিযোগ করে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা। খবর আলজাজিরার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার সর্বশেষ দুটি জাতীয় নির্বাচনে এশিয়ার তিন দেশ হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে কানাডার এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এ তালিকায় অবশ্য রাশিয়ার নামও আছে।
অন্য দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের বিষয়ে রাশিয়ার বদনাম আগে থেকেই। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তো রীতিমতো দেশটিতে কংগ্রেসনাল তদন্ত হয়েছে। সাইবার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ চীনের বিরুদ্ধেও বেশ কয়েকবার উঠেছে। কিন্তু এ তালিকায় ভারত ও পাকিস্তানের নাম বেশ বিস্ময় জাগানিয়া।
কানডার শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার (সিএসআইএস) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত কানাডার জাতীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল ভারত, পাকিস্তান ও চীন। ভারত সরকার দেশটির কিছু আসনে সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে জয় পাইয়ে দিতে পর্দার আড়ালে কাজ করেছে। একই ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হয়েছে।
কানাডার তরফ থেকে এই অভিযোগে অনেকেই নড়েচড়ে বসেছেন। কারণ, সাধারণ একটি সার্বভৌম দেশ অন্য সার্বভৌম দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করার আগে অনেক যাচাই–বাছাই করে। আর কানাডা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই নিজের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। যদিও সম্প্রতি নিজ্জার হত্যাকাণ্ড ঘিরে ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক বেশ শীতল বলা যায়। এর মধ্যে নির্বাচনে সরকারি মদতে হস্তক্ষেপের চেষ্টার অভিযোগ ভারত কীভাবে নেবে, তা নিয়ে অনেকেই উৎসুক।
ভারতের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ
সিএসআইএসের নথির বরাত দিয়ে আল–জাজিরা জানায়, ২০১৯ ও ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে ভারত কিছু এজেন্ট নিয়োগ করেছিল। এদের মূল কাজ ছিল, কানাডায় নিজেদের স্বার্থে সহায় হতে পারে এমন রাজনীতিক খুঁজে বের করা। বিশেষত খালিস্তানপন্থী শিখদের বিষয়ে ভারতীয় স্বার্থকেই যেন কানাডা সরকার গুরুত্ব দেয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এ কাজ করেছিল ভারত। এ জন্য ভারত কানাডার কিছু রাজনীতিককে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল, যাতে তারা ভারতপন্থী প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনতে পারে কিংবা বিজয়ী প্রার্থীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনকি প্রার্থীরা জানতেনও না যে, তাঁর নির্বাচনী প্রচারে অবৈধ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত কিছু বিশেষ নির্বাচনী এলাকায় এই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিল, যেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের বাস বেশি। আর সেই অঞ্চলে থাকা ভারতীয়দের মধ্যে খালিস্তান ইস্যুতে সহানুভূতি ছিল।
ভারত কী বলছে
গত ফেব্রুয়ারিতে যখন কানাডা নির্বাচনে ভারতীয় হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে খবর বের হয়, তখনই ভারত দ্রুততার সঙ্গে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় একে ‘ভিত্তিহীন’ বলে আখ্যা দেয়।
এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, অন্য দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের কোনো নীতি ভারতের নেই। বরং কানাডাই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?
সিএসআইএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাডায় পাকিস্তানের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাটি মূলত পাকিস্তানের নিজস্ব স্বার্থ ঘিরে। রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে পাকিস্তানের স্বার্থ যেন রক্ষিত হয়, সে জন্য কানাডায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে পাকিস্তান। এ ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের অন্যতম লক্ষ্য ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাবের বিরুদ্ধে নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করা।
তবে নির্বাচনের আগে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলেও এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ক্ষেত্রটি ছোট ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল—কানাডার নীতিপ্রণেতা পর্যায়ে এমন কেউ আসুক, যারা পাকিস্তানের পক্ষে এবং ভারতবিরোধী।
তবে এ অভিযোগের বিষয়ে পাকিস্তানের তরফ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
চীন কী করেছিল?
চীনের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করছে সিএসআইএস। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে যতটা তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে নিশ্চিত যে, ২০১৯ ও ২০২১ সালের নির্বাচনে চীন প্রভাব বিস্তার করেছিল।
কানাডার বিগত দুই নির্বাচনেই বিজয়ী হয়েছিল জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি। সিএসআইএস বলছে, ‘আমরা নিশ্চিত যে, ২০১৯ ও ২০২১ সালের নির্বাচনে চীন গোপন ও প্রতারণাপূর্ণ কাজ করেছিল। এ ক্ষেত্রে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল চীনের স্বার্থ। তারা হয় নিজেদের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যক্তিদের বিজয় দেখতে চেয়েছিল, নয়তো চেয়েছিল চীনা স্বার্থের সাথে সংঘাত নেই এমন ব্যক্তিরা বিজয়ী হোক।’
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন।