অনলাইন ডেস্ক : যদিও কানাডায় এক সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণের সময় পোপ ফ্রান্সিসের কোনো ভাষণে গণহত্যা শব্দটি শোনা যায়নি, তবে রোমে ফেরার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, কানাডায় আবাসিক স্কুল ব্যবস্থা এবং আদিবাসী শিশুদের জোরপূর্বক আত্তীকরণসহ যা কিছু ঘটছে- তা আসলে ‘গণহত্যা’ হিসাবে গণ্য করা উচিত। আমি গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করিনি কারণ এটি মাথায় আসেনি, তবে আমি গণহত্যার বর্ণনা দিয়েছি, পোপ ফ্রান্সিস শুক্রবার ইকালুইট থেকে রোমে ফেরার পথে পোপ ফ্লাইটে সাংবাদিকদের একথা বলেন।
পোপ ফ্রান্সিস ছয় দিনের সফরে ক্যাথলিক গির্জার নিয়ন্ত্রণাধীন স্কুলগুলোতে নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কাছে ক্ষমা চান। রোমে ফেরার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পোপ। তখনই ‘গণহত্যা’ শব্দটি উল্লেখ করেন তিনি। তার কথায়, শিশুগুলোকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা, সংস্কৃতি বদলে দেয়া, ঐতিহ্যের ধারা পাল্টে দেয়া, জাতিগত পরিবর্তন করা, এগুলো আসলে সংস্কৃতির বদল।
তিনি বলেন, হ্যাঁ গণহত্যা একটা ‘টেকনিক্যাল ওয়ার্ড’। তবে আমি যা বর্ণনা করেছি, তা আসলে গণহত্যাই। কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন ২০১৫ সালে জানায়, আদিবাসী শিশুদের জোর করে তাদের পরিবার, বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। আবাসিক স্কুলে তাদের ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ সংঘঠিত হয়েছিল।
১৮ শতকের শেষ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, কানাডায় অন্তত ১৩৯টি স্কুল ছিল গির্জার নিয়ন্ত্রণে। প্রায় দেড় লাখ আদিবাসী শিশুকে এই স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছিল সরকার। নিজেদের পরিবার, ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে শিশুদের মাসের পর মাস, এমনকি কয়েক বছর দূরে রাখা হতো। যৌন নির্যাতন এবং শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগও রয়েছে গির্জার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। সেই সময় হাজার হাজার শিশু অপুষ্টি, অবহেলাজনিত কারণ এবং রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
তবে কানাডা সফরের সময় ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি পোপ। পরিবর্তে স্কুলগুলোতে ‘সাংস্কৃতিক বিনাশ’-এর জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন।
আবিষ্কারের মতবাদ বাতিল :
আদিবাসীরা আবিষ্কারের মতবাদ তৈরি করে, পোপের এমন আদেশনামা বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। পোপ প্রত্যেক সফরেই এ আহবান আরো জোড়ালো হচ্ছে। যুক্তি দিয়ে বলা হচ্ছে যে, পোপের আদেশনামা বা নির্দেশ আদিবাসীদের বিরুদ্ধে গণহত্যার মূল কারণ এবং আবাসিক স্কুল ব্যবস্থার মতো আত্তীকরণ নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কানাডার ভিত্তি স্থাপন করেছে।
আবিষ্কারের মতবাদের উপর একটি বিবৃতি জারি করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে পোপ ফ্রান্সিস সরাসরি এর উত্তর দেননি। কিন্তু উপনিবেশের মতবাদ হিসাবে এটি সম্পর্কে কথা বলেছেন।
“এটা সত্য, এটা খারাপ। এটা অন্যায্য।
আজও এটা ব্যবহার করা হচ্ছে,” তিনি বলেন। পোপ বলেন, আমরাই সেরা এবং আদিবাসিরা তুচ্ছ, এই মানসিকতা এখনও রয়েছে। তাই আমাদের কাজ করতে হবে। যা করা হয়েছিল তা খারাপ ছিল, কিন্তু সচেতনতার সাথে যে আজও একই উপনিবেশবাদ বিদ্যমান, বলেন ফ্রান্সিস।”
অবসরের ইঙ্গিত :
পোপ ফ্রান্সিস ক্যানাডা সফরকে তার ভগ্নস্বাস্থ্যের পরীক্ষা হিসাবেও দেখেছেন। রোমে ফেরার পথে তিনি স্বীকার করেন এভাবে আর সফর করতে পারবেন না। ৮৫ বছর বয়সি পোপ হাঁটুর লিগামেন্টের সমস্যায় ভুগছেন। সফরের বেশিরভাগ সময় হুইলচেয়ার ব্যবহার করেছেন তিনি। ওয়াকারের সাহায্যও লেগেছে। যদিও আগে অবসর নেয়ার কথা বলেননি পোপ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পদত্যাগ করতে চাওয়ার মধ্যে কোনো ভুল নেই।
তার কথায়, ‘‘এটি অদ্ভুত কোনো ঘটনা নয়। কোনো বিপর্যয় নয়। পোপ বদল করা যায়। আমি মনে করি এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে গির্জার সেবা করার জন্য আমাকে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। এর ইতিবাচক দিকটাও ভাবতে হবে।” এই বছরের শুরুতে পোপ ফ্রান্সিসের ডান হাঁটুর লিগামেন্টে স্ট্রেইন বসানো হয়। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আফ্রিকায় একটি সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি যেতে পারেননি। সিবিসি