আহসান রাজীব বুলবুল, কানাডা : প্রবাসীদের ঈদ আছে, তবে দেশে সবাইকে নিয়ে ঈদ উদ্যাপনের মতো আনন্দ সেখানে নেই। বরং প্রিয়জন ছাড়া ঈদের সময় এক ধরনের বিষাদ কাজ করে মনে। ইচ্ছে করলেই বাস-ট্রেনের টিকিট কেটে বাড়ি ফেরা যায় না। দেখা হয় না পরিবার-পরিজনের সাথে।
ক্যালগেরি, অটোয়া, টরেন্টো, মনট্রিলসহ কানাডাজুড়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঈদ উদ্যাপন করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এবারের ঈদের দিন কর্মদিবস হওয়ায় প্রবাসীরা খুব ভোরে নতুন পোশাক পরে আগেভাগে বের হয়ে পড়েন ঈদের নামাজ আদায় করতে। এরপর শুরু হয় সারাদিনের কর্ম দিবস। ফাঁকে ফাঁকে দেশে প্রিয়জনদের সাথে মুঠোফোনে চলে শুভেচ্ছা বিনিময়।
সারাদিনের কাজ শেষে যান্ত্রিকতাময় প্রবাস জীবনে সন্ধ্যায় প্রবাসী বাঙালিরা পরিবার নিয়ে মিলিত হয় একে অপরের সাথে, শ্রদ্ধা ভালবাসা আর সহমর্মিতায় পরিণত হয় মিলনমেলার। সৌহার্দ্য পূর্ণ পরিবেশে সবাই একত্রিত হয়ে মেতে ওঠেন নানা গল্প আর আড্ডায়।
আড্ডায় ঈদ আনন্দের সাথে উঠে আসে দেশের ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচারণ। পাশাপাশি চলে ঈদ উপলক্ষ্যে নানা সুস্বাদু খাবার। দেশীয় বিরিয়ানি, পোলাও, কোর্মা, মাংসের চপ, রোস্ট, জর্দা আর গৃহবধুদের নিজ হাতের তৈরি দইসহ নানামাত্রিক মজাদার খাবার।
বিশেষ এই দিনে প্রতিটি মুহূর্তে মনে পড়ে দেশের স্মৃতি, চেনা মুখগুলোর না দেখতে পারার কষ্ট। অনেকেই ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দেশের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আলাপচারিতায়। এই আলাপে কারো কারো নয়ন ভেসে আসে জ্বলে। সেই সঙ্গে থাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে দেশে একসাথে ঈদ না করতে পারার আক্ষেপও।
কানাডার টরন্টোর অ্যাকশন হোন্ডার সেলস ব্যবস্থাপক আজগর আলী তালুকদার বলেন, সবই আছে শুধু সময়টাই নেই। ঈদের দিন সময় বের করে বাংলাদেশের আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবদের সাথে ফোনে কথা হয়। শুধু এতটুকুই। সময় বড়ই নিষ্ঠুর, ইচ্ছে করলেই সব কিছু হয় না। তবু প্রবাসের ঈদ পরিবার পরিজন নিয়ে উপভোগ করি আনন্দ করি।
ক্যালগেরির বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সোহাগ হাসান বলেন, বাংলাদেশের মতো আনন্দ করে এখানে ঈদ হয় না। প্রবাসে আমরা প্রবাসী বাঙালিরা একে অপরের বাড়িতে যাই, শুভেচ্ছা বিনিময় করি।
ঈদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বিশিষ্ট কলামিস্ট উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, খুব মিস করি শৈশবের সেই আনন্দের ঈদকে। সেই দিন, সময় আর কখনোই ফিরে পাওয়ার নয়। ব্যস্ততাময় এই প্রবাস জীবনে পরিবার আর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে যদিও ঈদ করি, কিন্তু সেই সময়ের ঈদ এখন কেবলই স্মৃতি।
নৃত্যশিল্পী ও নাট্য কর্মী ইসলাম বলেন, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য রেখেই ইদ এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। দেশে বাবা-মাসহ সবাইকে খুব মিস্ করছি।
আভরণ ফ্যাশন এবং জুয়েলারি ডিজাইনার তাসমিয়া ইমদাদ বলেন, ঈদ উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশিরা যেন কানাডায় নিজেদের ভিন্নভাবে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছে।
বারাকা এপায়ারেলের স্বত্বাধিকারী আরিফা রব্বানী বলেন, নতুন প্রজন্মের অনেকেই আমাদের সময়কার সেই ঈদের আনন্দ বুঝতেই পারবে না। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
প্রবাসী বাঙালিদের মন কেবলই ছুটে যায় বাড়ির আঙিনায়, খুঁজে ফেরে হাসিমাখা মমতাময়ী মা-বাবা আর স্বজনদের। না দেখার, না পাওয়ার স্বজন হারানোর অব্যক্ত ব্যথা আর বিষাদ বুকে চেপেই কাটাতে হয় প্রবাসীদের ঈদ। তারপর ও স্বজনরা ভালো থাকুক, এমনটাই প্রত্যাশা কানাডার প্রবাসী বাঙালিদের।