বিনোদন ডেস্ক : বাইশ গজে যারা ব্যাটিং-বোলিং করেন বা একসময় করেছেন তাদের সঙ্গে টিভি পর্দায় আড্ডা দিয়ে পরিচিত শ্রাবণ্য তৌহিদা। ক্রিকেট অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে তার দারুণ জনপ্রিয়তা আছে। পাশাপাশি তিনি একজন চিকিত্সক। করোনাভাইরাস মহামারিতে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে লড়ে যাচ্ছেন এই তারকা। “লেট’স টক উইথ বাংলা ট্রিবিউন” অনুষ্ঠানে ভাগাভাগি করেছেন সেই অভিজ্ঞতা।
শ্রাবণ্য বলেন, ‘বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। এমন পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় আমরা চিকিত্সকরা শুরুর দিকে হিমশিম খেয়েছি। তখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতি মুহূর্তে মনে হতো আমাদের জন্য মৃত্যুফাঁদ অপেক্ষা করছে। কোনও রোগীর সংস্পর্শে গেলেই ভয় লেগেছে এটা ভেবে যে, তিনি করোনাভাইরাস বহন করছেন কিনা। বাসার কথাও চিন্তা করতে হয়। আমি যদি সংক্রমিত হই, আমার পরিবারও ঝুঁকিতে পড়বে। যদিও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি। প্রতিদিনের এই যুদ্ধ আমরা করে যাচ্ছি। চিকিত্সক যখন হয়েছি, মানবসেবায় নিজেকে সঁপে দিতে হবেই। যেকোনও অবস্থায় আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই, চিকিত্সা দিয়ে যাই।’
শুরুর দিকে প্রতিদিনই হাসপাতালে ছুটতে হতো শ্রাবণ্যকে। পরে রোস্টার ডিউটি পেয়েছেন। এখন একসঙ্গে সব চিকিত্সককে হাসপাতালে না ডেকে কয়েকজনকে আলাদা রাখা হচ্ছে। ফলে রোস্টারে ডিউটি থাকলেই কেবল ঢামেকে যাচ্ছেন তিনি।
গত চার মাসে বাইরে কোনও কাজ করেননি শ্রাবণ্য, ঘরে বসে দুই-একটা লাইভ অনুষ্ঠান ছাড়া। গৃহকর্মী ঘরে আসার অনুমতি না থাকায় নিজের কাজ সব নিজেকে করতে হতো। বিশেষ করে দিনভর হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর ঘরে ফিরে সব সামাল দেওয়া কঠিন ছিল।
কপাল ভালো, শ্রাবণ্য রান্না খুব ভালো পারেন। এটা তার প্যাশন, ‘কখনও মন খারাপ থাকলে রান্না করার পর আমার মন ভালো হয়ে যায়। আমি সব ধরনের রান্না পারি। ছোটবেলা থেকে মা-বোনকে রান্না নিয়ে নিরীক্ষা করতে দেখেছি। রান্নার ব্যাপারটা আমাদের পরিবারে ছিল অন্যরকম। একটা উত্সব আমেজ থাকতো। ঐতিহ্য হিসেবে সেটা পেয়েছি। রান্না আমি শিখিনি। বাবা বলতেন, আমি নাকি শুরু করলেই পারবো! আমার রান্না শেখা লাগবে না। পরে সেটাই হয়েছে।’
মাঠে ও হাসপাতালে শ্রাবণ্য
এ মাস থেকে আবারও টিভি চ্যানেলে বসে লাইভ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার কাজে ফিরেছেন শ্রাবণ্য। তবে অতিথিরা বাসা থেকে সংযুক্ত হন। ভক্তদের কথা ভেবে ঈদুল আজহায় একটি নাটকে কাজ করার ইচ্ছে আছে তার। কাজে ফেরা প্রসঙ্গে তার যুক্তি, ‘এখন চারদিকে যেভাবে করোনা ছড়িয়েছে তাতে ঘরে বসে যে নিরাপদ থাকা যাবে সেই নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া আমি তো হাসপাতালে যাই। সেজন্য ভেবেছি এখন আমার ভালোলাগার জায়গায় (উপস্থাপনা) ফেরা দরকার।’
অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে শুক্রবার (১০ জুলাই) “লেট’স টক উইথ বাংলা ট্রিবিউন” উন্মুক্ত হয়েছে। সাংবাদিক জনি হকের সঞ্চালনায় এই আয়োজনে টোয়েন্টি-টোয়েন্টি তথা র্যাপিড ফায়ারে মজার মজার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রাবণ্য তৌহিদা। এর মধ্যে ক্রিকেট নিয়েই ছিল বেশি।
র্যাপিড ফায়ারে শ্রাবণ্যর কাছে প্রশ্ন ছিল, সরাসরি সম্প্রচার করা হয় এমন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে শেখা কোন বিষয়টি ব্যক্তিজীবনে কাজে লেগেছে? তার উত্তর, ‘সময়ানুবর্তিতা। লাইভ যেহেতু করি তাই একদমই দেরি করার সুযোগ নেই। মনে পড়ে, একটি লাইভ অনুষ্ঠানে ঢুকতে সময়মতো পৌঁছাতে দৌড়েছিলাম। তখন আমি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা, মুখে মেকআপ, হাতে উঁচু হিল। বুঝুন অবস্থা! যেভাবেই হোক সময় অনুযায়ী স্টুডিওতে থাকতেই হয় আমাকে। সময়ানুবর্তিতা সব কাজের ক্ষেত্রেই দরকার। জীবনের প্রতিটি জায়গায় সময় মেনে চললে কোনও কিছুতে হতাশ হবেন না বা হেরে যাবেন না।’
শচীন টেন্ডুলকারকে নিয়ে শ্রাবণ্যর আক্ষেপ!
শ্রাবণ্যকে বলা যায় অলরাউন্ডার! উপস্থাপনা তো আছেই, বেশ কয়েকটি নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে দেখা গেছে তাকে। এসবের সঙ্গে সংসার আর সন্তান সামলানো। সব মিলিয়ে তিনি যেন সুপারওম্যান! তার ছেলে শুদ্ধর বয়স আগামী নভেম্বরে তিন বছর হবে। তার ব্যাপারে মজার মজার কথা শোনালেন শ্রাবণ্য, ‘সে খুব চঞ্চল আর দুষ্টু! তাকে একমুহূর্ত স্থির রাখা যায় না। গল্প করে, অভিনয় দেখিয়ে খাওয়াতে হয়। তাকে সামলাতেই দিন চলে যায় আমার। লকডাউনে শুদ্ধকে নিয়ে জুনিয়র হরলিক্সের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছি। ঘরে বসেই শুটিং করেছি আমরা। তার অভিব্যক্তি দর্শকদের পছন্দ হয়েছে। তাকে দিয়ে কাজটা করাতে আমার খবর হয়ে গেছে বলতে পারেন। শুদ্ধ আমার মতোই হয়েছে, মায়ের কাছে শুনেছি— ছোটবেলায় আমিও নাকি এমন দুষ্টু আর চঞ্চল ছিলাম।’
শ্রাবণ্যর ছোটবেলা কেটেছে রংপুর শহরের কাছের কুড়িগ্রামে। তখন ক্রিকেট খেলতেন উইকেট কিপার হিসেবে। ছোটবেলায় পাইলট হতে চেয়েছিলেন তিনি। তার ইচ্ছে ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বের হওয়ার, ‘এটা আমার স্বপ্ন। বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গেলেই চিকিৎসা পেশা থেকে ছুটি নিয়ে একগাদা বই নিয়ে ঘুরতে চলে যাবো। প্রথমে যেতে চাই ইউরোপে।’