অনলাইন ডেস্ক : জীবনের সব সঞ্চয় বিনিয়োগ করে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি করলেও এখন ভালো নেই বাড়িওয়ালারা। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেক বাড়ি ফাঁকা পড়ে আছে। এতে করে ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছে অনেক বাড়ির মালিক। অনেকের আয়ের মূল উৎস বাড়িভাড়া তারাও আছেন বেকায়দায়। ডা. শামস পেশায় চিকিৎসক। অনেক কষ্টে মিরপুরে পৈতৃক জমিতে তিনতলা বাড়ি করেছেন। বাড়িভাড়া যা পেতেন তার পুরোটাই ব্যাংক ঋণের কিস্তি জমা দিতেন। গত তিনমাস ধরে তার বাড়ির অর্ধেক খালি পড়ে আছে।
ডা. শামস্ বলেন, আমার যা পুঁজি ছিল সবটাই বাড়ির কাজে লাগিয়েছি। এমনকি বাড়ি করতে গিয়ে আমার স্ত্রীর গহনা পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছি। তারপর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনতলা পর্যন্ত কাজ শেষ করেছি বহু কষ্টে। যা ভাড়া পেতাম তা দিয়ে ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতাম। গত দুইমাস ধরে আমার বাড়ির ছয় ইউনিটের মধ্যে চারটি ইউনিটই খালি পড়ে আছে। কেউ ভাড়া নিতেও আসছে না । বাসা ভাড়া না হলে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করাও কঠিন হবে। বাড়ি করাই এখন আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নুরজাহান বেগম দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার। চার বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। দুই ছেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। বাড়ি ভাড়াই তার একমাত্র আয়ের উৎস। নুরজাহান বেগম বলেন, বাড়িভাড়া দিয়েই আমার সংসার চলে। আমার স্বামী বহু কষ্টে ছয়তলা বাড়ি করে গেছেন। এই ভাড়াই আমাদের একমাত্র আয়ের উৎস। বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়েই ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ চালাই। করোনা শুরুর পর থেকেই বাড়ি খালি হওয়া শুরু হয়ে গেছে। এখন ছেলেদের পড়ার খরচ দিবো কোত্থেকে সংসারই বা চলবে কিভাবে। এদিকে ভাড়াটিয়া না থাকলেও তো গ্যাস, পানি, ইলেক্ট্রিক বিল দিতেই হবে। তেজগাঁও এলাকায় নিজের একতলা টিনশেডের বাড়ি আছে রত্না গোমেজের। তিনি নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে একটি এপার্টমেন্টের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। রত্না গোমেজ বলেন, আমি নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে প্রায় দশবছর ধরে এপার্টমেন্টে ভাড়া থাকি। কিন্তু এখন আর এখানে ভাড়া থাকতে পারছিনা। কারণ আমার নিজের বাড়ি পুরোটাই খালি পড়ে আছে। ওখান থেকে ভাড়া এনেই আমি ফ্ল্যাটের ভাড়া দিতাম। আমার পক্ষে আর ভাড়া দেয়া সম্ভব না হওয়ায় আমাকেই টিনশেডের বাড়িতে ফিরে যেতে হচ্ছে। বাচ্চারা যেতে চায়না। কিন্ত কি করবো থাকার উপায় তো নেই। করোনা আমাদের জীবনটাকে পাল্টে দিয়েছে।