অনলাইন ডেস্ক : শিশুরা করোনা ভাইরাসে অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত হলেও বলা হচ্ছে শিশুরা এর নিরব শিকার। দরিদ্র পরিবারের শিশুরা ক্ষুধার জ্বালায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সংস্পর্শে আসছে। সবমিলিয়ে ক্ষুধা, অপুষ্টি, শিশুশ্রমের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মনে নিশ্চিতভাবেই দীর্ঘমেয়াদি একটা ট্রমা তৈরি করেছে এই করোনা মহামারি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু শঙ্কার আবহ শিশুর মনোজগতের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই শিশুরা এমনিতেই মানসিক চাপে ভুগছে। স্কুল নেই, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা নেই, খেলা নেই, ঘরের চার দেয়ালেবন্দি। দরিদ্র পরিবারগুলোতে এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে পরিবারে খাবার নেই, কাজ না থাকায় উপার্জন নেই। যে কারণে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে কিশোর বয়সিরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। কিশোরী বয়সি মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হবে, এ নিয়ে তাদের মনে সর্বক্ষণ একটা উত্কণ্ঠা কাজ করছে। পরিবারের ভাবনা, যেহেতু স্কুলে যেতে পারছে না, তাই কিশোরী মেয়ের বিয়ে এবং ছেলে শিশুকে উপার্জনের পথে নামিয়ে দেওয়া। এতে শিশুদের পাচারের সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে।
স্কুল শিক্ষক মাহবুবা আক্তার বলেন, বড় শহরে কিছু স্কুল অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও গ্রামের শিশুরা তা থেকে বঞ্চিত। সরকারি টেলিভিশনে পাঠদান অনুষ্ঠান হলেও অনেকে তা জানেই না।
তিনি আরো বলেন, এতদিন স্কুল বন্ধ থাকায় সেশনজট তৈরি হচ্ছে। স্কুল যখন শুরু হবে, তখন বাড়িতে যাদের পড়াশোনা হয়নি, সেই শিশুরা পড়া নিয়ে হিমশিম খাবে। তাদের ওপর চাপ তৈরি হবে। ফলে একপর্যায়ে তারা স্কুল থেকে ঝরে পড়বে।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা. ইশরাত শারমিন রহমান বলেন, এই মহামারিতে চারিদিকে শুধু শঙ্কার আবহ, এটা শিশুর মনোজগতের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। শিশুরা বুঝতে পারে না করোনা ভাইরাস কি, এর ক্ষতিটা কি, কেন তাদের সারাক্ষণ ঘরেই থাকতে হচ্ছে। হঠাত্ করে তার স্বাভাবিক রুটিনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। সে স্কুলে যেতে পারছে না, বাইরে খেলতে যেতে পারছে না। তাদের আবেগ ও আচরণের মধ্যে একটা পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি।
ঢাকার শিশু হাসপাতালের ডেভেলপমেন্টাল পেডিয়াট্রিশিয়ান ডা. রিয়াজ মোবারক বলছেন, পরিবারে খাদ্য সংকটের কারণে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগবে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির ওপর পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যদের প্রভাব পড়বে। তিনি আরো বলেন, অনেকেরই বেতন বন্ধ হয়ে গেছে বা কমে গেছে, চাকরি চলে গেছে। এসব ঘরে তো খাবার ঠিকমতো আসছে না। শিশুর যে সুষম পুষ্টি সেটা কিন্তু হচ্ছে না। তিনি বলেন, ঘরে বসে থেকে শিশু একাকীত্বে ভুগছে। শিশুর বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের আবদ্ধ অবস্থা শিশুর সব ধরনের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে।
ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা শাবনাজ জাহেরিন বলছেন, ক্ষুধা, অপুষ্টি ও একাকীত্ব ছাড়াও শিশুরা ঝুঁকির মুখে পড়বে আরো নানাভাবে। বিশেষজ্ঞরা এটিকে বলছেন ‘সেকেন্ডারি এফেক্ট’। দীর্ঘ লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকার কারণে মন্দা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়বে। ফলে বাড়বে শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে ও পাচার।