অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসের মহামারিতে ইউরোপীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে এখন সর্বাধিক মৃতের দেশ যুক্তরাজ্য। আর এই দেশটিতে রয়েছে সাত লক্ষাধিক ব্রিটিশ বাংলাদেশি। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল স্টাটিসটিকস (ওএনএস) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই মহামারিতে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যদের মৃত্যুর হার চার গুণ বেশি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই কমিউনিটির ১৫৭ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এমন অবস্থায় উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা নিয়ে সময় কাটছে কমিউনিটির সদস্যদের।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের মহামারিতে দুই লাখ ১২ হাজার ৬২৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩১ হাজার ৩১৫ জনের।
ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও লন্ডনের বর্ষীয়ান কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের লকডাউন শিথিল করার কথা শোনা গেলেও তা আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করার কথা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘নথিভুক্তির বাইরে থাকা প্রায় বিশ হাজার মানুষ লকডাউনে বেকার হয়ে অসহনীয় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব সহায়তার চেষ্টা করছি। অনেক বাংলাদেশি ঘরে মারা যাচ্ছেন। তাদের দাফনের ব্যাবস্থা করতে হচ্ছে।’
লন্ডনের নিউহাম কাউন্সিলের ডেপুটি ক্যাবিনেট মেম্বার মুজিবুর রহমান জসিম বলেন, ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ায় কাউন্সিলর হিসেবে ঘরে থেকেই অফিস করছি। সময় কাটছে বাগান করে আর পোষা প্রাণীদের দেখাশোনায়।’ তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কমিউনিটির বেশিরভাগ সদস্যই ঘরে থাকছেন। তবে কেউ কেউ লকডাউন অমান্য করে নানা ছুতোয় মুদি দোকান কিংবা রাস্তাঘাটে ভিড় করছেন।
সলিসিটর ও লেখক বিপ্লব কুমার পোদ্দার জানান, ব্রিটেনে লকডাউন ঘোষনার পর থেকে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরেই থাকছেন। লেখালেখি আর পড়াশুনায় সময় কাটছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না তিনি।
দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম বলেন, লকডাউন বলতে আমরা ইতালি বা ফ্রান্সে যেরকম কড়াকড়ি দেখেছি বৃটেনে তার ছিটেফোঁটাও নেই। এখানে ঘরে থাকতে বলা হলেও মানুষকে বাধ্য করতে আইন প্রয়োগ করা হয়নি। একদিকে লকডাউন ঘোষণা করতে সরকারের গড়িমসি অন্যদিকে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট খোলা রাখায় জনগনের অবাধ চলাফেরায় মৃত্যুর সংখ্যা তালিকায় বিশ্বে যুক্তরাজ্য এখন দ্বিতীয় এবং ইউরোপে সবার উপরে। তিনি বলেনম ‘একজন ফ্রন্টলাইন কর্মী হিসেবে কাজের জন্য আমাকে বাইরে যেতে হয়েছে। যদিও যাওয়া বা না যাওয়া ছিল আমার ইচ্ছা। তারপরও ভেবে দেখেছি আমি একজন কাজে গেলে দেশ বিদেশ মিলিয়ে অন্তত ৩০ জন মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হবে না। সে কারনে ঝুঁকি নিয়েও কাজে যাচ্ছি।’