অনলাইন ডেস্ক : করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই এই অণুজীবটি তার গতিপ্রকৃতি, চিকিৎসার টিকা, পার্শ্ব বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া, ইত্যাদি নিয়ে মানুষের মনে নানা কৌতূহল ও সন্দেহের উদ্রেক করেছে। অনেকেই বিভিন্নভাবে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ এই ভাইরাসটি পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত আসা অণুজীবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছোঁয়াচে এবং এর কোনো চিকিৎসাপদ্ধতিও জানা ছিল না।
নানান কৌতুহলের মধ্যে কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক সোমবার জানান, করোনার ভ্যাকসিন নিলে মাথাব্যথা, হালকা জ্বর, যেখানে টিকা দেওয়া হয়েছে সেখানে ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা বা কারও কারও বমিও হতে পারে। সিভিয়ার যে রিঅ্যাকশন হয় সেটা হচ্ছে শ্বাসকষ্ট হওয়া। সিভিয়ার জ্বরও হতে পারে। তবে এটা সাডেন শক।
তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার খুবই কম জানিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার দুই থেকে তিন শতাংশের মতো। তবে যেকোনো টিকার ক্ষেত্রেই মাইল্ড থেকে মডারেট বা সিভিয়ার সাইড ইফেক্ট হতে পারে। তবে বাংলাদেশে শিশু এবং বড়দেরও যে টিকা দেওয়া হয় সেখানে এনাফাইলিক্সিস বলে একটা কথা রয়েছে। এই এনাফাইলিক্সিস হচ্ছে একটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া—যেটা হতেই পারে। তবে এনাফাইলিক্সিসের আবার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। তবে একটা জিনিস আমরা বলবো, যারা আমাদের টিকা দেবে, টিকাদান কেন্দ্রে যারা থাকবেন, তাদের এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
তিনি জানান, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে আমাদের উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কেন্দ্রভিত্তিক মেডিক্যাল টিম থাকবে এবং কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত ওষুধ এনাফাইলিক্সিসের জন্য মজুত রাখা হবে। যাতে চিকিৎসক দল সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হতে পারে অথবা উপজেলা হাসপাতালে চলে আসে। উপজেলা হাসপাতালেও যদি এমন দুর্ঘটনা ঘটে সে বিষয়টি ভেবে সেখানে প্রস্তুতি নেওয়া থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, চলতি মাসের ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে করোনার টিকার প্রথম চালান আসবে। সব প্রস্তুতি শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনার টিকার প্রয়োগ হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বলেন, তবে আমার মনে হয় খুবই কম মানুষের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা থাকবে। সেটা যেকোনও ওষুধের ক্ষেত্রেই এ আশঙ্কা থাকে। যেহেতু নতুন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে তাই আমরা প্রাথমিকভাবেই পরিকল্পনার করেছি। মোবাইল টিম থাকবে, টিকাদান কেন্দ্রে বেসিক ও ওষুধ লাগলে ইমিডিয়েটলি ম্যানেজ করার জন্য সেগুলোও থাকবে।
সেব্রিনা বলেন, উপজেলা কেন্দ্রে যতদূর সম্ভব সে ব্যবস্থা রাখা হবে। এর ব্যাকআপ হিসেবে বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে কমিটি থাকবে, যারা এগুলো বিচার বিশ্লেষণ করবেন, এসব সমস্যা ভ্যাকসিনের কারণে হয়েছে নাকি তার আগে থেকেই থাকা অন্য অসুস্থতায় হয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে ২৫ লাখ নয়, ৫০ লাখ ডোজই প্রয়োগ করা হবে। আগে সিদ্ধান্ত ছিল, ৫০ লাখের ২৫ লাখ দেওয়া হবে কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫০ লাখই প্রয়োগ করা হবে। এ ছাড়া ৬৪ জেলার মধ্য ২৮টি জেলায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণাগার তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সাড়ে ৭ হাজার কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।