Home সাহিত্য কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং তাঁর কবিতার রূপায়ণ

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং তাঁর কবিতার রূপায়ণ

মুরশাদ সুবহানী : কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত চলনে-বলনে ছিলেন ইউরোপিয়ান। তিনি বাংলা ভাষায় কবিতা লিখবেন এ কথা ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের) যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি (কপোতাক্ষ নদ এলাকার) সম্ভ্রান্ত কায়স্থ এবং ধণাঢ্য পরিবারের সন্তান মধুসূদন দত্ত কখনও ভাবতেন না। পাশ্চাত্য সাহিত্যের এক দুর্নিবার মোহ-আকর্ষণ কিশোর কালেই তাঁর মন ও মননে প্রোথিত হয়েছিল। কবি মধুসূদন দত্ত (তখনও নামের আগে মাইকেল যুক্ত হয়নি); ১৮৪২ খ্রী: হিন্দু কলেজে পড়ার সময় এক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় ইংরেজিতে প্রবন্ধ লিখে স্বর্ণপদক লাভ করেন। তাঁর এই প্রবন্ধটি ছিল অবরুদ্ধ নারীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষায় শিক্ষিত করার বিষয়ে।

সাহিত্য-শিল্প ইতিহাসের এক আধুনিক বিবর্তনকালে কবি মধুসূদন দত্তের জন্ম। বাংলা সাহিত্য মধ্যযুগীয় সাহিত্য বলয় থেকে বেরিয়ে আধুনিক রূপায়ণের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। চর্যাপদের কবিতার বহমান স্রোত ক্ষীণ হয়ে আসছে। বাংলা ভাষা এক আধুনিক রূপ নিচ্ছে। মধ্যযুগীয় সাহিত্যকে কোনো কোনো সমালোচক-আলোচক অন্ধকারচ্ছন্ন বলেছেন। আমরা অন্ধকার বলবো না; ‘অন্ধকারের নিচেই তো আলো থাকে।’ তাদের ধারাকে অনুসরণ-অনুকরণ করেই কালক্রমে বাংলা সাহিত্য একটি আধুনিকরূপ পরিগ্রহ করেছে এবং এখনও করছে।

যেমন: চর্যাপদ কাব্য-সাহিত্যে প্রাচীনতম। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় কালে রচিত। এর রচনাকারীরা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ। শ্রী গৌতম বৌদ্ধের অনুসারী। এই ধর্মের গুঢ়তত্ব অর্থ এক সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে তাঁরা এগুলো রচনা করেছিলেন। এটি একটি ধর্মাবলম্বীর ভাষা হলেও এর সাহিত্যমূল্য আছে। সেই সময়ের সামাজিক অবস্থা ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। বাংলা সাধন সঙ্গীত শাখার শুরু চর্যাপদ থেকেই।
‘টালত মোর ঘর, নাহি পড়বেশী।
হাড়িত ভাত নাহি, নিতি আবেসী।
(চর্যাপদ কবিতা)

এর অর্থ হলো- টিলার উপর আমার ঘর। প্রতিবেশী নেই। হাড়িতে ভাত নেই; প্রতিদিন অতিথি। এ থেকে সেই সময়ের দরিদ্র পরিবারের একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। এ রকম অনেক কবিতা আছে চর্যাপদে লেখা। চর্চা পদের লেখা থেকে গান হয়েছে। আমরা চর্যাপদের অর্থ উদ্ধার করতে পেরেছি এবং সেখান থেকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের রূপায়ণে আসতে সাহায্য নিয়েছি। তাই এই সব সাহিত্যকে মূল্যহীন, অযৌক্তিক বলা ঠিক হবে না। কাব্য আলোচনা করার ক্ষেত্রে এ কথা প্রায়ই বলে থাকি- তা হালো, জ্ঞানের শিরোমণি মহামতি আরিস্টটলের কথা ‘‘কাব্য হলো অনুকরণ কলা।’’ এই অনুকরণ বলতে তিনি কোন কিছুকে নকল করতে বুঝাননি। আমাদের চারদিকে যা ঘটছে, যা দেখছি সেখান থেকে স্বীয় প্রতিভায় নতুন শিল্প সৃষ্টি করা। অধ্যায়নও এর একটি অংশ। চর্যাপদ এক ধর্ম বিশ্বাসীদের রচিত হলেও এখান থেকেও আমরা অনেক শিক্ষা লাভ করছি। মানুষকে এখন আর গুহাবাসী বলা হয় না। কিন্তু প্রাচীন গুহাবাসী মানুষ এক সময় আগুন জ্বালাতে শিখে ছিলেন। তাঁদের অনুকরণে আমরা কালক্রমে আগুন জ্বালাতে শিখেছি। কিন্তু মূল সূত্রটা ওই গুহাবাসী মানুষদের।

শ্রী রাজনারায়ণ দত্ত ও তাঁর প্রথমা স্ত্রী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান মধুসূদন দত্ত জন্মগতভাবেই প্রতিভাবান ছিলেন। তাঁর মধ্যে বিলেতে যাওয়া এবং ইংরেজি সাহিত্যে খ্যাতি লাভ করার প্রবল আকাক্সক্ষা ছিল।

১৮৪৩ সালে তিনি ধর্মান্তারিত হয়ে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মধুসূদন দত্তকে ত্যাজপুত্র হিসেবে ঘোষণা করেন। মধুসূদন দত্তের হিন্দু কলেজের শিক্ষা জীবন সমাপ্ত হয়ে যায়। সব কিছু হারিয়েও কবি মধুসূদন দত্ত তাঁর ইচ্ছার উপর অটল ছিলেন। প্রকাশ্যে তাহাকে ত্যাজ করলেও পিতা-মাতার অন্তর আত্মা সন্তানকে ত্যাগ করতে পারেনি। মধুসূদনের শিক্ষা ও তাঁর নিজ পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতার জন্য ব্যয়ভার চালাত তাঁরা পিছু পা হননি। ১৮৪৩ সালে বিশপস কলেজে নতুন করে কবি মধুসূদন দত্তের শিক্ষা জীবন শুরু হয়ে ১৮৪৭ সালে শেষ হয়।

কবি মধুসূদন দত্তের পিতা-মাতার মনে হয়তো এই আশার প্রদীপ জ্বলে ছিল তিনি এক সময় স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন করবেন।

কবি মধুসূদন দত্তের অন্তরে বঙ্গদেশ থাকলেও উচ্চাকাক্সক্ষার দুর্নিবার টান তাঁকে বিদেশগামী করে তোলে। ইতালীর বহু স্থান পরিভ্রমণ করেছেন কবি মনের একজন পরিব্রাজক হিসেবে। অনেক খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকদের সাথে তাঁর পরিচয় হয়েছে। তিনি নিজেও ইংরেজি ভাষায় কবিতা রচনা করেছেন। ইংরেজি সনেটকে নিজ প্রতিভায় আয়ত্ত করেছেন। পিতার অর্থানুক‚ল্য বন্ধ হওয়ায় কষ্টের জীবন পার করেছেন। এমন হয়েছে, তাঁর বন্ধুরা তাঁকে দেখলে ভিন্ন পথে চলে গেছেন; এই ভেবে কবি মধুসূদন দত্ত’র সাথে দেখা হলে তিনি আবার অর্থ কর্জ চাইতে পারেন।

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন বহু ভাষাবিদ, উচ্চাঙ্গের একজন কবি-সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক। আমরা তাঁকে কোন দিক হতে বিচার করবো। কোন দিকে তিনি ছিলেন না। সব দিকেই তাঁর বিচরণ। কিন্তু তাঁর অবস্থা ছিল ত্রিশংঙ্কু। দরিদ্র পরিবারের সন্তান না হয়েও স্বধর্ম ত্যাগ করায় তিনি দারুণ অর্থ কষ্টে নিপতিত হন। এর মধ্যেও নিজের প্রতিভা বিকাশে ছিলেন অবিচল-অটল। কোনো কোনো পন্ডিত তাঁকে নিয়ে লিখতে গিয়ে অনেকটা ছোট করে দেখেছেন। এটা তাঁদের উদারতার অভাব। আমরা ঐ সব অনুদার পন্ডিতদের মত প্রতিভার অধিকারী নই। তবে আমরা উদার। ধর্ম ত্যাগ করে তিনি ভুল করেছিলেন, নাকি ঠিক করেছিলেন সে বিচার করার ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। ধর্ম ত্যাগ করার কারণে তাঁকে হেয় করা অনুচিত। যাঁরা সেটা করেছেন, আমাদের বিশ্বাস তাদের ধর্ম বিশ্বাস যাই হোক না কেন? তাঁরা গোঁড়া। গোঁড়ামী আর ঈর্ষা দিয়ে কোন প্রভিবানকে হেয় করার চেষ্টা পরিহার করা দরকার। তা না হলে একজন মানুষের প্রতিভার সঠিক মূল্যায়ন হয় না বরং ওই সব পন্ডিতজনের লেখা যাঁরা পাঠ করেন, তাঁরা শুধু বিভ্রান্তই হন না; নিজেদের মধ্যে গোঁড়ামীকে লালন করেন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও কটাক্ষ করেছেন অনেকে। তাঁরা রবীন্দ্রনাথ হতে পারেননি। কবি মাইকেলকে যাঁরা কটাক্ষ করেছেন, তাঁরা পন্ডিত হতে পারেন; কিন্তু কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত হতে পারেননি। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত একজনই হয়েছেন।

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতার রূপায়নের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। তাঁর আগে বলে নেওয়া ভাল কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাল্য শিক্ষা শুরু হয় তাঁর মায়ের কাছেই। মাতা জাহ্নবী দেবীর মহা-ভারত, রামায়ণে দখল ছিল। তিনি তাঁকে এ বিষয়ে দক্ষতা দান করেন। সাগরদাঁড়ি গ্রামের নিকটবর্তী শেখপুরা মসজিদের বিদ্বান ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই ইমাম সাহেবের কাছে মধুসূদন দত্ত বাংলা, আরবী ও ফার্সি ভাষা অধ্যায়ন করেছেন। দেখা যায়; শিশু বয়সেই তিনি হিন্দু ধর্ম, বাংলা, আরবী ও ফারসী ভাষায় প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি স্বীয় প্রতিভার জোরে ল্যাতিন, ইতালিয়ান হিব্রæ, গ্রিক, তেলেগু, তামিল ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছেন। ইংরেজিতে তাঁর দক্ষতার কথা আমরা আগেই বলেছি। হিন্দু কলেজে অধ্যায়নকালে ইংরেজি ভাষায় প্রবন্ধ লিখে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন।

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তর কাব্য প্রতিভার মূল্যয়ান বিচার করা খুব সহ কাজ নয়। তিনি ইংরেজি এবং মাতৃভাষা বাংলায় কবিতা রচনা করে নব রূপায়ণে এক স্বর্ণযুগের সৃষ্টি করেছেন। ইংরেজি সাহিত্য থেকে সনেট গ্রহণ করে বাংলা ভাষায় এই ছন্দের পয়ার ভেঙ্গে নতুন ছন্দ দিয়েছেন। তিনি অমিত্রাক্ষর ছন্দের দাতা এবং বাংলা সনেটের জনক। মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষায় কবিতা রচনা করবেন এ কথা আগে কখনও ভাবতেন না। পরে অবশ্য তাঁকে সুজল-সুফলা, শ্যামল বর্ণ-এর অপরূপ রূপের বাংলা মায়ের সুমধুর বাংলা ভাষার কাছেই ফিরে আসতে হয়েছিল। তিনি ইউরোপিয়ান ভাব-ধারায় চলতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু জন্মগতভাবে ইউরোপিয়ান ছিলেন না। ছিলেন বাংলা মায়ের এক অসাধারণ প্রতিভাবান পুত্র। মা তাঁকে ডেকে ছিলেন। যে ক্রিয়া-করণের মধ্য দিয়ে বাংলা মায়ের কোলে ফিরে আসুন না কেন? এতো তাঁর মায়েরই ক্রিয়ার ইশারা।

উনবিংশ শতাব্দী বাংলাদেশের ইতিহাসে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন রূপ ধারণ করছে। মধ্যযুগীয় চিন্তা-চেতনা থেকে বের হয়ে বাংলা সাহিত্য এক আধুনিক সাহিত্য ধারা সূচনা শুরু হয়েছে। ইউরোপিয়ান কবিরাও আধুনিক সাহিত্যের যুগ সৃষ্টি করছেন সর্বত্র সাহিত্যে নব জাগরণের সূচনা শুরু হয়েছে। বঙ্গ মাতার সন্তনরাও বসে থাকেননি। বাংলা সাহিত্যকে আধুনিক রূপায়ণে নিয়ে যাওয়ার কাজে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
কবি মধুসূদন দত্তের ইংরেজি কবিতার সংখ্যা কম নয়। হিন্দু কলেজে অধ্যায়নের সময় তাঁর শিক্ষক মি: রিচার্ডসনের কাছে ইংরেজি সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ করেন। কবি বায়রন মধুসূদন দত্তের প্রিয় কবি হয়ে উঠলেন। কিশোর থেকে যৌবনের পদার্পণের মুহূর্তে কবি বায়রনের কবিতা মধুসূদন দত্তের অন্তরে প্রোথিত হয়। অনেক পন্ডিতজনের মতে, কবি বায়রনের কবিতা তাঁকে ইংরেজিতে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে তোলে । সেই সময় অগ্রগণ্য কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। কিন্তু কবি মধুসূদন দত্তের শেকসপীয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, বায়রন পড়া কবি মনের যে আবেদন তার কাছে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত-এর কবিতা কোন আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের লালিত স্বপ্ন ইংরেজি কবিতা রচনা করা; হয়তো তাঁর মনের মধ্যে আরও বড় আকাক্সক্ষা লুকায়িত ছিল। যে আকাক্সক্ষা তিনি ছিনিয়ে আনতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে বাঙালি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যা লাভ করে ছিলেন, নোবেল পুরষ্কার। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত না হলেও তিনি ছিলেন উচুঁ মানের একজন কবি-সাহিত্যিক এবং একটি যুগের সূচনা হয়েছিল তাঁর মাধ্যমে।

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ইংরেজি কবিতার রূপায়ণ নিয়ে আমাদের আলোচনা নয়; তারপরও এ বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করা আবশ্যক। তাঁর ইংরেজি কবিতার সবটার রচনার সময়কাল পাওয়া যায়নি। পন্ডিত-বিদগ্ধজনেরা তাঁর ইংরেজি কবিতার যে সময়কাল উদ্ধার করেছেন ইত:পূর্বে তা হলো : কবি মধুসূদন দত্ত কলকাতায় এবং শ্রীরামপুরে ১৮৪১-৪৮ সালের মধ্যে বহু সংখ্যক ইংরেজি কবিতা রচনা করেছেন। মাদ্রাজে অবস্থানকালে ১৮৪৮-৫৬ সালে এবং পরবর্তীকালে ইউরোপ ও কলকাতায় ১৮৫৬-৬৭ সালের মধ্যে।
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংরেজি কবিতা বিশেষ করে সনেট, প্রবন্ধ, অনুবাদকর্মে একজন সিদ্ধহস্তই ছিলেন না; এ বাক্যে বলা যায় তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার সুপার নোভা। তিনি অভিনয়ও করেছেন। ইংরেজি কবিতাতে তিনি খ্যাতি অর্জন করতে চেয়ে ছিলেন। যশখ্যাতি পেয়েছেন। আমরা এখানে তাঁর একটি ইংরেজি কবিতা উল্লেখ করলে সুধি পাঠক বুঝতে পারবেন, তাঁর ইংরেজি কবিতা ইউরোপের খ্যাতিমান কবিদের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না।

কবি মধুসূদন দত্ত প্রথম বয়সে অন্ধকার মেঘাচ্ছন্ন রাত্রির তারাকে অনুকরণ করে কবি মনের কল্পনায় রচিত করলেন কবিতা-
‘Shine on, sweet emblem of Hope’s lingering ray!
That while the soul’s bright sun-shine is o’er cast,
Gleams faintly thro’ the sable gloom, the last
To meet beneath Despair’s dark night away!
‘দূর আকাশ অন্ধকার মেঘাচ্ছন্ন, ঐ আকাশে নি:সঙ্গ তারাকে আশা ও আনান্দের এক প্রতীক বলে মনে হলো কবির কাছে।’

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের এই কাব্য-সাহিত্য প্রতিভা কোথা হতে আসল তা বিবেচনার দাবি রাখে। তাঁর জীবনী লেখকগণ অনেকেই এ নিয়ে হিমশিম খেয়েছেন। এক সূত্রে বলা হয়েছে, তাঁর এক পিতৃব্যের নাকি সামান্য কাব্য প্রতিভা ছিল। এই বক্তব্য জেনেটিক ধারাকে নির্দেশ করে বটে। আমরা বলি, তাঁর মাতা জাহ্নবী দেবীর রামায়ণ, মহা-ভারত শিশু মধুসূদন দত্তের মনে প্রোথিত হয়। তারপর ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই ইমাম সাহেবের কাছে মধুসূদন দত্ত বাংলা, আরবী ও ফার্সি ভাষা অধ্যায়ন করেছেন। পরবর্তী সময়ে হিন্দু কলেজে অধ্যায়নের সময় তাঁর শিক্ষক রিচার্ডসনের কাছে বায়রন, শেকসপিয়ার ইংরেজী কবিতা, নাটক-সাহিত্য তাঁকে সমৃদ্ধ করে তোলে। সর্বোপরি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নিজ গ্রাম যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি। যে গ্রামটিকে বেষ্টন করে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদ। সুজলা-সুফলা, শ্যামল বাংলার অপরূপ রূপ অনুকরণ এবং পরবর্তী সময়ে ইতালী-বিলাতে গমণ এবং নিজ অধ্যায়ন এই সবগুলো যুক্ত হয়ে তাঁকে এক উজ্জল নক্ষত্রসম কবিত্ব শক্তি দিয়েছে।

কবি মধুসূদন দত্তের প্রবল ইচ্ছা ছিল ইংরেজি কবিতা লিখে নিজের অবস্থানকে একটি বিশেষ স্থানে নিয়ে যাওয়ার। সেই কাব্য শক্তি তাঁর মধ্যে ছিল। ইউরোপের প্রবল টানে ইংরেজি কবিতা লেখার জন্যে তিনি নিজ ধর্মত্যাগ করলেন। যার কারণে ধণাঢ্য পরিবারের সন্তান মধুসূদন দত্তের পিতার হৃদয় এক ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। তিনি তাঁকে ত্যাজ্য করে এক পর্যায়ে অর্থ প্রদান বন্ধ করে দিলেন। ফলে ধনির পুত্র মধুসূদন দত্ত কর্পদক শূন্য হয়ে দরিদ্রসীমার নিচে চলে আসেন।

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিলাতে পাঁচ বছর ১৮৬২ থেকে ১৮৬৭ পযর্ন্ত ছিলেন। তাঁকে সহায়তা করবে এমন বন্ধুরা এক সময় দুর্ব্যবহার শুরু করে। অন্নকষ্ট, অর্থকষ্ট এবং মনকষ্ট তাঁকে ঘিরে এক মানসিক প্রবল যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই প্রতিভবান কবিকে সহায়তা করায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ব্যারিস্টারি পাসের সার্টিফিকেট লাভ করে নিজ বঙ্গভূমে ফিরে আসেন। এখানে আমাদের সামনে একটি প্রশ্ন আসে তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন কেন? (চলবে)

Exit mobile version