মুরশাদ সুবহানী : উজ্জীবনী মহাশক্তি নিয়ে যিনি নিজেই নিজেকে করেছেন স্বতন্ত্র সেই কবিকে কোন শব্দ চয়নে আলোচনা করবো ভাবছি। সমাজতান্ত্রিক চিন্তা চেতনায় সংগ্রামী একজন কবি পাবলো নেরুদা। তাঁকে নিয়ে বিদগ্ধজনেরা নানাভাবেই আলোচনা করেছেন। এই বিদগ্ধজনদের আলোচানার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের থেকে ভিন্নভাবে এই মহান কবিকে নিয়ে কিভাবে আলোচনা করা যাবে সেটাই মূল কথা। তিনি সেই সংগ্রামী কবি পরিশ্রমী শব্দ চয়নে সংগ্রামী কবিতায় নতুনত্ব দিয়ে কবি মনের অভিপ্রায়কে যেমন ব্যক্ত করেছেন, তেমনী উজ্জীবিত করেছেন সংগ্রামী চেতনাকে। চিলির একজন রেল শ্রমিকের সন্তান মহান কবি পাবলো নেরুদার জন্ম ১৯০৪ সালে। তিনি মারা যান ১৯৭৩ সালে। পাবলো নেরুদা সমাজতান্ত্রিক মন ও মননে সংগ্রামী চেতনার একজন কবি। যিনি বিশ্বময় নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। ‘পাবলো নেরুদার কবিতার শব্দ চয়নের মধ্যে ক্ষোভ, ক্রোধ রয়েছে।’ তাঁর কবি মনের চিন্তার গভীর প্রবাহমান স্রোত আমাদের উজ্জীবিত করে।
‘প্রশ্নপুস্তক’ কাব্যগ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক জনাব রায়হান রাইন। তাঁর ভূমিকার কিছু অংশ তুলে ধরতে হয়। তিনি ভবানীপ্রসাদ দত্তের অনুস্মৃতি থেকে অনূদিত কবি পাবলো নেরুদার বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন।’ পাবলো নেরুদা বলছেন, “আমার স্মৃতি জুড়ে আছে শুধু বৃষ্টি, বৃষ্টি আর বৃষ্টি। মেরু অঞ্চল থেকে, হর্ন অন্তরীপের আকাশ থেকে ফ্রন্টিয়ারে ঝেঁপে আসা প্রপাতের মতো সেই দারুণ দখিনা বৃষ্টি। এই ফ্রন্টিয়ারে, আমার দেশের বন্যা পশ্চিমে প্রথম চোখ মেলে তাকিয়ে চিনেছিলাম মাটি, কবিতা আর বৃষ্টি।”
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ওই বছরে অন্য নোবেল-বিজয়ীদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণটি তিনি শেষে করেছিলেন এই ভাবে, ‘আমরা আমাদের শোণিত ও তমসা দিয়েই তার (সাদা কাগজের) বুক ভরে তুলি; কবিতা তো লিখতে হয় শোণিত ও তমসা দিয়েই।”
সুপ্রিয় পাঠক, আমরা প্রশ্নপুস্তকের কবিতা নিয়ে এই লেখার শেষভাগে আলোকপাত করবো। আমার শুরু করছি তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থের কয়েকটি কবিতা দিয়ে। শ্রী অসীত সরকার তাঁর এই কবিতা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন।
এই অনুবাদ সাহিত্য আছে জন্যেই আমরা অন্য ভাষায় রচিত কবিতা পাঠ করতে পারছি। সেই দেশের সাহিত্য-শিল্পের সাথে পরিচিত হতে পারছি। এ নিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম হচ্ছি। অনুবাদ খুব সহজ কাজ নয়। আবার কোনো কোনো সময় ভিন্ন ভাষায় রচিত কোনো লেখকের লেখার মনের ভাবের সাথে পুরোপুরি তাঁর সেই মন-ভাবের সংযোগে কিছু দূরত্ব থাকতে পারে। তারপরও যারা পরিশ্রম করে সাহিত্যের অনুবাদ করেন, তাঁরা চেষ্টা করেন মূল লেখকের মন-চিন্তা, দর্শনের কাছাকাছি যাওয়ার। কবি পাবলো নেরুদার ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থ-এর ভূমিকায় ওয়ান্ট হুইটম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে; “তিনি মহান কবি, যিনি প্রতিটি শব্দে রক্ত ঝরাতে পারেন।’ পাবলো নেরুদা ঠিক সেই ধরণেরই সৈনিক –কবি, যিনি আজীবন মুখ চেয়ে মুমূর্ষু সমাজের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন।
নেরুদার সারা জীবনের সাহিত্যকৃতি জুড়ে রয়েছে সেই সব অগণন নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ। যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মোত্সর্গ করেছেন।”
কবি পাবলো নেরুদা শুধু সমাজতান্ত্রিক চিন্তার উপর ভর করে বিপ্লবী কবিতা লিখেছেন তা নয়। তিনি অনেক প্রেমের কবিতাও রচনা করেছেন। রাজনীতিক মানুষ শুধু সংগ্রাম-আন্দেলনকে বেশি প্রাধান্য দেন, একজন কবি সেটি করেন না। কারণ কবি মনে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি প্রেম-প্রকৃতি সাড়া দেয়। কবি পাবলো নেরুদা প্রেমের অনেক সুন্দর কবিতা লিখেছেন। অনেক কবিতার মধ্যে প্রেম এবং জীবনের চাহিদার কথা উচ্চারিত হয়েছে খুব সাবলিলভাবে। এখানে তিনি একজন সার্থক-সফল প্রেমের কবি।
কবি পাবলো নেরুদা কবিতার পাশাপাশি স্মৃতি কথা লিখেছেন। তাঁর উপলব্দির গভীরতা দিয়ে রচিত স্মৃতি কথায় তাঁর রাজনৈতিক দর্শন উঠে এসেছে। তাঁর স্মৃতি কথায় অনেকের কথা উল্লেখিত হয়েছে। যাঁরা সবাই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে সমাজ বিনির্মাণের নেতা ছিলেন।
আমাদের লেখার মূল বিষয় তাঁর স্মৃতি কথা নিয়ে নয়। কবি পাবলো নেরুদার কবিতা নিয়ে। তবুও তাঁর স্মৃতি কথার কিয়দংশ উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। চিলির এই সন্তান মহান কবি পাবলো নেরুদা স্মৃতি কথা এক বিস্তৃত আঙ্গিনা। এখানে আছেন- লরকা, আরাগ, পিকাসো, রিভেরা, মহাত্মা গান্ধী, নেহেরু, মাও সেতুং, ক্যাস্ট্রো, চে গুয়েভারা, আলেন্দর এবং বহু প্রতিভাবান সাহিত্যক ও রাজনৈতিক নেতারা। এ থেকে সুধি-প্রজ্ঞাবান পাঠক বুঝতে পারছেন, কবি পাবলো নেরুদাকে। আমরা আর কথা বাড়বো না। ফিরে যাচ্ছি কবি পাবলো নেরুদার কবিতার আঙ্গিনায়।
কবি পাবলো নেরুদা লিখলেন, “নারীর রমণীয় শরীর, সাদা পাহাড়, শুভ্র উরু,/আত্মদানের ভঙ্গিতে তুমি শুয়ে আছো, এ উর্বরা পৃথিবী।
আমার এ চাষাড়ে দেহ তোমাকে গভীরভাবে কর্ষণ করছে/ যাতে মাটির গহন থেকে লাফিয়ে উঠতে পারে শিশু/….।”
অন্ধকার নদীগর্ভে চিরদিনই বহমান শাশ্বত অনন্ত তৃষ্ণা,/ তারই পেছনে ত্রস্ত ধেয়ে আসে যত ক্লান্তি আর অন্তহীন ব্যথা।” (নারীর শরীর, পাবলো নেরুদার শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থ)
কবি পাবলো নেরুদার প্রেমমূলক এই কবিতায় জৈবিক চাহিদার কথা উচ্চারিত ভিন্নভাবে তাঁর এই নারী হলো পৃথিবীর উর্বর মাটি। যাকে চাষ করলে উঠে আসে শিশু। এই শিশু হলো ফসলের চারা। এখানেই তিনি পাবলো নেরুদা।
পাবলো নেরুদা কবি হিসেবে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। সাহিত্যের সাথে নিত্যদিন যোগাযোগ আছে, তাঁরা লরকার নাম শোনেনি এই রকম সাহিত্যিকদের সংখ্যা মনে করি নেহাতেই কম। বিখ্যাত স্প্যানিশ কবি লরকার পুরো নাম ফেদেরিকো গার্থিয়া লরকা। কবি লরকাকে ১৯৩৬ সালের আগষ্ট মাসে গ্রানাদায় গুলি করে হত্যা করে। এর জন্যে ফ্যাসিস্টদের দায়ী করা হয়। এই সময়কালে অনেক কবি-সাহিত্যককে হত্যা করা হয়। জীবদ্দশায় লড়াকু কবি লরকা পাবলো নেরুদা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘রুবেন দারিওর মৃত্যুর পর পাবলো নেরুদা হলেন, আমেরিকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কবি।’
কবি পাবলো নেরুদার আসল নাম রিকার্ডো এলীসার নেফতালি রিয়েস বাসোয়ালতো। বিশ্ব নন্দিত শিল্পী পাবলো পিকাসো এবং প্রখ্যাত চেক সাহিত্যিক জাঁ নেরুদা এই দুই জনের কাছ থেকেই তিনি নিজের নাম গ্রহণ করেন, ‘পাবলো নেরুদা’ এটি তাঁর ছদ্মনাম।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেন ১৯২৬ সালে। চিলির সরকারি কর্তৃপক্ষ মাত্র তেইশ বছর বয়সী প্রতিভাবান পাবলো নেরুদাকে রেঙ্গুনে রাষ্ট্রদূত করে প্রেরণ করেন। এই পদে অধিষ্ঠিত থাকার ফলে তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে ভারত বর্ষ, জাপান, চীন, জাভা, কলম্বো, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি।
কবি পাবলো নেরুদার সময়কাল গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছিল। এক ভয়ংকর-ভয়াবহ সময়। এই সময় মন জগতকে শান্ত রেখে সংগ্রামীদের সাহস দিতে কবিতা লেখা খুব সহজ কাজ নয়। যুক্তি দিয়ে নিজেকে বোঝা, পরিবেশকে উপলব্ধি করা আর জীবনের প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর হাতছানি এই পরিবেশের মধ্যে কবিতা রচনা করা তাও আবার নানাভাবে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে এটি খুব সহজ কাজ নয়। অত্যন্ত মেধাবী কবি পাবলো নেরুদা কবিতার মধ্যেও নিপীড়িত মানুষ, বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত হাড়-গোড় নিয়ে পড়ে থাকা মানুষের জন্য লড়ছেন কলম হাতে এবং একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে।
বার্লিন পুড়ছে। খনি শ্রমিকদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ১৯৩৬ সালে জুলাই মাসে স্পেনে আক্রমণ করা হলো।গৃহযুদ্ধের এই আগুনের প্রচন্ডতাপ পাবলো নেরুদাকেও স্পর্শ করলো। কবি পাবলো নেরুদা মুক্তিযোদ্ধাদের দলে যোগ দিলেন। ‘‘ফ্রাংকো আর ফ্যাসিস্টটদের বিরুদ্ধে স্পেনের জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের সেই অগ্নিময় দিনগুলোতে নেরুদা রচনা করলেন, তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘ প্রাণের স্পেন’(১৯৩৮)।’’
‘‘পাবলো নেরুদা ১৯৪০-১৯৪৩ সাল পর্যন্ত মেক্সিকোতে চিলির রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৫ সালে চিলির কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে সিনেটর নির্বাচিত হন।’’ খনি শ্রমিকদের সংগঠন গড়ে তোলেন একজন কবি ও রাজনৈতিকি নেতা নেরুদা।
তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো, তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হলো। পাবলো নেরুদা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলেন। তারপরও থেমে থাকেনি তাঁর কলম। তিনি পলাতক সময়ে তাঁর স্মৃতি কথায় লিখলেন, ‘পলাতক নামে দীর্ঘ কবিতা।
পাবলো নেরুদাকে বহুগুণগত বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায়। তিনি প্রেমের, মানবতার বিপ্লবের ,সামাজতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী একজন কবি। তিনি তাঁর দর্শনে সুন্দর পৃথিবীর জন্য এক লড়াকু সৈনিক রাজনৈতিক নেতা এবং কবি।
দক্ষিণ চিলির এক প্রত্যন্ত গ্রামের নাম ‘পাররাঙ্গল’ ।এখানেই পাবলো নেরুদার জন্ম। জন্মের মাত্র এক মাস পর তাঁর মা দোনা রোসা বাসোআলতো মারা যান। মাতৃহারা এই শিশু সন্তানকে নিয়ে পিতা রেলের ইঞ্জিন চালক দোন হোসে দেল কার্মেন রেইয়েসে মোরালেসার সাথে আর এক জীর্ণ গ্রাম তেমুকোতে চলে আসেন ।এই গ্রামে থাকা দরিদ্র পরিবারের সন্তান পাবলো নেরুদা শৈশবকালে তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা কবিতায় বর্ণনা করলেন : আমি বাস করছি তেমুকো,
আর আমার থাকার ঘরের বাতায়ন পথে / দুচোখ মেলে দেখি আমি কাদা আর কাদা…
আর এই কর্মমাক্ত পথে .. চলে যেতো কাঠের আচ্ছাদনে আবৃত ঠেলাগাড়িগুলো/কী তাদের আর্তনাদ ! এক ভয়াবহ যন্ত্রণা যেন তাদের ।।’
শৈশব মনেই জেগে ওঠে মানুষের কষ্টের আওয়াজ এই কবিতায়। কাদা পথে ঠেলাগাড়িওয়ালারা কত কষ্ট করে ঠেলে নিয়ে যায় গাড়ি। কবি পাবলো নেরুদার শৈশব মনে এই ছবি ধরা পড়ে।
নোবেল বিজয়ী কবি পাবলো নেরুদা এক অসাধারণ ,প্রজ্ঞাবান কবি, রাজনৈতিক নেতা এবং ক‚টনীতিক ছিলেন। তাঁর কবিতায় (যে গুলো বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে) খুব সাবলিলভাবে উঠে এসেছে সমাজ-জীবন-চিন্তা, প্রেম-ভালোবাসা, নিপীড়িত মানুষের কথা । কবি পাবলো নেরুদার ছদ্মনামই পড়ে আইনগত নামে পরিনত হয়। ১৯৭১ সালে পাবলো নেরুদাকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
নোবেল বিজয়ী কবি পাবলো নেরুদা’র শেষ কাব্যগ্রন্থ প্রশ্ন পুস্তকের কয়েকটি কবিতা নিয়ে আলোচনা করবো আমরা শুরুতেই বলেছিলাম। তাঁর প্রশ্নপুস্তক এবং অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ, স্মৃতিচারণ লেখা নিয়ে অনেক প্রজ্ঞাবান কবি-সাহিত্যিক অনুবাদ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায়,কবি শামসুর রাহমান,মাসুদুজ্জামান,বিকাশ গন চৌধুরী প্রমুখ। আমরা প্রশ্নপুস্তক কাব্যগ্রন্থটির কয়েকটি কবিতার উপর আলোকপাত করছি এই কাব্যগ্রন্থের অনুবাদ করেছেন, বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক ও সাহিত্যিক জনাব রায়হান রাইন । কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেছেন, ‘‘প্রশ্নপুস্তক ,আগাগোড়া প্রশ্ন দিয়ে গড়া । একটা গোটা কাব্যগ্রন্থ কেবলই প্রশ্নের সিরিজ! কেবল প্রশ্নবাক্যে সাজিয়ে কিভাবে রচিত হতে পারে একটা কাব্যগ্রন্থ ? লক্ষ্য করলে আমরা দেখব. প্রশ্নবোধক বাক্যের শরীরে এমন একটা পরিসর আছে যাতে এঁটে যেতে পারে বার্তাবহ বর্ণনা, অনুজ্ঞা এবং বিস্ময়ও।’’
আগেই বলে রাখা ভালো কবি পাবলো নেরুদার ‘প্রশ্নপুস্তক’ কাব্যগ্রন্থটি তাঁর পড়ন্ত বয়সে লেখা।
‘ আমায় বলো, গোলাপ কি নগ্ন ?
নাকি ওইটাই তার একমাত্র পোষাক?
এমন কিছু কি আছে দুনিয়ায়
দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা ট্রেনের চেয়ে যা বিষন্নতর?
এই কবিতায় কবি প্রশ্ন করেছেন, আমায় বলো, গোলাপ কি নগ্ন?
নাকি ওইটাই তার একমাত্র পোষাক?
কি অসাধারণ প্রশ্ন । সৌন্দর্যে বিকশিত ফুল গোলাপ সবার কাছে প্রিয় । এই গোলাপ প্রস্ফুটিত হওয়ার পর নগ্ন ? এই নগ্নতা অপবিত্র এ কথা বলা যায় কি ? গোলাপের সৌরভ আর সৌন্দর্য আমাদের মোহিত করে, মুগ্ধ করে। কবি পাবলো নেরুদা এই প্রশ্নকে সামনে এনে নিজেই প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন; ‘‘নাকি ওইটাই তার একমাত্র পোষাক? আমার বলতে পারি ; প্রস্ফুটিত গোলাপ নগ্ন নয় এটিই গোলাপের সৌন্দর্যের ভূষণ ।
কবি পাবলো নেরুদা প্রশ্নপুস্তক কাব্যগ্রন্থে অনেক কবিতা লিখেছেন,
তাঁর আরো একটি কবিতা-
‘অরণ্যের হলুদ রঙ কি?
গত বছরেরটাই?
আর অদম্য সমুদ্র-পাখিগুলোর একই কালো ঝাঁক
কি ওড়ে বার বার?
আর যেখানে স্থানের শেষ
সেটাই কি মৃত্যু নাকি অনন্ত?
বেষ্টনীর উপর কিসের ভার বেশী
বিষন্নতা নাকি স্মৃতি-সম্ভাররে?
(প্রশ্নপুস্তক ,পাবলো নেরুদা, পৃ: ৬৩)
প্রশ্ন বাক্যে রচনা করা এই কাব্যগ্রন্থের এই কবিতাটি কবি মনের এক গভীর দার্শনিক চিন্তা সামনে নিয়ে আসে। এই কবিতায় কবি পাবলো নেরুদার প্রশ্ন ‘আর যেখানে স্থানের শেষ
সেটাই কি মৃত্যু নাকি অনন্ত?
প্রশ্নের মধ্যে সেই চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, মৃত্যু আর অনন্তকে সামনে এনে। কবির প্রশ্ন চিন্তায় মৃত্যই কি শেষ নাকি এরপর আরো কোন জগত আছে, সেই জগত অনন্তকালের। এই চিন্তাকেই তিনি প্রশ্ন বাক্যে কবিতায় নিয়ে এসেছেন। এখানেই কবি পাবলো নেরুদা ।এই মহান কবি শুচি-শুভ্র-পবিত্র শব্দ দিয়ে লিখেছেন, কবিতা, স্মৃতিকথা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে দিয়েছেন, বক্তৃতা । যার সবই এক সৃষ্টির সম্ভার।মহান কবি পাবলো নেরুদার জন্ম: ১২ই জুলাই, ১৯০৪
নোবেল বিজয়ী কবি পাবলো নেরুদার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখক : (সাহিত্যের সেবক, অ্যাডভোকেট, জজকোর্ট, পাবনা ,বাংলাদেশ। ফ্লোরিডা, ইউএস প্রবাসী)
e-mail : murshadsubhani@gmail.com