অনলাইন ডেস্ক : গত ফেব্রুয়ারিতে কানাডায় ভ্যাকসিন বিরোধীদের ‘ফ্রিডম কনভয়’ প্রতিবাদ শুরুর আগে এর সংগঠকেরা টেক্সট ও ই-মেইল বার্তায় অটোয়া পুলিশের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করেছিল সে তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। বিক্ষোভের ঘটনায় দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় স্বাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে এসব তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। এসব বার্তায় পুলিশকে প্রতিবাদকারিদের কোন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে শহরে প্রবেশ করতে হবে, কোথায় পার্ক করতে হবে- এসব নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। কনভয় বিক্ষোভের একজন সংগঠক ও একজন অটোয়া পুলিশ অফিসারের মধ্যে টেক্সট বার্তা বিনিময়ে দেখা যায় যে, পুলিশ বিক্ষোভকারিদের কোথায় গাড়ি পার্কিং করতে হবে সে নির্দেশনা দিচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের এ ধরনের কর্মকান্ড ‘ভুল’ ছিল।
বিক্ষোভ চলাকালে হংকিং ডাউন টাউন অচল করার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় অন্টারিও সুপিরিয়র কোর্টে হলফ নামা দিয়েছেন কনভয় বিক্ষোভের সংগঠক চাড ইরোস। সেই হলফনামায় তিনি প্রকাশ করেছেন, হাজার হাজার মানুষ ও শত শত যানবাহন শহরের রাস্তা বন্ধ করার কয়েক দিন আগে থেকেই কীভাবে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে বিনিময় করা টেক্সট ও ই-মেইল বার্তাগুলো তিনি ওই হলফনামায় দাখিল করেন।
এতে দেখা যায়, বিক্ষোভ শুরুর আগে ২৫ জানুয়ারি অটোয়া পুলিশ কনস্টেবল ইসাবেল সাইর পিডকক টেক্সট বার্তায় চাড ইরোসকে একটি ‘ভ্রমণ পথের’ দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। বার্তায় ইসাবেল বলেন, ‘আগামীকাল সকালে আমি আপনার জন্য এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা পাঠাতে পারব।’ চাড ইরোস ওই বার্তার জবাবে উচ্ছাস প্রকাশ করে লেখেন, ‘আমি খুব খুশি, পুলিশ ও সংগঠকেরা একসাথে কাজ করতে পারে।’ এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে পাল্টা বার্তা ছিল ‘একদম সত্যি’।
হলফনামায় দু’জনের মধ্যে যোগাযোগের সব তথ্য দেয়া হয় নি। তবে ২৫ জানুয়ারি রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে আবার যোগাযোগ হয়। সে সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা বিক্ষোভের সংগঠকের কাছে তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান। এতে দেখা যায়, সাইর পিডকক বলছেন,‘আপনার কোন তথ্য গোপনে রেকর্ড করতে চাই না। কিন্তু আপনি যদি আমাদের সাথে কাজ করতে চান তাহলে আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে হবে। কখন আপনারা সবকিছু পাঠাচ্ছেন? জবাবে ইরোস লেখেন, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন। ওই তারিখে দু’জনের মধ্যে আর কোন তথ্য বিনিময় হয়েছিল কি না তা জানা যায় নি।
পরদিন সকালে সাইর পিডকক কভেন্ট্রি রোডের রেমন্ড চ্যাবট গ্রান্ট থনটন (আর সি জি টি) স্টেডিয়ামের পার্কিং এলাকা সম্পর্কে উরোসকে বলেন, ‘পূর্ব দিক থেকে আসা কনভয় বিক্ষোভকারিদের জন্য এলাকাটি পুলিশ কর্তৃক সুরক্ষিত আছে।’ তিনি আরো লেখেন, ‘পশ্চিমের কাফেলার পরিকল্পনাও প্রায় শেষ। আপনারা কাজ শুরু করতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, কভেন্ট্রি রোডের অবস্থান কর্মসূচী পরবর্তীতে প্রতিবাদকারিদের জন্য একটি শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। চার সপ্তাহের বিক্ষোভে এখান থেকে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থানকারিদের জন্য খাবার ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা সমন্বয় করা হয়েছিল। তবে এসব হলফনামার বিষয়ে পুলিশের পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, প্রতিবাদকারিদের সাথে পুলিশের যোগাযোগ থাকাটা অন্যায় কিছু নয়। ঘটনার গতি প্রকৃতিতে সম্পর্কের ধারণানেয়ার জন্য এ ধরনের যোগাযোগ হতেই পারে। ইউনিভার্সিটি অব অটোয়া ক্রিমিনোলজিস্ট মাইকেল কেম্পা বলেছেন, পুলিশের পক্ষে পরিকল্পিতভাবে প্রতিবাদকারিদের সাাথে যোগাযোগ একটি সাধারণ ঘটনা। তবে অটোয়া পুলিশ এসব ই-মেইল ও টেক্সট বার্তা সম্পর্কে এখনো কোন মন্তব্য করেনি। সূত্র : সিবিসি