অনলাইন ডেস্ক : করোনা ভাইরাসের ওষুধ ও প্লাজমা থেরাপি নিয়ে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। কোভিড-১৯-এর কোনো টিকা নেই, এখনো পর্যন্ত কোনো ওষুধও আবিষ্কার হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কোনো ওষুধের অনুমোদন দেয়নি। দেশে নানা ওষুধ প্রয়োগে রোগ উপশমের উপায় চিকিত্সকরা খুঁজলেও পরীক্ষামূলক ব্যবহারের বাইরে কোনো ওষুধ কিংবা প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি।

তবে কে শুনে কার কথা? দেশে বিভিন্ন ওষুধের প্রয়োগ চলছে। প্লাজমা থেরাপিও প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নেই কোনো সতর্ক বার্তা। কেউ বলছে সফল, কেউ বলছে না। এমন অবস্থায় মানুষ এখন কোন পথে হাঁটবে? শুধু বিভিন্ন দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে এই মর্মে একের পর এক ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক রোগী ফেসবুকে দেখে ওষুধ খাচ্ছেন, মজুত করেও রাখছেন।

চিকিত্সকরা যেসব ওষুধে সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন তা প্রচুর পরিমাণে কিনে বাড়িতে মজুত করে রাখছেন বহু মানুষ। সেই সুযোগে অনেক ওষুধের দাম বেড়ে গেছে। একপাতা প্যারাসিটামল এক্সট্রিমের মূল্য ২০ থেকে ৩০ টাকা। অথচ রাজধানীর অলিগলি ও গ্রামাঞ্চলে তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এসব ওষুধ কিনে বাড়িতে মজুত করার ব্যাপারে নিরুত্সাহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এর নানা ধরনের ঝুঁকি রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, কোনো ওষুধ চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত না। ওষুধ মজুত রাখাও ঠিক না। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, ধরুন শরীরে কিছু অর্গানিজম থাকে। আপনি বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেললেন বা দরকার না থাকলেও খেলেন, তখন সেই অর্গানিজম অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। নির্দিষ্ট সেই অ্যান্টিবায়োটিক, যেটা আপনি বেশি খেয়েছেন তখন সেটা কার্যকারিতা হারায়। আপনার যখন সত্যিই কোনো প্রদাহ তৈরি হবে, তখন সেই অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না অথবা আংশিক কাজ করবে। এজন্য অ্যান্টিবায়োটিক যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। আর ওষুধ দরকার হলে উপকারী, কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করলে ক্ষতিই বেশি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ খান বলেন, প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার আগে এন্টিবডির মাত্রা দেখার কিট ও এন্টিবডি টাইটার কিটের প্রয়োজন হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এখন আর এই কিট নেই। এ কারণে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া বন্ধ আছে। আগে তারা এই কিট এনে প্লাজমা থেরাপি দিয়েছিল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হিসেবে। তিনি বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উল্লিখিত দুটি কিট বিদেশ থেকে আনার জন্য ঘুরছে। কিন্তু তাকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কে কীভাবে অনুমোদন দিচ্ছে সেই বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান অধ্যাপক ডা. এম এ খান।

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির একজন সদস্য জানান, প্লাজমা থেরাপির বিষয়টি তারা জানেন না। কীভাবে দিচ্ছে সেটিও তাদের অজানা। তবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে বলে তারা আগে শুনেছেন।

এদিকে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের কাঁচামাল আগের থেকে ১০ গুণ সরবরাহ করেও ডিমান্ড অনুযায়ী ওষুধ সাপ্লাই দিতে পারছে না ওষুধ কোম্পানিগুলো। ঢাকার কয়েকটি বড় ফার্মেসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যেসব ওষুধের বিক্রি বেড়েছে তা হলো ঠান্ডা, হাঁপানি, সাইনোসাইটিস ও অ্যালার্জির ওষুধ। শরীরে নানা ধরনের ‘প্যারাসাইট’ আক্রমণ প্রতিহত করে এমন ওষুধ। ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ প্রতিরোধ করে এমন অ্যান্টিবায়োটিক। প্যারাসিটামল, ভিটামিন-সি, জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এমন সম্পূরক ওষুধ। জ্বর, শুষ্ক কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। এছাড়া ক্লান্তি, মাংসপেশিতে ব্যথা, গলা ও মাথাব্যথা ইত্যাদির ওষুধ কিনছেন মানুষ। ফার্মেসিগুলো জানিয়েছে, এসব প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে চিকিত্সকেরা কোভিড-১৯ রোগীদের যেসব ওষুধ খেতে বলছেন মূলত সেগুলোই কিনতে আসছেন মানুষজন। অক্সিজেনের সিলিন্ডারও মানুষ মজুত করে রাখছে।

সম্প্রতি কোভিড-১৯ রোগের চিকিত্সায় সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের দেহ থেকে রক্তরস বা প্লাজমা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বাংলাদেশেও শুরু হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে এন্টিবডি তৈরি হয়ে তা সেরে ওঠায় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেছিলেন চিকিত্সকরা। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রামে প্লাজমা থেরাপি নেওয়া এক কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঘটে। এর পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাকিল উদ্দিন প্লাজমা থেরাপি নেওয়ার পরও মারা যান। এদিকে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিত্সায় প্লাজমা থেরাপি ও পরীক্ষামূলকভাবে রেমডেসিভির, আইভারমেকটিন, ডক্সিসাইক্লিনসহ গুটিকয়েক ওষুধের পাশাপাশি কনভালেসেন্ট প্লাজমা ব্যবহার হচ্ছে যা পরীক্ষামূলক ব্যবহারের ফল না দেখে দেওয়া ঠিক নয় বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ১৬ মে আনুষ্ঠানিক প্লাজমা সংগ্রহ শুরু করে। তবে প্লাজমা থেরাপির ব্যাপারে এখনো অনুমোদন দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, বিষয়টি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে।