স্পোর্টস ডেস্ক : ‘কী করি আজ ভেবে না পাই/ পথ হারিয়ে কোন্‌ বনে যাই/ কোন্‌ মাঠে যে ছুটে বেড়াই, সকল ছেলে জুটি’ – এমিরেটস স্টেডিয়ামে আর্সেনালের অবস্থাটা যেন কিছুটা এমনই দাঁড়িয়েছিল। ৩৩৮টি পেশাদার ম্যাচ খেলা ডেক্লান রাইস কখনো ফ্রি কিকে গোলের দেখা পাননি। সেটা তিনি পেয়ে গেলেন গত রাতে, তাও আবার রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে, সেটাও একবার নয়, দুই বার!

যার দ্বিতীয়টা দেখে আর্সেনাল অধিনায়ক মার্টিন ওডেগার্ড যে অভিব্যক্তি দিয়েছিলেন, তার ভাবানুবাদ স্রেফ রবি ঠাকুরের ওই কয়েকটা লাইনই হতে পারে, এক কথায় যাকে বলা যায় হতভম্ব, বা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আর্সেনালের এ বিমূঢ়তায় যদি আনন্দের রেশ থেকে যায়, তাহলে তার বিপরীত চিত্রটা হয়ে থাকবে রিয়াল মাদ্রিদের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নকআউটের প্রথম লেগে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হলে যে তা হওয়াই যে স্বাভাবিক!

প্রথমার্ধে দুই দলের কেউই গোলের দেখা পায়নি। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে বুকায়ো সাকা রিয়াল মাদ্রিদ বক্সের সামনে ফাউল আদায় করে ফ্রি কিক এনে দেন আর্সেনালকে। সেখান থেকে নিখুঁত এক শটে বলটা রিয়ালের জালে পাঠান রাইস। বলের ফ্লাইট, স্পিন আর গতি – সবই ছিল নিষ্কলুষ। পুরো ম্যাচে দেয়াল তুলে দাঁড়ানো থিবো কোর্তোয়াকে ঠেকাতে এমন কিছুরই যে দরকার ছিল!

মিনিট বারো পরে আর্সেনাল আবারও একই দৃশ্যের পুনর্মঞ্চায়ন ঘটাল। এবারও ফ্রি কিকটা এনে দিলেন সাকা, সেটপিসটা নিলেন রাইস, এবারও বলটা ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা কোর্তোয়ার নাগালেরও একটু বাইরে দিয়ে আছড়ে পড়ল গিয়ে রিয়ালের জালে।

তাতে একটা ইতিহাসও এসে লুটিয়ে পড়ে তার পায়ে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নকআউটের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ফুটবলার জোড়া গোল করলেন ফ্রি কিক থেকে। এর আগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমারদের এই কীর্তি আছে বটে, সবে সেসব কীর্তি ছিল গ্রুপ পর্বের ম্যাচে, নকআউটে হয়নি আর। সে দুয়ারটা গত রাতে খুললেন রাইস।

রিয়াল শুরুটা করেছিল ভালোই। কিলিয়ান এমবাপে নিয়েছিলেন গোলমুখে প্রথম শটটা। তবে রিয়ালের কবজা থেকে ম্যাচটা বের করার প্রথম পদক্ষেপটা আর্সেনাল নিয়েছিল মাঝমাঠের দখলটা নিয়ে। রাইস তো আছেনই, তাতে বড় অবদান রেখেছিলেন ম্যাচে গুনারদের মিডফিল্ড জেনারেল মাইলস লুইস-স্কেলি। তার নিচু পাস, শোল্ডার ড্রপ, এদিক ওদিক ছুটে স্পেস দখলে নেওয়া, সব মিলিয়ে নিখুঁত এক পারফর্ম্যান্স ম্যাচে আর্সেনালকে এনে দেয় চালকের আসনে।

ম্যাচে চালকের আসনে থাকা, আর দুই লেগের সামগ্রিক লড়াইয়ে চালকের আসনে থাকায় খানিকটা পার্থক্য আছে। প্রথমটা থাকলে আপনি ম্যাচে হয়তো জিততে পারবেন, তবে সেটা আপনাকে সামগ্রিক লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার স্বস্তি এনে দেবে না।

লুইস-স্কেলির অবদানে সেটাও পেল আর্সেনাল। ৭৮ মিনিটে তিনি বল বাড়ান আর্সেনালের মেইকশিফট সেন্টার ফরোয়ার্ড মিকেল মেরিনোকে, দুই মাস হলো যিনি এ পজিশনে খেলছেন। সময়ের পরিধিটা ছোট হলেও তিনি তার ভূমিকাটা বুঝেছেন ভালোভাবেই, সেটা তার ফিনিশিংটাই জানান দিল। আর্সেনাল পেয়ে গেল তৃতীয় গোলটাও।

তিন গোল হজম করলে রাতটা কার ভালো কাটে? রিয়ালের মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে শেষ মুহূর্তে এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার লাল কার্ডটা। এমিরেটসে ডেক্লান রাইস আর আর্সেনালের স্বপ্নের রাতে রিয়ালের দুঃস্বপ্নের ষোলোকলা পূরণ হয় তাতে।