অনলাইন ডেস্ক : চালের পর এবার সিন্ডিকেটের থাবা পড়েছে ভোজ্যতেল ও ডালের বাজারে। মিলগেট থেকে এই চক্র প্রতি সপ্তাহেই নীরবে দুটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ছে। আর ভোক্তাদের এই পণ্য দু’টি পণ্য কিনতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চালের পর এবার সিন্ডিকেটের থাবা পড়েছে ভোজ্যতেল ও ডালের বাজারে। মিলগেট থেকে এই চক্র প্রতি সপ্তাহেই নীরবে দুটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ছে। আর ভোক্তাদের এই পণ্য দু’টি পণ্য কিনতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে ভোজ্যতেল ও ডালের দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় লক্ষ্য করা গেছে।
টিসিবি বলছে, গত এক মাসে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত বছর একই সময়ের তুলনায় দাম বেড়েছে ২০ দশমিক ৭১ শতাংশ।
এছাড়া বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর গত বছরের তুলনায় লিটারে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতিলিটার লুজ পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩২ দশমিক ৬১ শতাংশ।
অন্যদিকে টিসিবির তথ্যমতে, বছরের ব্যবধানে বড় দানার মসুরের ডাল প্রতিকেজিতে দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মাঝারি দানার প্রতিকেজিতে বেড়েছে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে শুক্রবার জানা গেছে, এদিন পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৫২০ টাকা।
আর এক বছর আগে একই সময় বিক্রি হয়েছিল ৫০০ টাকায়। এছাড়া খোলা সয়াবিন প্রতিলিটার বিক্রি হয়েছে ১০৬-১০৭ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৯৮ টাকা ও এক বছর আগে একই সময় বিক্রি হয়েছিল ৮৫ টাকায়।
পাশাপাশি পাম অয়েল লুজ প্রতিলিটার বিক্রি হয়েছে ৯৬ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৯৩ টাকা ও এক বছর আগে বিক্রি হয়েছিল ৭৫ টাকায়। ডালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার প্রতিকেজি বড় দানার মসুরের ডাল বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৮০-৮৫ টাকা ও এক বছর আগে একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৬০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানি হুসেন আলী বলেন, মিলগেট থেকে মালিকরা গত তিন থেকে চার মাস ধরে দফায় দফায় খোলা ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে। এখন তারা বোতলজাত সয়াবিনের দামও বাড়াচ্ছে।
তাই বেশি দাম দিয়ে এনে বাড়তি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আর ডালের বাজারেও সিন্ডিকেট কাজ করছে। তারা এক হয়ে সব ধরনের ডালের দাম বাড়িয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তা পর্যায়ে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে সিন্ডিকেটের থাবায় গত কয়েক মাস ধরে অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার। গত এম মাসে প্রতি লিটার পাম তেল বেড়েছে ১২-১৫ ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতিলিটারে ১১-১৩ টাকা।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান শাহ আমানত ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী নাহিদ হোসেন জানান, কয়েক মাস ধরেই খোলা তেলের দাম একটু একটু করে বাড়ছে। বর্তমানে খোলা সয়াবিন বিক্রি করছি ১০৮ থেকে ১১০ টাকা কেজি। কিছুদিন আগেও ছিল ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা।
অপরদিকে প্রতিকেজি পাম তেল বিক্রি করছি ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা। এক মাস আগে যা ছিল ৯০ থেকে ৯১ টাকা এবং তারও আগে ছিল ৮৫ টাকা।
চাক্তাইয়ের খুচরা পাম তেল বিক্রেতা ফরিদুল ইসলাম বলেন, পাইকার পাম তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বাড়তি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। ভালো মানের খোলা তেলের ড্রাম (১৮৫-১৮৬ কেজি) এখন কিনতে হচ্ছে ১৯ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে। এক মাস আগে যা ছিল ১৮ হাজার ৮০০ টাকা। অপরদিকে পাম তেলের প্রতিড্রাম বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ১৭ হাজার ৪০০ টাকায়। কিছুদিন আগেও যা ছিল ১৭ হাজার ১০০ থেকে ২০০ টাকায়।
এ বিষয়ে আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম ৭০০ থেকে বেড়ে এখন ১ হাজার ৪১ ডলারে পৌঁছেছে। তার সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর তিন স্তরের হওয়ায় আমদানি খরচও বেড়েছে। তাই দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে।
এদিকে চট্টগ্রামে ডালের দামও বেড়েছে। ২৫ দিন আগে সাদা মোটর ডাল কেজিপ্রতি দাম ছিল ২৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৩-৩৫ টাকায়। মোটা মসুর ডাল কিছুদিন আগে ছিল কেজিপ্রতি ৫০-৫২ টাকা। এখন একই ডাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়।
চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৯৫-১০০ টাকায়। মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। তবে মানভেদে ৫-১০ টাকা তারতম্য রয়েছে। অথচ এসব ডালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু কিছু ডালের দাম বাড়লেও এসব ডালের চালান এখনও দেশে আসেনি। আমদানি করা হয়নি।