অনলাইন ডেস্ক : সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন তসলিমা ইসলাম। সেজন্য যাওয়ার আগে স্বামীসহ দুজনার করোনা পরীক্ষা করাতে নমুনা দেন উত্তরার প্রাভা হেলথ কেয়ারে। সেখানে স্বামীর নেগেটিভ রিপোর্ট এলেও তসলিমার রিপোর্ট আসে করোনা পজিটিভ। ঘর থেকে বের না হয়েও তিনি করোনা আক্রান্ত, আর তার স্বামী বাইরে গিয়েও নেগেটিভ—এমন রিপোর্টে সন্দেহ হয় তাদের। তাই পরের দিন তসলিমা আবারও করোনা পরীক্ষা করাতে দেন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। এবার তার রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। এরপর গত ১৬ জুলাই দিবাগত রাতে এই দম্পতি তাদের মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তারা এখন সেখানেই অবস্থান করছেন এবং সুস্থ আছেন। তবে একদিনের ব্যবধানে দুটি হাসপাতালে দুই রকমের রিপোর্টের কারণে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন তারা। তাহলে কি প্রাভা হেলথ কেয়ারে ঠিকমতো করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না—প্রশ্ন এই দম্পতির।
ঘটনাটি বিস্তারিত জানিয়ে তসলিমা ইসলামের স্বামী সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ফ্লাইট ছিল ১৬ জুলাই রাতে। এয়ারলাইন্স থেকে আমাদের বলা হয়নি যে, করোনা টেস্ট করাতে হবে। তবুও বিদেশে গিয়ে যেনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়, সেজন্য আমরা নিজ উদ্যোগেই করোনা টেস্ট করাই। উত্তরার প্রাভা হেলথ কেয়ারে যোগাযোগ করি টেস্টের জন্য। তাদের প্রতিনিধি ১৩ জুলাই দুপুরে আমাদের উত্তরার বাসায় এসে স্যাম্পল নিয়ে যান। ১৪ জুলাই রিপোর্ট পাই, আমার নেগেটিভ আর আমার স্ত্রীর পজিটিভ।’
সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘কাজের প্রয়োজনে আমাকে বাইরে যেতে হয়েছে। অথচ আমি করোনা আক্রান্ত না। আবার আমরা এক বাসায় একসঙ্গে বসবাস করি। ফলে আক্রান্ত হলে তো আমাদের দুজনেরই হওয়ার কথা। সেজন্য আমাদের সন্দেহ হয়—রিপোর্টে কোথাও ভুল হলো কিনা। আমি প্রাভা হেলথ কেয়ারে যোগাযোগ করি। তারা বললো, তাদের রিপোর্ট কোনও ভুল নেই।’
পরবর্তীতে আবারও টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নেন সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা ঠিক করলাম আবারও টেস্ট করাবো। ১৪ জুলাই বিকালেই ইউনাইটেড হাসপাতালে গিয়ে স্ত্রীর স্যাম্পল জমা দিয়ে আসি। ১৫ জুলাই বিকালে আমাদের কাছে রিপোর্ট আসে আমার স্ত্রী নেগেটিভ।’
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর করোনার কোনও লক্ষণ ছিল না। শারীরিক কোনও দুর্বলতাও ছিল না। ফলে সে করোনা আক্রান্ত না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আমেরিকায় অবস্থান করছি। এখন পর্যন্ত দুজনেই ভালো আছি। সে যদি আক্রান্ত হতো—তাহলে এতদিনে তার শারীরিক সমস্যা দেখা যেতো।’
এ বিষয়ে জানতে প্রাভা হেলথ কেয়ারে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানের কমিউনিকেশন্স লিড কুতুব উদ্দিন কামাল জানান, করোনাভাইরাসের মতো নতুন ভাইরাসের পরীক্ষার ক্ষেত্রে ডায়াগনস্টিক টেস্টের কোনও টেস্টই পারফেক্ট নয়। বিশ্বের বেস্ট ল্যাবের পরীক্ষাও শতভাগ সঠিক নয়। ডায়াগনস্টিক টেস্টের ক্ষেত্রে ফলস নেগেটিভ কিংবা ফলস পজিটিভ হওয়ার ঝুঁকি আছে। সারা বিশ্বে ২ থেকে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট আসার রেকর্ড আছে। তিনি বলেন, ‘প্রাভা আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকে। করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ সঠিক ফলাফল দিতে স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখি।’
এক্ষেত্রে রিপোর্ট তৈরিতে কোনও অনিয়ম ছিল, নাকি ফলস পজিটিভ হয়েছে, তা অনুন্ধান না করে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র আয়েশা আক্তার বলেন, ‘পিসিআর টেস্টে ফলস নেগেটিভ বা ফলস পজিটিভ হতে পারে, তবে সেই সংখ্যা খুব কম।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘টেকনিক্যালি ফলস পজিটিভ অথবা ফলস নেগেটিভ দুটোই হতে পারে। তবে সাধারণত ফলস পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা কম, ফলস নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
কখন ফলস নেগেটিভ আসতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘ধরুন নমুনা নেওয়ার সময় কোনও গ্যাপ হয়েছে কিনা। যেভাবে নেওয়ার কথা, যেভাবে সংরক্ষণ করার কথা, যেভাবে পরিবহন করার কথা—সেগুলো সঠিক পদ্ধতিতে হয়েছে কিনা। যদি ঠিকমতো করা না হয়, তাহলে কিন্তু ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট আসতে পারে। একইসঙ্গে যার টেস্ট করা হচ্ছে, নমুনা নেওয়ার সময় তার শরীরে ভাইরাল লোড কেমন ছিল, সেটাও বিবেচ্য বিষয়। ভাইরাল লোড কম হলে নেগেটিভ রিপোর্ট আসতে পারে। আবার যে মেশিন ব্যবহার করা হয়, সেখানেও কিছু গ্যাপ থাকতে পারে। কোন কিট ব্যবহার করা হচ্ছে, তার ওপরও ফলাফল নির্ভর করছে।’
অন্যদিকে ফলস পজিটিভ হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘কোনও কারণে ল্যাবে যদি কন্টামিনেশন হয়। কোনও পজিটিভ স্যাম্পলের সঙ্গে যদি অন্য স্যাম্পলের কন্টামিনেশন হয়, কিংবা ল্যাবের মেশিনে কন্টামিনেশন হয়—তাহলে ফলস পজিটিভ হতে পারে। এক্ষেত্রে পুরো ল্যাব ও মেশিনকে জীবাণুমুক্ত করে টেস্ট করাতে হবে।’