অনলাইন ডেস্ক : একটি ১০০ ওয়াটের এলইডি সড়ক বাতির দাম ধরা হয়েছে ৬৯ হাজার ৬৯০ টাকা (প্রায় ৭০ হাজার টাকা)। এছাড়া একেকটি ৪০ ওয়াটের লাইটের দাম ৩১ হাজার ৯৭১ টাকা, ৬০ ওয়াট ৫৫ হাজার ৩২১ টাকা এবং ৮০ ওয়াট লাইটের দাম ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার ৬৯৭ টাকা।

এ দাম অস্বাভাবিক ধরা হয়েছে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। এজন্য সঠিক বাজার দর হিসাবে দাম প্রাক্কলনের জন্য তিন সদস্যর একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-এ কমিটিকে ক্রয় করতে যাওয়া বাতি এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির প্রাক্কলন এবং কারিগরি বর্ণনা প্রণয়ন করে (সিল ও স্বাক্ষরসহ) ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংযোজন করতে হবে।

‘কক্সবাজার পৌরসভার রাস্তাগুলোতে এলইডি সড়ক বাতি সরবরাহ ও স্থাপনের মাধ্যমে আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের এমন অস্বাভাকি দামের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পটিতে রয়েছে গোড়ায় গলদ। অর্থাৎ যেনতেনভাবে দায়সারা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ মঙ্গলবার বলেন, প্রস্তাবিত মূল্য অবশ্যই বাজারের চেয়ে বেশি। এজন্যই আমরা কমিটি গঠন করে দিয়েছি। সাধারণত কমিটি করা হয় না।

তাদেরকেই (প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের) ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ করতে বলা হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে শুধু কমিটিই নয়, এ কমিটি কোন উৎস থেকে দাম প্রস্তাব করবে সেটিও জানাতে বলা হয়েছে। এটা সংশ্লিষ্টদের জন্য একটা বড় ধাক্কা। তাদের প্রস্তাবিত দাম যে কোনোভাবেই গ্রহণ করা হয়নি-সেটির প্রমাণই হচ্ছে কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত তাদের একাংশ সম্পদ বৃদ্ধির উপায় হিসাবে এমন প্রস্তাব দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে পরবর্তীকালে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা যায়। তবে ভালো দিক হচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন বিষয়টিতে আপত্তি দিয়েছে। কিন্তু যেসব কর্মকর্তা এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হয় না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রবণতা অব্যাহত আছে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এমন অনিয়ম বন্ধ হবে না।

সূত্র জানায়, ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং কক্সবাজার পৌরসভার।

৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্পটির পিইসির (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে-সড়ক বাতির যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে তার যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পিইসি সভায় জানানো হয়, এলজিইডির সিটি গভর্ন্যান্স প্রজেক্টের (সিজিপি) আওতায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে এলইডি সড়কবাতির দর এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে পরিকল্পনা কমিশন ওয়েস্টার্ন ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী এলইডি বাতির বর্তমান বাজার দর, বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য সমন্বয়ে ব্যয় প্রাক্কলনের জন্য সভায় একমত পোষণ করা হয়। এজন্যই কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন উইংয়ের মহাপরিচালক ইমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবটি প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে আসে। এখানে একটি বাছাই কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন করলে আমরা সেটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাই। এর মধ্যে অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে। এলইডি লাইটের ক্ষেত্রে শুধু ওয়াট দেখে বিবেচনা করা ঠিক নয়। কেননা এর দাম নির্ভর করে স্পেসিফিকেশন এবং অরিজিনসহ আরও নানা বিষয়ের ওপর।

তবে যে প্রকল্পটির বিষয়ে বলছেন এ মুহূর্তে কাগজপত্র না দেখে সঠিক মন্তব্য করতে পারছি না। পিইসি সভার কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়েছে-প্রস্তাবিত প্রকল্পের ডিপিপিতে যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সংযুক্ত করা হয়েছে তা এনইসি-একনেক অনুবিভাগের ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি জারি করা ফরম্যাট অনুযায়ী হয়নি। সমীক্ষা প্রতিবেদনটিতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কিসের ভিত্তিতে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সঙ্গে জড়িত সংস্থার মতামত গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

ডিপিপিতে যে আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ দেওয়া হয়েছে সেখানে আর্থিক ১ হাজার ২৯৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং অর্থনৈতিক ৩২১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এখানে আর্থিক খাতের এ হিসাব কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

সেই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে প্রকৃতপক্ষে যে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাদি পাওয়া যাবে তা বিবেচনায় নিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ নতুনভাবে করা প্রয়োজন। আরও বলা হয়েছে-প্রস্তাবিত প্রকল্পে কোনো গাড়ি কেনার প্রস্তাব না থাকলেও পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।