মাহমুদ আজহার : ৭৯ বছর বয়সেও সত্যিই একজন ‘করোনা হিরো’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। নিজের প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত ‘র্যাপিড ডট ব্লট’ করোনা কিটের পরীক্ষায় তিনি এখন করোনামুক্ত। গতকাল আরটি পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায়ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা নেগেটিভ এসেছে। মাত্র ২১ দিনের মাথায় করোনা জয় করে অনেক তরুণকেও হার মানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই প্রতিষ্ঠাতা। করোনামুক্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা তার হাত উঁচিয়ে রাখা সংবলিত একটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
করোনামুক্ত হলেও তার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আরও কিছু দিন তাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকার কথা ছিল। কারণ তার ফুসফুসে নিউমোনিয়া পুুরোপুরি সেরে যায়নি। ডায়ালাইসিস ও থেরাপি তো ছিলই। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে গত রবিবার সকাল ১০টার দিকে ছুটে যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। সঙ্গে ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের দফতর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু ও তার একজন সহকারী।
বনানীর কবরস্থান সংলগ্ন মসজিদের সামনে মোহাম্মদ নাসিমকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান এবং মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করেন। এরপর তিনি মোহাম্মদ নাসিমের বাবা জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও তাজউদ্দীন আহমদের কবর জিয়ারত করেন। সেখান থেকে সরাসরি চলে যান গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে। বিষয়টি সবাইকে অবাক করে। করোনাকালীন এ মুহূর্তে কেউ এমনটা করতে পারে-তা ভাবাই যায় না। বনানী কবরস্থানে যাওয়া এবং নাসিমকে শ্রদ্ধা জানানোর পর জাতীয় দুই নেতার কবর জিয়ারতের বিষয়টিও দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা- সব মহলেই প্রশংসিত হয়েছেন এই চিকিৎসক মুক্তিযোদ্ধা।
হাসপাতাল থেকে যাওয়ার সময় ডা. জাফরুল্লাহকে বেরুতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। গলাব্যথা থাকায় তিনি মৃদু স্বরে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বলেন, ‘আমি যদি মোহাম্মদ নাসিমের জানাজায় গিয়ে মারাও যাই, তবুও আমি তার জানাজায় যেতে চাই।’ এরপর আর কেউ তাকে বাধা দেননি।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একাধিকবার আলাপকালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশের জনগণের জন্যই আমরা কিট বানিয়েছিলাম। দুঃখজনক হলো সেটা এখনো অনুমোদন করাতে পারিনি। আমি তো কোনো লাভের আশা করিনি। ২৫০-৩০০ টাকায় সবার হাতে হাতে কিট পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম। যাতে প্রতিটি নাগরিকই এর পরীক্ষা করাতে পারে। কিন্তু কত আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আজো কিটের অনুমোদন করাতে পারিনি। আদৌ পারব কিনা তাও জানি না। একটি কিট অনুমোদনের জন্য সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। সেখানে দিনের পর দিন, মাস গড়িয়ে যায় কিটের অনুমোদন পাওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, তারা দু’একদিনের মধ্যেই গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের ফলাফল দেবেন।
গতকাল গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মামুন মোস্তাফি জানালেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সার্বিক অবস্থা স্থিতিশীল। কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই আগের চেয়ে ভালো বোধ করছেন। গণস্বাস্থ্যের র্যাপিড ডট ব্লট কিটে নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পর আরটি পিসিআরের (RT PCR) পরীক্ষার ফলাফলও নেগেটিভ এসেছে। তিনি এখন করোনামুক্ত। তবে এখনো তিনি নিউমোনিয়ার জটিলতায় ভুগছেন। তিনি হাসপাতালে কেবিনে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার স্ত্রী শিরীন হক এবং ছেলে বারীশ হাসান চৌধুরীও সুস্থ আছেন। তারা বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা সবার দোয়া চাই যেন আল্লাহ তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের দ্রুত সুস্থতা দান করেন।’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এমনই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যে, বর্তমান বৈরি রাজনৈতিক পরিবেশেও প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেত্রী তার খোঁজখবর রাখছেন। করোনায় অসুস্থকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তার খোঁজখবর নেওয়া হতো। এমনকি একদিন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ফোনে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। ওই দিন বিকালেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও ফুল আর ফলের ঝুড়ি পাঠিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন এবং ফোনে কথা বলেন। গত ২৫ মে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা পজেটিভ আসে। এর পর থেকেই রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। গত ৪ জুন রাতে ৭৯ বছর বয়স্ক এই মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তবে শনিবার থেকে ধীরে ধীরে তার উন্নতি হতে থাকে। তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন