বিদ্যুত সরকার : রোদ্দুরের জন্য ভালবাসা
সাত.
কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে গেল ‘উঠে পর, ব্রেকফাস্ট রেডি, রোদ্দুরও সেই কখন এসে অপেক্ষা করছে’। এই সামার এলেই রোদ্দুরের সাথে আমার সখ্যতা বেড়ে যায় অজান্তেই। ঘুম ভাঙ্গলেই রোদ্দুরের কাছে ছুটে যাওয়া, বেশ কিছুটা সময় ধরে গায়ে মাখামাখি, খুনসুটি। টি টেবিলে টোস্টেড টু পিস পাউরুটি, ওমলেট, চিজ আর বড় এক মগ দার্জিলিং গোল্ড টি। নো সুগার, নো মিল্ক ধুমায়িত এক মগ রং চা উইথ রোদ্দুর। কবি আবুল হাসান, জয় গোস্বামীর বইগুলোর সাথে ফ্লাওয়ার ভাসে নান্দনিক ইকাবেনা সকালের টি টেবিলকে মহিমান্বিত করেছে অনেক। রোদ্দুরের স্পর্শ পেয়ে বুঝি আরো বেশি উজ্জ্বল, আরো বেশি মনকাড়া হয়ে উঠে। আগামী কয়েকটি মাস আমি আর রোদ্দুর পাশাপাশি, সাথে সাথে সকাল-দুপুর, এক ভাল লাগার রংধনু মনে রং ছড়ায়, দেহে উষ্ণতা। দিন শেষে তারই রেশ থেকে যায় চিলকার স্থির জলের অস্থির ছোট ছোট ঢেউগুলোর মতোন। একটা মাস রোদ্দোরের সাথে আমার অবাধ বসবাস। কী এক অনুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাই পরস্পর। চায়ের মগে চুমুক দিতে দিতে কখনো আবুল হাসান আবার কখনো জয়গোস্বামী। রোদ্দুর আমার পাশে বসেই কবিতার পংতিমালা কান পেতে শোনে। এর মাঝে শা শা এসে জেনে নিল আমার আরো এক মগ রং চায়ের সুপ্ত বাসনার খবরটুকু। আবারও এক মগ ধুমায়িত রং চা সাথে কাজু বাদাম বা প্রিঙ্গেল অনিয়ন চিপস। এ রকমটা না হলে কি আর জম্পেশ আড্ডা হয়? কফি উইথ ‘করন’র মতই চা উইথ রোদ্দুর।
শেষ রাতে এক পশলা বৃষ্টি- ঘুমটা ভালই জমেছিল। অবশ্য টিনের চালের ‘ডলবি’ সিস্টেমে বৃষ্টি পড়ার শব্দটুকু বেশ মিস করেছি। শা শা’র আদুরে ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো ‘ওয়েক আপ কল ফর ব্রেকফাস্ট’ প্রতিদিনের এই মিষ্টি ডাক দিনের শুরুটাকে আরো বুঝি প্রাণবন্ত, গতিময় করে তোলে। বারন্ত লতাগুল্ম বৃষ্টির ছোঁয়ায় মসৃন, সবুজ ফুল ফোটার প্রত্যাশায় নিশি-দিন, সারাক্ষণ। নীল আকাশটার সীমাহীন হাতছানি—‘দূরে কোথাও দূরে দূরে’…। শাশা ঘর গুছিয়ে নিচ্ছে। একটু পরে রান্না-বান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে সে। এ সময়গুলোতে লো ভলিউমে কোন মিউজিক বা গান বাজতে থাকে। যেমন আজ বাজছে ‘কলোনিয়ান কাজিনস’ এর ফিউশন সংগস, ইংরেজি-হিন্দির মিশ্রনে কখনো বা রাগের আদলে। যে কোন গান তার প্রিয়। বৃষ্টির সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করা। সাথে আবার গুরুদেবের গান শোনা চাইই শা শার। নিজ হাতে গড়ে তোলা তার সাজানো বাগান। শাক-সবজি, ফুল-ফল সব যেন বৃষ্টির ছোঁয়ায় সতেজ, বেড়ে ওঠার প্রহর গুনে। কল্প তরুর মত শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে ফুলে ফলে শোভিত হয়ে উঠে কাংখিত সময়ের পূর্বেই। তখন বুঝি শা শা যাপিত জীবনের অর্থ খুঁজে পায়, সুখের হাওয়া দোল দিয়ে যায় জীবন বৃক্ষের পত্র-পল্লবে।
সকাল গড়িয়ে দুপুরের পূর্বাভাস। বড় অভিমানী রোদ্দুর আমার স্পর্শ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে ক্রমশ। আবার নতুন এক ভোরের আশা নিয়ে আকাশের নীল চোখের আঙ্গিনায় টেনে নিলাম প্রগাঢ় আন্তরিকতায়।
বিদ্যুত সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা