বিদ্যুত সরকার: তোমার দেয়া সুগন্ধী রুমাল
চার.
বুক পকেটে সযতনে রাখা তোমার দেয়া ফুল তোলা সুগন্ধী রুমাল, মাতাল করা গন্ধ ছড়াতো দিনভর পাগল হাওয়ায়। ইচ্ছে করেই ভুল ভাবনায় ভাল লাগবে ভর জোছনায় ভালবাসা হাত বদল হতো অজান্তে আনমনে। তবুওতো বুঝে নিতাম এ হাত সে হাত নয়, এ আঙ্গুলগুলো সে আঙ্গুল নয়- স্পর্শে উত্তাপ ছড়ায় না, শিহরণ জাগায় না কোন কালেই। কোন জ্যোত্স্না রাতে চাঁদকে সাক্ষী রেখে কেমন করে শুরু হতো পথচলা, না বলা যত কথা বলা। ‘ও চাঁদ জোছনাকে সামলে রাখো…’ কে শোনে কার কথা! গাঁয়ের সমস্ত সবুজকে কেমন করে আরো বেশি সবুজ কোরে তুলতো সেই রূপোলী জোছনা। কেমন করে ভুল করে ভুলে যাই এ সকল বিস্মৃতির আড়ালে অনাদরে লুকিয়ে থাকা সুখময় স্মৃতিগুলো? স্মৃতি কি কখনো বিলিন হয়ে যায়, নাকি মলিন হয়ে যায় সময়ের শ্লেজ গাড়িতে চড়ে? স্মৃতি সততই সুখের, অবিনশ্বর। কখনো সখনো সুপ্ত থাকে মৈনাক পাহাড়ে রক্ষিত গুপ্ত ধনের মতোন। আবার জেগে ওঠে এক মায়াবী মাধুর্য সাথে নিয়ে। অনুভূতিগুলো কি যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ কিংবা যন্ত্রণার নীল দংশনে বোধহীন, সংবেদনহীন অহর্নিশ? এই যে শা শা অন্তরীণ অন্তহীন সময় ধরে, চোখের আঙ্গিনা থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে তবুওতো, অনুভব করে নেই একটু আগেও বুঝি সে মনের জানালা খুলে উঁকি দিয়ে গেল তার মায়াবী দু’চোখ মেলে। ও যেখানেই স্পর্শ রাখবে সেখানেই আমার শরীর আমার মন, যেখানে আমার চলাচল সেখানে তার আগমন – নির্গমন। কান পেতে শুনতে পাই তার পদধ্বনি, সর্বত্রই তার ভালোবাসার অন্তর্জাল ছড়ানো যেন বুঝি নিঃশর্ত ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রেম দীর্ঘজীবি হয়, জীবনের সবগুলো রং ছড়ায় মনের আকাশ জুড়ে। লেক অন্টারিওর হুহু বাতাসে প্রজাপতিরা পাখা ঝাপটায়, পথ ভুল করে ভুল গন্তব্যে চলে যায়, গাঙ চিলগুলোও কেমন সঠিক স্থানটায় বসতে ভুলে যায় বড় অনিচ্ছায়। এক সময় সত্যি সত্যি এ ঝড়ো হাওয়া থেমে যাবে। সব কিছুই আগের মতোন চলতে থাকবে এটাই পথ চলা। ‘একটা ছেড়া দিন বুকের মাঝে কষ্ট, একটা ছেড়া রাত স্বপ্নগুলো নষ্ট…’ তবুওতো ভোর হয়। সকালের নরোম উষ্ণ সোনালী এক চিলতে রোদ সজনে পাতাদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমাকেই স্পর্শ করবে, ঘুম ভাঙাবে যেমন শা শা ঘুম ভাঙাতো তার চুড়ির মৃদু রিনিঝিনি শব্দ দিয়ে আর চায়ের সুবাস ছড়িয়ে দিয়ে চারিধারে।
বিদ্যুত সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা