বিদ্যুৎ সরকার : একটি করবী ফুল গাছ ও প্রসঙ্গ স্মৃতি
উঠোনের পাশে সেই করবী ফুল গাছটি, সমস্ত গাছ জুড়ে এখনো কি হলুদ ফুলে ছেয়ে যায়? মনের মাঝে কেমন বসন্ত বাতাস দোল দিয়ে যেতো তখন। নিচু ডালগুলো থেকে ফুল ছিঁড়ে আমাকে ফুলের মধু খেতে বলতে- মনে পড়লে হাসি পায়। আর, ঘরের চালের সাথে লাগোয়া কামরাঙ্গা গাছটি? আহা কি দারুণ মিষ্টি কামরাঙ্গা, এখনই বুঝি জিভে জল এসে গেল। শান বাঁধানো পুকুর ঘাট। ছুটির দিনগুলোতে ওখানে বসে কামরাঙ্গা, কাঁঠালের মুচি আর তেতুল মাখা কলাপাতায় নিয়ে খাওয়া, বিকেলে গল্পের আসর আর জ্যোৎস্না রাতে পুকুরের নিথর জলে চাঁদের রূপোলী হাট, মাছেদের চঞ্চল চলাচল- অবাক চোখে সবাই চেয়ে দেখতাম। শরতের সকালগুলো কেমন সুবাসিত হতো মাতাল করা শিউলির সুবাসে, সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে যায় বিলাসী মন। কুয়াশার চাদরে তোমার আদরে দেহ উষ্ণ হতো রোজ। প্রতিদিন একটি করে শিউলি ফুলের মালা পাবার প্রত্যাশায় ব্যাকুল করে তুলতো প্রতিটি সকাল। সযতনে সাজানো শিউলির মালার পরতে পরতে গাঁথা গহীন ভালোাবাসার কারুকাজ। তোমার শিল্পীত সরু স্পর্শকাতর গোলাপী আঙ্গুলগুলো ঝংকার তুলতো মনের বীণায়। এখনো তো শিউলি ফুল ফোটে, মৃত্তিকার আত্মিক টানে ঝরে পড়ে মৃত্তিকার বুকেই, সুবাস ছড়ায়। আকাশে সাদা মেঘেরা উড়ে উড়ে যায় ভুল ঠিকানায়, কাঁশবন দুলে ওঠে হাওয়া বদলের হাওয়ায়। প্রতি বছরের মত এবারওতো পূজো হবে, শারদীয় পূজো। ঢাক বাজবে ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা প্রথম শাড়ি পরে অঞ্জলি দেবে চোখ ও অনন্তের স্বপ্ন নিয়ে যেমন, তুমিও করতে। জানি তুমিও ওদের মত সাজবে, আনন্দ করবে কিন্তু ‘সেই তুমি’ হতে পারবে না মোটেও। যেমন আমিও হতে পারছি না ‘সেই আমি’। তবুও তুমি বাগানের ফুল সেজে স্থির চিত্র হয়ে যাও কখনো সখনো। শুধুই অভিমান জমে জমে ভালোবাসা হয়ে যায় অজান্তেই। সে ভালোবাসা কি কেবলই স্মৃতি?