Home কলাম এই মেঘ এই রোদ্দুর : হায় চিল সোনালী ডানার চিল…

এই মেঘ এই রোদ্দুর : হায় চিল সোনালী ডানার চিল…

বিদ্যুৎ সরকার : ‘হায় চিল সোনালী ডানার চিল’ সোনা রোদ পালকে মেখে মেঘের হাওয়া গাড়ি চড়ে কোথায় হারিয়ে যায় সোনালী স্বপ্নের দেশে। অন্তবিহীন পথ চলা, বিরামহীন উড়াল। পূর্ব থেকে পশ্চিমে, ব্লু-মাউন্টের উপত্য্যকা থেকে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায়। যেখানে ক’দিন বাদেই পড়তে শুরু করবে বরফ। সাদা সাদা বরফ, শুভ্র নরম বরফ। ব্লু-মাউন্ট এর পাদদেশে রিসোর্টগুলো মুখরিত হয়ে উঠবে ভ্রমণ বিলাসী দর্শনার্থী ও স্কি-প্লেয়ারদের পদচারণায়। প্রকৃতি সেজে উঠবে নবসাজে, নবরূপে। পাকিস্তানের সোয়াতও সেজে উঠবে এক অনন্য সাজে। অথচ, প্রকৃতি প্রেমী, ভ্রমণ বিলাসী, স্কি-প্লেয়ার কেউই ছুটে আসছে না নয়নাভিরাম এ সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে সোয়াতের উপত্যকায়।

সোয়াত এখন এক আতংকের উপত্যকা। পাথরকুচি পাতারা বিবর্ণ হয়ে আছে, সবুজতা হারিয়েছে সূর্যের আলোকরশ্মির ও স্বল্পতায়। উপত্য্যকাবাসীরা শিক্ষার আলো থেকে, জ্ঞানের প্রজ্ঞা থেকে, মানবতার মমত্ব থেকে ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত। এসকল মানব-মানবী, শিশু-কিশোর সবাই বুঝি এক অমোঘ ‘বøাক হোলে’র ভেতর নিজেদের হারিয়ে ফেলছে অজান্তেই। পেছনের পানে তাকালে শুধুই কালো আঁধার, সম্মুখপানে অন্ধকারাচ্ছন্ন – এক অন্ধকারময় পৃথিবীর বলয় তৈরিতে কেমন পারঙ্গম। তারা বুঝি আলোতে ফিরে আসার পথ হারিয়ে ফেলেছে চিরদিনের জন্য্যই। সোয়াত উপত্য্যকা হারিয়ে যাবে অন্ধকারময় এক অচেনা, অজানা চৌরাস্তায় কঠিন ধাঁধায়।

একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্য্যয় নিয়ে এ অন্ধকারময় পিছু হটা সমাজকে আলোকিত করার বাসনা নিয়ে প্রদীপ হাতে যে কিশোরী তার নাম ‘মালালা’। পুরো নাম মালালা ইউসুফজাই। তালেবানদের আক্রমনে বন্ধ হয়ে যাওয়া ৪০০টি স্কুলের ৫০ হাজার স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের একজন এই মালালা। যে আবার স্কুলে যেতে শুরু করেছে। সঙ্গে যাচ্ছে তারই মতো প্রস্তর কঠিন আরও কয়েকজন মেয়ে। সে মেয়েদের অনুপ্রাণিত করেছে স্কুলে ফিরে আসার জন্য। তারা একে একে মালালার আহবানে সারা দিয়ে স্কুলে ফিরে আসতে শুরু করেছে। মালালা ভাবে, স্বপ্ন দেখে তার সাথীরা লেখাপড়া শিখে একদিন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ হবে।
অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজটাকে আলোকিত করে তুলবে তার আলোকবর্তিকায়।
৯ অক্টোবর মঙ্গলবার ২০১২। রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ, স্কুল শেষে প্রতিদিনের মতো সেদিনও মালালা স্কুলবাসে করে বন্ধুদের সাথে ফিরছিল নিজ বাসায়। কাঁধে স্কুলব্যাগ। ব্যাগভর্তি তার আগামী দিনের স্বপ্ন-নারী শিক্ষা, মানবতা ও বৈষম্য্যহীন সম অধিকারভিত্তিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন। সে স্বপ্নগুলোকে চিরদিনের জন্য চৌ-চির করে দিতে, চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে পথে মধ্যে তালেবান জঙ্গিরা বাসে উঠে মালালার মাথায় ও ঘারে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়। মালালা এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে। আমরা আশা করবো, প্রার্থনা করবো মালালা সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসবে। স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছেটাকে দ্বিগুন করে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছতে নিশ্চয়ই মালালা একদিন সমর্থ হবে -আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। সোনালী ডানার চিল সোনারোদ পালকে মেখে জানান দিয়ে যাবে মালালা আসছে বিজয়ের ঝান্ডা উড়িয়ে, তোমরা দেখে নিও। পাথরকুচি পাতারা সতেজ হয়ে উঠবে, নিভৃত সবুজে ভরে যাবে সোয়াত উপত্যকা। প্রাণ ফিরে পাবে, আলোকিত হয়ে উঠবে সোয়াতের প্রতিটি শিশু-কিশোর।

Exit mobile version