বিদ্যুৎ সরকার : সকাল সকাল এক পশলা বৃষ্টি হোয়ে গেল। সুন সান রাস্তা। ওয়েদার ফোরকাস্টে এমনটাই বলা ছিল। এখনও ঠান্ডার রেশটা রয়ে গেছে, থাকবেও মধ্য রাত অব্দি। তাই দ্বিতীয় ভাবনা না করে সরাসরি খিচুড়ি রান্নায় পূর্ণ মননিবেশ শুভমের। মিলারও ভীষণ পছন্দ খিচুড়িতে। খিচুড়ি হলে এর সাথে বেগুনভাজি, আলুভাজি, ডিমভাজি ও একটু ভুনা চিকেন হলে আর কি চাই মিলার! মেংগো পিকেল, সালাদ তো থাকছেই, এ দু’টা শুভমেরও পছন্দ। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে মিলার পছন্দ চিল্ড হেনিকেন, শুভমের অবশ্য রেড ওয়াইন। আজ একটু আগে-ভাগেই সকালের বৃষ্টি ভেজা ঘুমকে দূরে ঠেলে দিয়ে ঘর-দোর গুছিয়ে রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাসার সম্মুখের ফুলের দোকান থেকে বিভিন্ন রঙের এক থোকা গোলাপ এনে ফ্লাওয়ার ভাসে সাজিয়ে রেখেছে। গোলাপ মিলার পছন্দের ফুলগুলোর অন্যতম। শুভমেরও ফুল প্রিয়। ফ্লাওয়ার ভাসে ফুল সাজিয়ে রাখাটা তার বিয়ের পর থেকেই অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। সোহানা ফুল ভীষণ পছন্দ করতো সেখান থেকেই শুভমের এ অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে। সোহানা আজ বেঁচে নেই কিন্তু তার স্মৃতিময় ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে আছে ঘরময়। সোহানাকে শুভম ভালোবেসে বিয়ে করেছিল কিন্তু সে ভালোবাসার বাঁধন ছিন্ন করে প্রাণঘাতী কর্কট রোগ তাকে টেনে নিয়ে গেছে পরপাড়ে। এরপর শুভম আর বিয়ে করেনি। তার একটি নতুন ধারণা, ভাবনা বা বিশ্বাসের আবির্ভাব ঘটেছে – পৃথিবীতে চিরস্থায়ী বলতে কিছু নেই, বর্তমানটাই ধ্রæব সত্য। আর বিয়েটা হলো মায়ার বাঁধন। এর গন্ডি থেকে বের হয়ে আসাটা অসামাজিক ও অমানবিক বলেই গণ্য ও প্রতিয়মাণ। পিছুটান রাখতে নেই, মুক্ত বিহংগ হোয়ে উড়ে উড়ে বেড়ানোই বুঝি তার ব্রত।
ডোর বেল বাজতেই শুভম দরজা খুলে দেখে মিলা দাঁড়িয়ে। মুখে হাসির রেখা টেনে হাতের টিউলিপের ফুলের তোড়া শুভমের হাতে তুলে দিয়ে ‘হ্যাপি বার্থডে’ বলে জড়িয়ে ধরে ‘হাগ’ দিল মিলা।
: আজ আমার জন্মদিন তা তুমি জানলে কেমন করে।
: শুধু কি তাই? কত তম জন্মদিন সেটাও বলে দিতে পারি। সিক্সটি সিক্স, ঠিক বলেছি তো?
: তুমি দেখছি ছোট-খাটো একজন গোয়েন্দা?
: লেখা-পড়া শেষ করে একদিন তাই হবো ভাবছি।
: তোমার শরীরের গন্ধটাতো বেশ। শরীরের নয় পারফিউমের, তোমারই দেয়া ‘গিফট’ আজই প্রথম মেখে আসলাম।
: এখনই লাঞ্চ করতে চাও নাকি কিছুক্ষণ পর?
: সবেতো আসলাম একটু কথা-বার্তা চলুক তার পর না হয়। বরঞ্চ আমাকে একটা বিয়ার দাও,
সাথে একটু নাটস দিলে মন্দ হয় না।
শুভম ফ্রিজ থেকে দুটো চিল্ড হ্যানিকেন বের করে সাথে কিছু কাজুবাদাম মিলার সামনে দিল। শুভমও এক পেগ রেড ওয়াইন নিয়ে নিল নিজের জন্য। বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হলো, কথা হলো মিলার লেখা-পড়া নিয়েও। এবারই তার শেষ সেমিস্টার। এক্সাম শেষ হলেই কোন একটা কিছু শুরু করতে হবে তাকে। কাজ ছাড়া বসে থাকাটা মিলার অপছন্দ।
: মেঘে মেঘে অনেক বেলা হলো, এখন লাঞ্চ রেডি করে ফেলি কি বল?
: হুম, করা যেতে পারে। আমি হেল্প করবো?
: তার আর প্রয়োজন হবে না। দয়া করে বসে পর।
: ভেনু তো চিনলাম, মেনুটা এখনো জানা হলো না।
: গেজ করতে পারছো? তোমার প্রিয় আইটেম।
: খিচুরি না তো?
: সেন্ট পারসেন্ট করেক্ট। সাথে আলুভাজি, বেগুন ভাজি, ডিম ফ্রাই আর চিকেন ভুনা-চলবে?
: ইউ আর সো গুড ডিয়ার। আমার জন্য এতোকিছু করতে গেলে কেন?
: ইট্স মাই প্লেজার বেবি। তোমাকে খাইয়ে আনন্দ দেয়া যে কতটা সুখের তা তোমাকে বোঝানো বেশ কঠিন হবে। কেন, আমিও তো খাচ্ছি!
তোমার এক্সাম শেষ হলে চল কোথাও ঘুরে আসি।
: যাওয়া যায়, কিন্তু কোথায়?
: কিউবা গিয়েছো কখনো?
: না, যাইনি, তাই বলে ঘোর শীতে? তখনতো অনেক ঠান্ডা থাকবে!
: না না, ও সময়ই যেতে হবে। তখন ওখানে নরমাল, স্মুথ ওয়েদার। দারুণ লাগবে।
: ডান্। যাচ্ছি। আমার এক্সাম শেষ হচ্ছে অক্টোবরের লাস্ট উইক, সুতরাং নেক্সট উইক থেকেই আমি ফ্রি হয়ে যাব।
: তাহলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ফ্লাই করি, কি বল তুমি?
: ও কে ডিয়ার। আমার আইসক্রিম কোথায়?
: জস্ট এ মিনিট, ফ্রিজে রাখা আছে এনে দিচ্ছি।
আইসক্রিম খেতে খেতে দুজনে বিভিন্ন প্রসঙ্গে নিয়ে আলাপ করলো। শুভম মিলার পরীক্ষার প্রিপারেসন সম্বন্ধে জানতে চাইলো। তেমনি, মিলাও জিজ্ঞেস করলো শুভম রেগুলার তার প্রেসার চেক করছে কিনা ও অষুধ খাচ্ছে কি না। এপ্রিলের বিকেলগুলোতে আকাশের রঙ বদলাতে থাকে কোথাও গাঢ় নিল আবার কোথাও সিঁদূরে লাল, কমলা, হলদেটে। মিলার এখন ফেরার পালা।
: আগামী মাস থেকেই এক্সাম শুরু তাই এর মধ্য আর আসা হচ্ছে না আমার। আই উইল মিস ইউ।
: মি ঠু বেবি।
দরজার কাছে আসতে গিয়ে ঘুরে শুভমকে কাছে টেনে একটু জোরেই হাগ দিল। তার পার্টস খুলে একটা ছোট্ট প্যাকেট শুভমের হাতে দিয়ে বললো – এ স্মল গিফট ফর ইউ বাট, ডোন্ট ওপেন বিফোর আই লিভ। শুভম তার আদুরে গালটায় একটু আদর করে দিয়ে বললো – সি ইউ সুন বেবি।
দরজা খুলতেই এলিভেটর। মিলা কাছে গিয়ে বাটন টিপতেই ক্ষণিকের মধ্যেই এলিভেটর চলে আসলো, মিলা উঠে হাত নেড়ে বিদায় জানালো, শুভমও তাই করলো।
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক, আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা