Home কলাম এই মেঘ এই রোদ্দুর : শীত না আসতেই বলে যাই

এই মেঘ এই রোদ্দুর : শীত না আসতেই বলে যাই

বিদ্যুৎ সরকার : শীত না আসতেই বলে যাই। অস্থিতিশীল, ক্ষণস্থায়ী শীতের জন্য মায়া হতো। বছরের সিংহভাগ জুড়েই গ্রীষ্মের দাপট। অথচ এখানে তার উল্টো। শীত যাই যাই করেও কেন জানি অলস হয়ে পড়ে থাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। এবারের শীত এখানে সবাইকে ভুগিয়েছে, অসহিষ্ণু করে তুলেছে বার বার।

অনেক বছরের শীতের দুঃখময় স্মৃতিকে পুনর্জীবিত করে তুলেছে বিভিন্ন বর্ণে, অনুভবে। যতটুকু সময় আমরা শীতের প্রকোপ থেকে দূরে থাকি সে সময়টুকু ভীষণভাবে উপভোগ করতে সচেষ্ট থাকি। এখানে তাকে “সুখময় সামার” বলে আলিঙ্গন করি বার বার। তাই, এর আগমনীতে পুলকিত হই, চঞ্চল হই। সবান্ধবে, সপরিবারে হারিয়ে যাই দূরে কোথাও। কোথায় কোথায় যাব, কী কী করবো আগে ভাগেই নির্ধারিত করে ফেলি সময় হাতে রেখেই। বার-বি-কিউ (নতুন সংযোজন), পিকনিক, সাইট সিং তাই সামারকে ঘিরেই জমে উঠে। আর, শীতে জমে যায় তরল জলরাশি সরল আঙ্গিনায়। বরফ কুচি মন্দলাগাগুলো জমে জমে দুঃখের সাগরে রূপান্তরিত হতে থাকে সময়ের আবর্তে। অথচ, দেশের উষ্ণতাকে সুযোগ পেলেই আমরা গাল-মন্দ দেই- “মরার গরম বলে”। কিন্তু, এর ফাঁকে যদি এক পশলা বৃষ্টি ঝড়ে পড়ে আগাম জানান ছাড়াই আমরা যার পর নাই সুখী হই। দু:খগুলো ধুয়ে মুছে যায় অবলিলায় গ্রীষ্মের বারিধারায়। আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটি টিনের চালা ঘর আছে। বৃষ্টি পড়ার ঝুম ঝুম শব্দ আমার স্বপ্নগুলোকে ছিন্ন করে দেয়, ঘুম ভাঙিয়ে শব্দের করিডোরে টেনে নিয়ে যায় আমাকে। আমি টিনের চালের বৃষ্টির শব্দ শুনে শুনে তন্ময় হয়ে থাকি। কী দারুণ ছন্দময় শব্দ আমাকে বিমুগ্ধ করে রাখে সারাক্ষণ।

বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্ষীণ জলরেখা বর্ষার মৌসুমে কেমন ষোড়শী তন্বী হয়ে উঠে বৃষ্টির শীতল ছোঁয়ায়। জলের মাঝে মাছেদের শুভ দিনের দ্যুতিময় মহরত। চঞ্চল মাছেদের অবিরাম আনা-গোনায় বনমালীর চোখের দৃষ্টি স্থির হয়ে যায় ক্যামেরার জুম ল্যান্সের অটো ফোকাসে। মাছেদের আসা-যাওয়া বনমালীকে কেমন অস্থির করে তোলে। ভেসালের ‘ট্রায়াঙ্গাল’ জালের মায়াবী আহবানে মাছেরা ধরা দেয় বনমালীর সুখের খাঁচায়। বনমালী যেন যৌবন ফিরে পায় প্রান্তিক বয়সে। আমি ভেসালের টং-ঘরে বসে বনমালীর পুনর্যৌবন প্রাপ্তির স্থির চিত্রগুলো অনুভব করি। বনমালীর সুখ আমাকেও প্রভাবিত করে, আলোকিত করে। রোদেলা দুপুরের সবটুকু উত্তাপ বুঝি বনমালীর ধমনীতে প্রবাহমান রক্ত কনিকায় মিশে যায় নির্দ্বিধায়। বনমালীর ভেসালের তামাকের ঝাঁঝালো গন্ধে আমি “ফর ম্যান অনলি” পারফিউমের মিল খুঁজে পাই। কিছুদিন পরেই তো বাড়ির পাশের সেই ছোট্ট খালটিতে থৈ থৈ জলে অপরূপ হয়ে উঠবে। আমি আবার বনমালী দা’র ভেসালের মঞ্চ-নাটকের একক দর্শক হয়ে সুখ নিতে চাই। বনমালী দা তুমি কী আগের মতোন এখনও মনের ভেসালে সুখের জাল পেতে রাখ মুঠো মুঠো সুখ ধরবে বলে। বনমালী দা, আমিও তোমার ভেসালের টং-ঘরে বসে সুখের ছোঁয়া পেতে চাই, তোমার সুখে সুখী হতে চাই। বনমালী দা আমিও ফিরে আসবো তোমাদের কাছে। ঘাসের সবুজ গালিচায় শুয়ে শুয়ে দোয়েল, শালিকের পাখা ঝাপটা দেখবো, রঙ্গিন ঘুড়ির উড়াল দেখে দেখে মনকে রাঙিয়ে তুলবো আমার ফেলে আসা শৈশবের মতোন।

বিদ্যুৎ সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা

Exit mobile version