বিদ্যুৎ সরকার : আজ তুমি যেখানটায় বসে কথা বলছো ঠিক দুদিন আগেও স্থানটি এমন ছিল না। ছিল নানান রং এর মানুষ, নানান বর্নের ফানুস, হরেক সুরের গান, বিবিধ ঢং এর তান। রঙ্গীন কাপড়ে, কাগজে শোভিত চারিধার, গাছে গাছে রঙের খেলা, মৃত্তিকার কোলে ফাগুন মেলা। পৃথিবী এতো সুন্দর! প্রকৃতি এতো বৈচিত্রময়! এ মোহন বাঁশী বাজে এ কোন্ মধুর সুরে!
‘বাঁশী কেন গায় আমারে কাঁদায়….?’
‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত…’
শাখে শাখে কোকিল ডাকে, বহে ফাগুন হাওয়া।
সাত সাগর তের নদী পারি দিয়ে বকুল তলায়। বকুল গন্ধে বন্যা এলো দু’কুল ছাপিয়ে অথচ তুমি এলে না অকারণের কারণ দেখিয়ে। গান হলো, নাচ হলো, হলো আবৃত্তি। রঙ ছড়ালো শূন্যে, আকাশে বাতাসে। আদৌ মনে কি কোন রঙ লেগেছে! হৃদয়ের চার দেয়ালে রঙ্গিন জল ছবি এঁকেছে আন মনে?
শুধু মধ্যরাতে একটি মেল ট্রেন ছুটে যায় বুকের স্লিপার মাড়িয়ে বহুদূরে…….গন্তব্য নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে দার্জিলিং, মিরিক কিংবা সিকিম।
এমন করেই ফাগুন চলে যায় আগুনের পরশ না রেখেই। রেখে যায় কিছু স্মৃতি, কিছু গান আর কিছু উচ্ছল প্রাণ। প্রাণের প্রতি প্রাণের প্রগাঢ় টান। বিবাগী মন কি যে চায় সে তো নিজেও জানে না। অহেতুক অপেক্ষার প্রহর গুনা। অতঃপর তুমি এলে মধ্য রাতের শেষ ট্রেনের হুইশেলের রেশ টেনে। কী অদ্ভুত তোমার আগমন আর নির্গমনের পথ চলা। আঁচল উড়িয়ে অবুঝ ঘাস মাড়িয়ে সরাসরি বকুল তলায়। টুপ টুপ বকুল ঝরার শুভক্ষণ আসতে এখনো অনেক দেরি। তবুও কেন বকুল গন্ধে প্লাবিত হয়ে যায় এ সবুজ প্রান্তর! ‘বকুল ফুল বকুল ফুল সোনা দিয়া হাত কানও বান্ধাইলি…’ জলের গানের সুর বেজে যায় শালিকের ভেজা পালকের ডানায়। শান বাধানো বকুলতলা মঞ্চে বসে বসে ঘুম পারানি গল্প শোনালে আমায় আমিও ঘুমিয়ে গেলাম অবুঝের মতো। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলে অধির আগ্রহের সদ্য উন্মোচিত মৃত শিল্পের অমৃত ধারায়। অবাক হোয়ে দেখলে নির্বাক শিল্প কর্মসমূহ। একে একে সবকটি শিল্প কর্ম দেখে নিলে দু’চোখ ভরে। কতটা শিল্পীত হলে ওমন করে দু’দন্ড দাঁড়িয়ে ভাবতে হয়, বলতে ইচ্ছে করে ‘তাই বলে এতোটা সুন্দর!’
এক সময় সব আনন্দ, সব সুখের যবনিকা টেনে তুমি চলে গেলে নিজ ঠিকানায়। যেমন, বেলা শেষে সব পাখি ফিরে যায় আপন নিড়ে। হয়তো এটাই কাংখিত, এটাই শ্বাশত। নিয়মের ঘেরাটোপে আবেগ, উচ্ছ্বাস এখানে গৌন। নৈশব্দের মৌনতায় এক পাহাড় শূন্যতায় ভরে উঠে পাজর। দীর্ঘশ্বাগুলো আরও দীর্ঘ হতে থাকে ক্রমান্বয়ে।