বিদ্যুৎ সরকার : ওর সাথে যোগাযোগ নেই আজ অনেক দিন হলো। না দূরাভাষে কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম- এ কেমন অসামাজিক পথ চলা আমার? ইচ্ছে করলেই তো যোগাযোগ করতে পারতাম দু’ভাবেই বা যে কোন একটি মাধ্যমে। তবে, কেন করিনি? কোন্ ভাবনা থেকে এ অবস্থান আমার, কোন্ অপশক্তি আমাকে প্ররোচিত করেছে? আমি কী একটি নিছক “ডেড ডেড” খেলায় মেতেছি? “দেশ” পত্রিকায় এ শিরোনামে এমন একটি গল্প পড়েছিলাম অনেক বছর আগে। ‘টিনএজ’ নায়ক অনেকটা রোমান্টিসিজম, থ্রিলের মোহে এমন ধরণের “মরণ খেলা” খেলে প্রতিদিন তার সকাল শুরু করতো। সুযোগ পেলেই কোন চলতি গাড়ির সম্মুখ দিয়ে হঠাৎ রাস্তার এপার হতে ওপার চলে যেতো। একটু ব্যতিক্রম হলেই নির্ঘাত বড় রকমের দুর্ঘটনা! আমিও কী এমন একটি আত্মঘাতি খেলায় মেতেছি? তা না হলে যোগাযোগ করছি না কেন ওর সাথে? এ বিচ্ছিন্নতা কে কতটুকু দুঃখ পাবে? দুঃখ দুঃখ খেলার পরিণতি একটাই দুঃখের বলয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন চিরস্থায়ী বিচ্ছিন্নতা অস্তমিত হবে সে খেলা। সামাজিক এ বিচ্ছিন্নতায় আমি কতটা দুঃখে দুঃখিত হচ্ছি প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত তাতো আমি বুঝতে পারি, অনুভব করতে পারি। আর তিতলীর দুঃখের পরিমাণ, ওর অনুভ‚তি কিছুই তো বুঝলাম না- জানলাম না। শুধু অচেনা অজানা এক নিকষ কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন দুঃখময় গহŸরে তাকে ঠেলে দিচ্ছি প্রতিক্ষণ। সত্যি সত্যি কি আমি ওকে দুঃখ দিতে চেয়েছি। এ সাময?িক দূরত্ব, নিরবতা একটি শক্তিশালী বিচ্ছেদের দেয়াল নির্মাণে এক সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। তবুও তো করে ফেললাম, এখনও করে যাচ্ছি। ওর কোন্ অসাবধানতা, অবহেলা আমাকে এতোটা বিচলিত করেছে, অসহিষ্ণু করে তুললো, প্রতিহিংসা পরায়ন করে তুললো প্রতিশোধ নেবার লক্ষ্যে।
তিতলী না হয় একটু-আধটু ভুল করে থাকে মাঝ-মধ্যে। এ বয়সে এ রকম ভুল করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও কেন ওর ভুলগুলো মেনে নিতে পারিনি। ভুল করে ভুলে যেতে পারিনি। ওর ভুল আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে তা শুধু আমিই জানলাম, ওকে কেন জানাইনি। আমার কষ্টের কথা জানলে কি সে কষ্ট পেতো, এটা ভেবেই কি তাকে বলা হলো না। সাহস করে বলে ফেললেই তো হতো। না, এটা এমন কোন কঠিন কাজ ছিল না। সত্যি কথাটা স্পষ্ট করে বলার মধ্যে কোন দোষ দেখছি না তো । তবুও বললাম না আমি। বললে সে কি কিছুটা বিব্রত হতো, নিজের মনের আয়নায় নিজের কৃত কর্মের প্রতিচ্ছবিগুলো দেখতে পেতো- তাতে না হয় সে অল্প বিস্তর সঙ্কুচিত হতো, কী হতো তাতে? এ অবস্থা তো ক্ষণিকের জন্য, দীর্ঘ কালের জন্য নয় মোটেও। এ অবস্থায় আসার মূলে আমিই দায়ী- আমি নিজ থেকেই মেনে নিলাম। তবুও তিতলীকে দোষ দিচ্ছি না। ওর ছোট্ট ছোট্ট ভুলগুলো না হয় ছোট্ট ছোট্ট দুঃখ হয়ে জমে থাকবে মনের “ডীপ ফ্রিজে”। মাঝে মাঝে বের করে মিলিয়ে দেখবো বহমান সুখের পরিমানের সাথে। কতটুকু দুঃখ দ্রবীভ‚ত হতে পারে কতটুকু সুখে। তিতলী আমি তো হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্বে থেকেও তোমার কাছে ডাক পাঠাই হৃদয় নামক ছোট্ট “ফেসবুকে”। যা কোনদিন অবরুদ্ধ হবার নয় কোন বাহুবলে। হৃদয় দিয়ে অনুভব কর, দেখতে পাবে পরতে পরতে জমে থাকা আমার ডাকগুলো কি অভিমানে জেগে আছে আকাশের শুকতারা হয়ে। ট্রামের তারে আটকে থাকা ছেঁড়া ঘুড়িটা মনের মাঝে স্বপ্ন পুষে সমুদ্র দেখার। আমিও বুঝি আটকে আছি মনের তারে সকাল সন্ধ্যা অষ্টপ্রহর।
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা