বিদ্যুৎ সরকার : ক্লারা গোমস বয়স চব্বিশ – পচিশ হবে হয়তো, দীর্ঘাঙ্গিনী, কালো কোকড়ানো চুল, ঘাড়ের কিছুটা নিচ অব্দি, চেহারাটা মিশেল – এশিয়ান ও স্পেনিশ। ইংরেজি বলার ভংগিটাও তেমনি, ঠিক কানাডিয়ানদের মতোন বলা চলে না। ক্লারার সাথে প্রথম দেখা ড্যানফোর্থের শার্লি বারে। প্রথম দেখায় ও’র চঞ্চলতা আমার মনযোগ কেড়ে নেয়। নিয়মিত যারা এখানে এসে থাকে তাদের প্রায় সবার সাথেই ওর সখ্যতা। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধরাই যেন তার বেশি কাছের মনে হলো। আমি ড্যানফোর্থে নতুন, স¤প্রতি মুভ হোয়ে এসেছি। বাঙালী পাড়া বলে খ্যাত তাই এলাকাটা তাদের কাছেই অধিক প্রিয়। আমারও ধিরে ধিরে ভালো লাগতে শুরু করেছে। বাঙালীরা বারের চেয়ে রেস্টুরেন্টে চায়ের আড্ডায় অধিক মনযোগী। ওটাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আমার দুটোতেই আগ্রহের কমতি নেই। যখন যেমন তখন তেমন। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন বারে আসা হয় আমার। মেইনস্ট্রিট থেকে ড্যানফোর্থ- ভিক্টোরিয়া পার্ক ক্রসিং অব্দি রেস্টুরেন্টে ও বারের অনুপাত প্রায় সমান সমান। সুতরাং কোনটাই মিস করি না। শীত প্রধান দেশগুলোতে বার কালচারটা স্বাভাবিকভাবেই বারন্ত। যারা পুরনো অভিবাসী বা পরবাসী হোয়ে কানাডায় গোড়াপত্তন করেছে তারা অনেকটাই অভ্যাস পরিবর্তনে সার্থক হোয়েছেন। আমার মতন যারা স¤প্রতি এক যুগ কাল অতিক্রম করেছি তাদের কালচার না ‘প্রেমিক না বিপ্লবী টাইপের। সুতরাং আমি দুটোতেই আছি সমান তালে। শার্লিবার গ্রাহকদের নিয়মিত পদচারণায় মধ্যরাত অব্দি বেশ জমজমাট, প্রাণবন্ত থাকে। অবসর প্রাপ্তরা বার ওপেন হওয়ার সময় থেকেই আসতে থাকে। তাদের কোন পিছুটান নেই। যে প্রতিটি কাস্টমারকে ড্রিংক সার্ভ করে যাচ্ছে হাসিমুখে তার নাম লিসা। সুদূর চিন থেকে চলে এসেছে পরিবারের সাথে অনেক বছর আগেই। তার বর কিচেন সামলায়, দারুণ হাতের যশ তার। প্রথম দিন চিকেন উইংস ও ফিস্ ফ্রাই খেয়েই বুঝে গেছি আমাকে কতটা তৃপ্ত করতে পারবে সে। স্বামী-স্ত্রীর যৌথ প্রচেষ্টায়, ভালোবাসায় বারের সুনাম ও প্রসার দুটোই ঘটেছে ক্রমান্বয়ে। লিসাকে দেখে অবাক হতে হয় কেমন করে সকাল এগারটা থেকে গভীর রাত অব্দি হাসিমুখে একটানা কাজ করে যাচ্ছে সে।
দুপুর থেকে যে প্রবল স্নো- ফল হচ্ছিল, সন্ধেতে কিছুটা কমে আসলেও একেবারে থেমে যায়নি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের শীতের প্রকোপটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। এসেছেও অনেকটা আগে – ভাগেই। তবুও বলবো শীতকে কোন না কোনভাবে সামাল দেয়া গেলেও দেশের গড়মকে মেনে নেয়া খুবই কঠিন। এখানে শীত মৌসুমে লেয়ারের পর লেয়ার কাপড় পড়লেই শীতের প্রকটতা অনেকটাই লাঘব হয়। তবে ‘বø্যাক আইস’র সোহাগি ট্র্যাপের শিকার হতে হয়েছিল আমাকে। অল্পতেই সে যাত্রায় রেহাই, তবুও সপ্তাহ খানেক বেডরেস্ট থাকতে হয়েছিল আমাকে। যতই স্নো-ফল হোক কিংবা ঠান্ডা পরুক জন মানুষের চলাচল একেবারে থেমে যায় না তবে, কিছুটা হ্রাস পায় বৈকি। একে একে এরই মধ্যে অনেকেই বারে জমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নিয়মিত গ্রাহকগণ। কিন্তু ক্লারাতো এখনো এসে পৌঁছায়নি। কোন দিনইতো এতোটা দেরি হয় না তার। তবে কি আজ আসছে না সে? বলতে না বলতেই এক পাহাড় স্নোয়ের শুভ্রতা নিয়ে হুড়মুড় করে দরজা ঠেলে ঢুকলো ক্লারা। অভার কোট, বাহারি ক্যাপ হ্যাংগারে ঝুলিয়ে আমার সম্মুখে খালি চেয়ারটা পেয়ে ‘এক্সকিউজ মি, ক্যান আই সিট হিয়ার?’ ‘সিউর’ বলাতে সে একটি মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে দিয়ে ‘থ্যাংকস’ বলে বসে পড়লো। ‘ওড ইউ মাইন্ড ইফ আই অফার এ চিল্ড বিয়ার ফর ইউ?’ কালক্ষেপণ না করেই সাথে সাথে বলে উঠলো ‘সো নাইস অফ ইউ’। লিসাকে দু’টো হ্যানিকেন বিয়ার দিতে বলাতে সে চশমা মুছতে মুছতে চোখ তুলে তাকিয়ে হেসে বললো, হাউ ডু ইউ নো হ্যানিকেন ইজ মাই ফেভারিট?
– এ ক’দিনে কিছুটা হলেওতো তোমার সম্পর্কে বুঝতে ও জানতে পেরেছি আমি।
– আর কি কি জানলে আমার সম্পর্কে?
– তুমি প্রাণবন্ত, ভীষণ বন্ধু বত্সল, বয়োবৃদ্ধদের সাথে তোমার ভাবটা বেশি।
– তা হলে তুমি নিজকে খুব বয়স্ক ভাবছো?
– একেবারে কমও নয়, তোমার তুলনায় তো অবশ্যি।
– আসলে তুমি যতটা নও কিন্তু দেখাতে চাচ্ছ বেশি।
– ক্যান ইউ গীভ মি আ টুনি প্লিজ?
– মাত্র এক ডলার? কেন কি করবে? বলতে বলতে পকেট থেকে এক ডলার বের করে হাতে দিতেই উঠে গিয়ে রেকর্ড প্লেয়ারে ঢুকিয়ে গান সিলেক্ট করে প্লে করে দিতেই অনেক পুরনো বিখ্যাত একটি গান বাজতে শুরু করে দিল। ফ্রান্ক সিনাত্রা ও ন্যান্সি সিনাত্রার কণ্ঠে ‘ও সামার ওয়াইন….।’ বয়োবৃদ্ধরা প্রায় সবাই ক্লারার দিকে তাকিয়ে ওর চয়েজের জন্য তাকে প্রশংসা করলো। সবার পছন্দ এ গান, আমারও। কোলকাতা থেকে এর বাংলা ভার্সানও বেরিয়েছে তাও অনেক দিন হলো। ফিরে এসে চেয়ারে বসতে বসতে বললো –
এটা আমার প্রিয় গানগুলোর একটি। আমি যখন ছোট তখন বাবা এ গানটি গেয়ে গেয়ে আমাকে ঘুম পারাতেন। তখন আমি সবে স্কুলে যেতে শুরু করেছি। অনেক বড় হয়েও বাবার কাছে এ গানটি শুনেছি। তখন থেকেই এ গান আমার প্রিয় হয়ে প্রিয় হয়ে যায়।
– আগে কখনো তোমাকে এ গান বাজিয়ে শোনতে দেখিনি আমি।
– হুম, ঠিকই বলেছো তুমি। মাঝেমধ্যে বাজিয়ে থাকি তাও উইন্টার এলে।
– বিশেষ কারণ কি আছে এর পেছনে?
– ঠিক ধরেছো। এর পেছনে একটি সত্যি গল্প আছে। আমার বাবাকে নিয়েই গল্পের সূচনা। একটু দীর্ঘ হবে গল্পটা, তোমার ধৈর্য্য চ্যুতি ঘটবে নাতো?
– না না তুমি শুরু কর, আমি বরঞ্চ আরো দু’টি হ্যানিকেন নিয়ে আসি।
– তা হলে শুরু করা যাক। বাবা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, স্বভাবতই তাকে শিপে থাকতে হতো প্রায়শই। প্রতি সেলিং-এ অন্তত তিন থেকে চার মাস তাকে সমুদ্র মন্থনে যেতো এক বন্দর থেকে অপর এক বন্দরে, এক দেশ থেকে অন্য এক দেশে। যত বার জাহাজে যেতো ততো বারই বাবা আমার জন্য ও মা’র জন্য সুন্দর সুন্দর গিফট নিয়ে আসতো। শৈশবে আমার জন্য থাকতো নানান দেশের রকমারি খেলনা। আর যখন স্কুলে যেতে শুরু করলাম তখন কাপড়চোপড়, সাজার উপকরণসমূহ নিয়ে আসতো। ও বলা হয়নি, বাবা-মার বিয়ের ব্যাপারটাও সমুদ্র মন্থনেরই অংশ। মা’র কাছ থেকে শোনা, একবার ভারতের বোম্বে বন্দরে বাবার শিপ প্রায় বিশ দিনের মত এংকরে ছিলো মালামাল লোড-আন লোড করতেই। একদিন এক শপিংমলে মা’র সাথে প্রথম দেখা, পরিচয় এবং পরবর্তীতে পরিনয়। বাবা দেখতে যেমন হ্যান্ডসাম, তেমনি মাও বেশ সুন্দরী ও বিদুষী ছিল। বছরে দু-একবার বোম্বে আসতে হতো বাবাকে, এতে বাবাও খুশি এন্তার। দু’জনে দেখা হতো, কথা হতো, মুভি দেখা, নতুন নতুন রেস্তোরাঁয় খাওয়া, গিফট বিনিময় এসব রোমান্টিক সময় কাটাতো দু’জনে। অন্যান্য সময় কাজের ফাঁকে ফোনালাপ চলতো নিয়মিত। মা’র বি.এ অনার্স পাশের পরপরই সাত পাকে বাঁধায় পড়তে হলো দু’জনকে। অতঃপর বিয়ের দু’বছরের মাথায় মাকে চলে আসতে হলো বার্সলোনায় বাবার বাস্তুভিটায়। সেখানে এসে তাদের নতুন এপার্টমেন্ট, নতুন পরিবেশ ভালোই কাটছিল। তৃতীয় বছর আমার আগমন। দু’জনের সুখ আরো ত্বরান্নিত হলো আমার উপস্থিতিতে।
বছর কয়েক পর বাবা শিপিং কম্পানি চেঞ্জ করে হঠাতই সিদ্ধান্ত নেয় কানাডার ভেনকুভারে এক নতুন কম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কানাডায় চলে আসতে। মারও ইচ্ছে ছিল এমন সুন্দর একটি দেশে স্থানান্তরিত হওয়ার। বাবার নতুন কোম্পানির নতুন জব উইথ প্রমোশন ভালোই হলো। এরই মধ্যে আমারও স্কুলে যাওয়া শুরু। রান্না-বান্নার পর মার হাতে অফুরন্ত সময় থেকে। সময়টা কাজে লাগাতে বাসায় বসে বসে বুটিকের কাজ শুরু করে এবং এক সময় বানানো শেষ হলে এগুলো শহরের বিভিন্ন বুটিক শপে সাপ্লাই দিয়ে বেশ ভালোই উপার্জন করছিল। বিশেষ করে দীর্ঘ অবসর সময়ের অবসান ঘটিয়ে অর্থকরী ও অর্থপূর্ণ সময় কাটাতে সক্ষম হোয়েছিল।
– অনেক্ষণ ধরেই ননস্টপ বক বক করে যাচ্ছি নিশ্চয়ই তুমি বোর্ড হয়ে যাচ্ছ?
– মোটেও না, তুমি বলে যাও। বলতে পার গল্পের অন্দর মহলে ঢুকে গেছি। এখন একটি টার্নিং পয়েন্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এই যা।
– হুম, সে স্থান্টায় চলে আসছি, তার আগে কিছু খেলে কেমন হয়?
– ঠিক বলেছো, লিসাকে বলি কিছু চিকেন ফ্রাই দিতে সাথে কিছু এক্সট্রা অনিওন আর গ্রিন চিলি দিয়ে দেয় যেন। গ্রিন চিলি, অনিওন তোমার কেমন লাগে?
– দারুন, তা আর বলতে! নিশ্চয়ই জেনে গেছ আমার মধ্যে এশিয়ান ও স্পেনিশ বøাডের মিশ্রণ রয়েছে সুতরাং কুচ্ বাত নেহি!
– আরে, তুমি দেখি হিন্দিটাও জান?
– মা মূলত কোলকাতার মেয়ে থাকতো বোম্বে তাই, বাংলার সাথে হিন্দিটাও কিছু কিছু শিখে ফেলেছি। যখন মা তার বান্ধবীদের সাথে ফোনে কথা বলতো সেই ফোনালাপ থেকেই আমার হিন্দিটা শেখা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেট ভর্তি ফ্রাইড চিকেন উইংস নিয়ে এল সাথে এক্সট্রা গ্রিন চিলি ও অনিওন মিশিয়ে। ‘ইয়ামি’ ক্লারার স্বগত উচ্চারণ। ক্লারা খেতে খেতে বলতে লাগলো, মা’র বুটিকের কাজ ব্যবসায়িক সফলতা পেতে থাকলে একই পেশার অপর এক বন্ধু ইশান-কিশানের সাথে যৌথভাবে একটি বুটিক শপ খুলে বসলো। কিশানও বোম্বের ছেলে, মায়ের চেয়ে বয়সে অনেক কম কিন্তু বন্ধু হিসেবে দারুন। প্রথম দেখায় কথা বলে প্রেমে পড়ার মত তার সুন্দর, আন্তরিক ব্যবহার। মার এখন সময় কাটে ভীষণ ব্যস্ততায়। আমাকে রেডি করে স্কুলে পাঠানো আবার স্কুল শেষে দুজনে একসাথে সুন্দর সময় কাটানো। যতক্ষণ আমি স্কুলে থাকতাম সে সময়টা রান্না-বান্না ঘরের অন্যান্য কাজ শেষ করে কিশান আন্কেলের সাথে তাদের বুটিক শপে চলে যেতো। ঠিক আমার স্কুল শেষ হবার আগেই বাসায় চলে আসতো। স্কুলে বাসে যাওয়া-আসার দরুন মা অনেকটা বেশি সময় পেতো অন্যসব কাজে মনোযোগ দিতে।
– তোমার বাবার কথা কিছু বল।
– বাবা একবার জাহাজে গেলে অন্তত তিন-চার মাস থাকতে হতো জাহাজে। আমি ভীষণ মিস করতাম বাবাকে। যখন ফিরে আসতো আমার খুশীর সীমা থাকতো না। সে সময়গুলোতে সারাক্ষণ আমাকে ঘিরেই তার দিবস ও রজনী। মা তখন আরো অধিক সময় বুটিক শপের জন্য দিতে পারতো। যদিও বাবার কাছে বিষয়টি ভাল লাগতো না। তখন আমি স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবো। ঠিক এর মাস খানেক আগে এক রাতে হঠাত পাশের রুম বাবা-মায়ের চেচামেচিতে আমার ঘুম ভেংগে যায়। তুমুল বাগবিতণ্ডা কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম এর মূল কারণ। অল্প স্বল্প যা বুঝলাম তাতে মার সংসারের প্রতি উদাসিনতা, বুটিক শপ, ইশান-কিশান কাকু সম্পর্কিত কি কি বলছিল। হয়তো বাবার দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিতি তাদের দু’জনের মধ্যে গড়ে উঠা গোপন প্রেম নিয়েই উচ্চ স্বরে কথা হচ্ছিল। আমিও ব্যাপারটি বেশ কিছু দিন ধরেই খেয়াল করে আসছিলাম। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে সাহস করিনি। পরদিন সকাল থেকেই সব কিছু কেমন এলোমেলো মনে হচ্ছিল। বাবা এক ঘরে বসে ড্রিংক করছিল, মা রান্নাঘরে ভারি মুখ করে হয়তো কিছু রান্না করছিল। কোন কথা নেই এমন কি আমার সাথেও না। সবখানেই ঝুম নিরবতা – নিস্তব্ধতা। মা আর সেদিন বুটিক শপে যায়নি। আমি পড়ার টেবিলে বসে এলো-মেলো, আবল-তাবল কত কিছুই না ভাবছিলাম। পরদিন সকাল বেলায় হঠাত সব কিছু বদলে গেল। দরজা খোলা, মা কোথাও নেই। টেবিলের উপর এক টুকরো কাগজে লিখা ‘আমাকে খুঁজো না প্লিজ, তোমরা ভাল থেকো।’ সকালের সমস্ত আলো যেন নিভে গেল আমাদের ঘর, উঠোন সবখান থেকেই। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাবা একটা চেয়ারে আনমনে বসেছিল। মনে হলো কোথাও কেউ নেই। একটি শূন্যতা, একাকিত্বতা আমাকে গ্রাস করছিল বুঝি। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি মোটেও, শুধু এপাশ ওপাশ। মাকে খুঁজতে সকালেই বের হলো বাবা। বুটিক শপে তালা ঝুলছিল। সম্ভাব্য সকল জায়গায় খুঁজে ব্যর্থ হয়ে বাসায় এসে ক্লান্ত – শ্রান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয়। তাকে কিছু বলার সাহস হছিল না মনের এ অবস্থার মধ্যে। বাবা ভীষণভাবে ভেঙে পরেছিল, আমারও সে একই অবস্থা। অস্তগামী সূর্য যেমন জানান দিয়ে যায় একটি দিনের অবসানের খবর তেমনি, একটি সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা সহজেই ইতি টেনে দেয় প্রগার ভালোবাসার। ক্লারা এসব বলতে বলতে অনেকটাই ইমোশনাল হয়ে পড়েছিল। তার মনের এ অবস্থার অবসান ঘটাতে বাইরে গিয়ে সিগারেট খাবার প্রস্তাব দেই। বাইরে তখনো তুষার ঝরছিল। সিগারেট ধরাতে ধরাতে ক্লারা বললো, ‘আগে কখনো সিগারেট বা এলকহলের অভ্যাস ছিলো না। বাবার আকস্মিক মৃত্যু আমাকে এ দু’টোতে আসক্ত হতে বাধ্য করে। শার্লি বারটা আমার প্রিয়। বাবাও প্রতি সন্ধ্যায় এখানে আসতো। প্রায় রাতেই ড্রাংক হয়ে বাসায় ফিরতো। তার না আসা অব্দি আমি জেগে থাকতাম। একদিন সারারাত জেগে থাকলাম কিন্তু বাবা ফিরে এলো না। সেদিনও প্রচন্ড তুষারপাত হচ্ছিলো। ভোরের আলো না ছড়াতেই আমি বাসা থেকে বের বয়ে শার্লিবার অভিমুখে হাঁটতে গিয়ে কিছু দূর না যেতেই পুলিশের জটলা দেখতে পেলাম। কাছে গিয়ে আমি হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলাম বাবার শক্ত মৃত মুখটি দেখে। পুলিশের ভাস্য মতে জানতে পেলাম রাতের প্রচন্ড তুষার ঝড়ের কবলে পরে সে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় এবং সে অবস্থা থেকে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়। হয়তবা অত্যাধিক মদ্যপানের দরুন এমনটি হয়ে থাকতে পারে। আমাদের ছেড়ে মায়ের চলে যাওয়া বাবার টরন্টো চলে আসার অন্যতম কারণ। দুঃখ, অপমান তাকে অনেকটাই বিমর্ষ করে তুলে ছিল। তাই সবকিছু গুটিয়ে টরন্টোয় স্থানান্তরিত হয় কিছুদিনের মধ্যেই। আমার একাকিত্ব ঘুচাতে বাবা জাহাজের চাকরি ছেড়ে দেয় এবং কিছু টাকা খরচ করে একটি গ্রোসারি শপ চালু করে। এমত অবস্থায় তার অকালে চলে যাওয়াটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তখন থেকেই আমার সিগারেট ও এলকহোলে আসক্তি। অফিস থেকে ফিরে প্রতিদিন বাসার কাজ শেষ করে চলে আসি শার্লিতে। শীতের দিনে তুষারপাত হলে বাবাকে স্মরণ করে তার-আমার প্রিয় গানটা বাজাই শার্লিতে এসে। দেখ সেই কখন থেকে একনাগারে আমার কথাই বলে যাচ্ছি সার্থপরের মত। তোমার কথা কিছুই শোনা হলো না।
– আমার তো বলার কিছু নেই। ছোট গল্পের চাইতেও ছোট্ট। বিয়ের দু’বছর পর চলে এলাম কানাডায়। দু’জনেই জব করছিলাম, মোটামুটি স্বচ্ছলতায় দিন চলে যাচ্ছিল। এমনি এক উইন্টারে নায়েগ্রা গিয়েছিলাম লং উইক এন্ডে ছুটি কাটাতে। যে দিন ফিরছিলাম ভীষণ তুষার পাত হচ্ছিল ওখানে, আমার স্ত্রী বারন করছিল ড্রাইভ করতে। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও তুষার ঝড় কমছিল না। তাই, বাধ্য হয়েই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্তে¡ও ফিরে আসতে হচ্ছিল। তখন আমরা প্রায় টরন্টোর কাছাকাছি চলে এসেছি, একটি কাভার্ডভেন হঠাত আমাদের গাড়িটিকে সম্পূর্ণভাবে চাপা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে দেয়। আমি কোন অবস্থাতেই গাড়ি কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। দু’জনেই মারাত্মক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমরা দুজনেই হাসপাতালের বেডে শায়িত ছিলাম। তখনও লুনার জ্ঞান ফিরছিলো না। চারদিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে শেষমেষ পরাজয় বরণ করে নেয়। আমাকে পনেরদিন পর হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে। তার পরও অনেক দিন আমাকে বেডরেস্টে থাকতে হয়েছিল সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে উঠতে। এখনো তার কিছুটা রেশ রয়ে গেছে। লংড্রাইভ করলে বেক বোনে ব্যথা অনুভূত হয়। এখানেই আমার গল্পের শেষ। অতঃপর ডাউন টাউন থেকে ড্যানফোর্থে একটি এক কামড়ার বাসায় চলে আসা। একার সংসার একা একা রান্না বান্না করে খাচ্ছি ঘুরছি ফিরছি।
– এত্তো ঘটনাবহুল জীবনের এতো ছোট্ট বর্ণনা বেমানান হোয়ে গেল নাকি? তোমার প্রেম, ভালোবাসা, পরিনয় এসব কিছুইতো বললে না!
– সেটাতো হাসপাতালের সফেদ বিছানায় অন্তিম রেখা টেনে দিয়েছে।
– বুঝেছি তুমি এ বিষয়টি নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছো না। হুম, ইমোশনাল প্রসংগ নিয়ে অনেকেই কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে না। কিন্তু আমি এর উল্টোটা। দেখলে না কথা নেই বার্তা নেই প্রথম আলাপেই আমার জীবনের ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছু সবিস্তারে বিরতিহীনভাবে বলে গেলাম। যারা আমার কষ্টের এ জীবন কাহিনি আগ্রহ নিয়ে শুনতে চায় আমি তাদের কাছেই শুধু বলি। এতে করে আমার দুঃখ, ক্ষোভ, একাকিত্ব অনেকাংশেই ঘুচে যায়। যারা আমার কথা শোনে তারাই আমার কাছের মানুষ বন্ধুজন বলে ভেবে নেই। এখানে যারা ববয়োবৃদ্ধ তারা সবাই আমার এ কাহিনি শুনেছে এবং আমিও তাদেরকে আপনজন, বন্ধু করে নিয়ে নেই। এই যে আজ তুমি আমার এ জীবন কাহিনি শুনলে মনযোগ সহকারে তুমিও তো আমার বন্ধু হয়ে গেলে। যদিও তোমার বয়সটা ওদের তুলনায় অনেকটাই কম। এটা বলাতে নিশ্চয়ই তুমি ওদের তুলনায় বেশিই খুশি হলে? আর আমি কখনো বন্ধুত্বের ব্যাপারটা বয়স দিয়ে মেপে দেখি না। যে কোন বয়সের ব্যক্তি আমার বন্ধু হয়ে যেত পারে। ছোট, বড় আমার কাছে মেটার করে না। অনেক রাত হলো এখন ওসব থাক। এখন থেকে সম্ভব হলে প্রতি সন্ধেতে আমাদের দেখা হবে আর কোন না কোন প্রসঙ্গ নিয়ে গল্প হবে।
বেশ কদিন ক্লারার সাথে দেখা নাই। ও’র ফোন নাম্বার, বাসার ঠিকানা কোনটাই আমার জানা নেই। সেদিন ওর সাথে এতো কথা হলো এতক্ষণ ধরে কেন যে অন্তত ফোন নাম্বারটা জানা হলো না। ক্লারাওতো নিজ থেকে দেয়নি কিংবা চায়নি। বাধ্য হয়ে লিসার শরণাপন্ন হতে হলো। লিসা খুব সহজভাবেই জবাব দিল, ‘হয়তো কোথাও বেড়াতে গিয়েছে তাই আসছে না।’ লিসা কেমন করে জানবে একটি রাতের দীর্ঘ আলাপ – চারিতা কতো সহজেই না পরস্পর কে হৃদয়ের কতটা কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে। এ পরিস্থিতিতে কারোর পক্ষেই একে অপরকে না জানিয়ে কোথাও চলে যাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। লিসাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম, সে ক্লারার কোন ফোন নাম্বার ঠিকানা জানে কি না? লিসা এবার কিছুটা গুরুত্ব দিয়ে জবাব দিল, “ওর ফোন নাম্বারটা আমার জানা নেই তবে ক্লারার এপার্টমেন্ট আমার দুটি এপার্টমেন্টের পরেই। সুতরাং আমার বাসার ঠিকানা তুমি নিতে পার বেশি প্রয়োজন মনে করলে।”
দরজা নক্ করতেই মধ্য বয়সী এক মহিলা দরজা খুলে দিয়ে ভিতরে যেতে বললেন। ক্লারার কথা জিজ্ঞেস করতেই অপর একটি ঘরে আমাকে নিয়ে আসলো। ক্লারা বিছানায় শুয়ে, তার একটি পা ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় ট্র্যাকশন দিয়ে শূন্যে ঝুলানো। বুঝতে অসুবিধে হলোনা এটি কোন এক্সিডেন্টেরই ফলাফল। অনেকটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলো ক্লারা কেমন করে তার আবাসস্থল খুঁজে পেলাম?
– হৃদয়ের টান থাকলে খুঁজে পেতে অসুবিধে হয় না। তার আগে বল এমনটা হলো কেমন করে?
– সেদিন ভীষণ স্নো-ফল হচ্ছিল, তারাহুরো করে শার্লি বারের দিকেই যাচ্ছিলাম, হঠাত করেই অসাবধানতা বশত বø্যাক আইসে পা রাখতেই ধরাশায়ী। কোন অবস্থাতেই উঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না। এম্বুলেন্স এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে একরাত থাকার পর বাসায় ফিরে আসি। কিন্তু আমার জানতে ইচ্ছে করছে কেমন করে তুমি আমার ঠিকানা পেলে?
– বেশ কদিন তোমার অনুপস্থিতির বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তুলছিল। হঠাত করে তোমার এমন কী হলো যে তুমি এতদিন ধরে আসছো না? সিরিয়াস কোন অসুখ-বিসুখ না তো? সে রাতে আমরা কতোক্ষণ আলাপচারিতায় মত্ত ছিলাম কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কেউ কারোর ফোন নাম্বারটি পর্যন্ত জানতে চাইনি। বুদ্ধি করে লিসাকে জিজ্ঞেস করতেই এ পথ বাতলিয়ে দিল।
– তোমার চেষ্টার তারিফ করতে হয়। বল কি খাবে হট অর কোল্ড?
– এ ঠান্ডায় হট বø্যাক কফিতেই কাফি। এখন বল আর কতো দিন এ অবস্থায় থাকতে হবে?
– ডক্টর বললো মিনিমাম একমাস, বর রকমের ফ্রেকচার ধরা পরেছে। মন খারাপ হোয়ে গেল শার্লিতে যেতে পারবোনা বলে? তাতে কি তুমি না হয় একটু কষ্ট করে চলে আসবে।
– তাতো আসতেই হবে যেহেতু তুমি একমাস বিছানা ছেড়ে মুভ করতে পারবে না। তোমার কেয়ার গিভার কতোক্ষণই বা তোমাকে সময় দেবে বল? বাকীটা সময় তো তোমাকে একা একাই থাকতে হচ্ছে। এমন অসুস্থ অবস্থায় একা একা থাকার বিরম্বনা শারীরিক ও মানসিক দু’ভাবেই একজনকে ভীষণভাবে দুর্বল করে দেয়। এ অভিজ্ঞতার পরশ আমি অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছি।
– তুমি পাশে থাকলে আমারও সময়গুলো ভালোই কাটবে, তাইনা? দিনভর গল্প করা যাবে দু’জনে মিলে।
ক’দিন বিভিন্ন কাজের চাপে ক্লারার ওখানে যাওয়া হয়নি। তবে এবার আর সে বোকামিটা করিনি, পরস্পরের ফোন নাম্বার দেয়া-নেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই একটু সময় পেলেই ফোনে কথা বলি। তবুও কেন জানি মনে হয় ফোনালাপ আর সামনাসামনি আলাপের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য রয়েছে। আজ হাতে কোন কাজ রাখিনি সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট করে সরাসরি ক্লারার কাছে ছুটলাম। পথে মেট্রো থেকে এক থোকা নানান রংগের গোলাপ নিয়ে নিলাম ওর জন্য।
– ওয়াও, এতো ফুল! কার জন্মদিন, তোমার না আমার?
– তোমারও না আমারও না-মন খারাপের। মন খারাপ থকলে ফুল দিতে হয়, ফুল দিলে মন ভালো হয়ে যায়।
– তাই নাকি? এটাতো আমার জানা ছিল না ভালোই হলো, তোমার মন খারাপ হলে আমিও তোমাকে ফুল দেব। আর, তুমি জানলে কি করে গোলাপ আমার ভীষণ প্রিয়?
– মন দিয়ে মনের খবর জেনে নেয়া যায়।
– তুমি আমার কি কি জান?
– সময় হলেই জানতে পারবে।
– বাব্বা বেশ কথা শিখেছো এ দু’দিনে?
– “কথায় কথায় যে রাত হয়ে যায়, সে কথা রয় যে বাকী….”
– কী ব্যাপার তুমি দেখছি সকালকে রাত বানিয়ে ছারবে, সবেতো এলে এখনেই রাত?
– একটি গানের লাইন মনে পড়ে গেল যে। বল তোমার শরীর কেমন?
– শরীর মোটামুটি তবে একটু জ্বর জ্বর ফিল করছি।
– দেখি তোমার কপালটা ছুঁয়ে, কেমন জ্বর? তাপ তো একটু বেশিই – একটু ঠান্ডা জল দিই? ভাল লাগবে।
– না, থাক এমনিতেই কপালটা ছুঁয়ে থাকো ভাল লাগছে।
– বাইরে কী দেখছো অবাক হোয়ে?
– দেখছি একটি বো-কাট্টা ঘুড়ি, ইলেকট্রিক তারে ঝুলে আছে। না পারছে নিজেকে মুক্ত করে উড়ে যেতে কিংবা মাটিতে নেমে আসতে, ঠিক আমারি মতো অবস্থা।
– তার মানে কি, বুঝতে পারলাম না তো?
– এই যে আমি যেমন কাছে আসার অধিকার পাই না বা দূরে চলে যাবারও নিশ্চয়তা পাই না শুধুই নিষ্ফল অপেক্ষা ।
– সবুরে মেওয়া ফলে প্রবাদটা তো জান। শোন আজ রাতে তোমার বাসায় ফেরা হচ্ছে না। সন্ধেতে সিভিয়র স্নো-ফল হবে। জেনেশুনে তোমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিব আমি? আর, তোমার জন্য ভুনাখিচুড়ি ও হাঁসের মাংস রান্না হচ্ছে। তোমার আসার খবর জেনেই এসবের আয়োজন। পাশের ঘরতো খালিই পড়ে আছে ওখানে থাকবে আর কি।
– ঠিক আছে থাকবো না হয় তবে একটি শর্তে।
– কি তোমার শর্ত শুনি?
– আজ সারা রাত শুধু গল্প আর গল্প।
-কিসের এতো গল্প, কাছে থাকার না কি দূরে যাবার?
– সঠিক সময়েই সঠিক বিষয়টির প্রকাশ ঘটবে ভেবে নিও। আস্থা ও ধৈর্য একজনকে তার লক্ষে পৌঁছতে শতভাগ সহায়তা করে থাকে।
বেশ অনেকটা রাত করেই ডিনার শেষ হলো। খেতে খেতেও হাজারো প্রসঙ্গ, হাজারো গল্প।
হাত ধুতে ধুতে জানতে চেয়েছিলাম এর পরেও কি গল্পের ধারা চলমান থাকবে?
– তুমি চাইলেই হবে।
– তোমার একটি মাত্র রাত না হয় আমার জন্য ব্যয় করলে।
– শুধু একটি মাত্র রাত কেন চাচ্ছ, ইচ্ছ করলে আমার জীবনের বাকীসব রাত তোমার জন্য দিয়ে দিতে পারি।
কথা বলতে বলতে ভোরের আলোর রেখা আস্তে আস্তে গাড় হয়ে আসছিল। আমি উঠে গিয়ে দু’মগ বø্যাক কফি বানিয়ে নিয়ে আসলাম। ক্লারার মুখে আনন্দের ঝিলিক।
– তুমি আমার না বলা অনেক কথাই বুঝে নিতে পার খুব সহজেই এ জন্য তোমায় এতো এডমায়ার করে থাকি। তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও একটু ছুঁয়ে থাকি।
– একটু কেন, যতক্ষণ ইচ্ছে যতদিন ইচ্ছে তুমি ছুঁয়ে থাক আমার এ হাত এ দেহ। ….তোমার ছোঁয়ায় ইচ্ছেগুলো আমায় জড়িয়ে থাকে। ঘাসে কুয়াশার আবেশে তোমার পদচিহ্ন রেখে গেছো কোন্ সকালে কেউ তা জানে না।
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা