বিদ্যুৎ সরকার : আমার বন্ধুভাগ্য সুপ্রসন্ন। হাত বাড়ালেই বন্ধু। যখন তখন বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি বিভিন্ন পর্যায়, ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অভিন্ন মানসিকতায়। শৈশব, কৈশোর যৌবন এমন কি এ বার্ধক্যে এসেও নতুন নতুন বন্ধু নির্মাণে এতটুকুও আগ্রহ হারাইনি। স্কুল থেকে কলেজ অতঃপর ইউনিভার্সিটি এ ক’বছর প্রচুর বন্ধু হয়েছে আমার। চাকরিকালীন অবস্থায় বন্ধু, মহল্লার বন্ধু, ভাসমান বিভিন্ন আড্ডার বন্ধু। এদের অনেকেই ঝরে গেছে কারণে – অকারণে আবার অনেকে এখনো বন্ধুত্বের নিগুঢ় আবেশে ও আবেগে জড়িয়ে আছে অনন্তের সহযাত্রী হয়ে। স্বার্থহীন ভালোবাসার ভালো লাগায় বন্ধুত্ব অমলিন চিরকাল, চিরজীবী। দেশ ছাড়ার প্রাক্কালে কিছুদিন আমাকে মনোকষ্টে ও বিষন্নতায় ভুগতে হোয়েছিল বন্ধু বিচ্ছেদের শংকায়। এতদিনে সুগঠিত, সুনির্মিত বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি আমাকে এতোটাই বিচলিত করেছিল।
টরন্টো চলে আসার দিন উড়োজাহাজের জানালা দিয়ে যতক্ষণ সবুজ বনভূমির রেখাটি দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলাম আর বন্ধুদের কথা ভাবছিলাম। আবার কবে বন্ধুদের সান্নিধ্যে ফিরে আসবো, প্রিয় ভূমিতে স্পর্শ রাখবো সযতনে। বিগত কয়েক বছর ধরে একটি বিষয় আমাকে খুব আলোরিত ও আলোকিত করেছে আমার অজান্তেই। যখনি প্লেন টেক অফ করে টরন্টোস্থ বন্ধুদের জন্য মন কেমন করে উঠে। একটা কষ্ট কষ্ট আবহ সৃষ্টি হয় মনের মাঝে। দুবাই আসা মাত্র মনের মধ্যে রিভার্স স্যুইং হয়ে দেশের বন্ধুদের কাছে পাবার আনন্দে বিভোর হয়ে পড়ি নিমিষেই। দ্বিমুখী ভালো লাগার ভালোবাসায় আমি আচ্ছন্ন এখন। এখন সময়গুলো ভীষণ অসময়ে চলে যায় বানের জলের মতোন। সময়ের ইচ্ছা – অনিচ্ছায় সময়ের আসা-যাওয়া। তাই সময়ের রিলে রেসে কখনো সখনো পশ্চাতে পরে যেতে হয় অনায়াসেই। কেন যে সময় করে সময় মত উদ্দিপিত হই না নিজ থেকেই। এই মেঘ, এই রোদ্দুর। বৈরি আবহাওয়ায় বিবাগী মন ভেসে ভেসে যায় ঠিকানাহীন কোন্ সে দূর দেশে?
বিদ্যুৎ সরকার ঃ লেখক, আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা