বিদ্যুৎ সরকার : তিতলী তুই ফিরে আয়
তিতলী তুই ফিরে আয়, তিতলী তুই ফিরে আয়। আবার আমরা সন্ধ্যেতে মুঠো মুঠো জোনাকি ধরবো, ঘরের মধ্যে আলোকসজ্জা গড়বো। সরষে ক্ষেতে দু’জনে মিলে কেমন করে ছুটতাম রঙ্গিন ফড়িং-এর পিছু পিছু; তিন সত্যি বলছি, তোর জন্য অনেকগুলো রঙ্গিন ফড়িং ধরে দেবো আমি। লাটিম ঘুরাতে পারতিস না বলে তোর অনেক অভিমান। তোর হাতে ঘুর্ণায়মান লাটিমের শিহরণ তুলে দেবো। আবার আমরা স্নান করতে গিয়ে পুকুর পাড়ে বালি দিয়ে পাহাড়, ঘর বানাবো, জলের ঝাপটায় ভেঙ্গে ফেলার খেলায় মাতবো। কতদিন গল্প শোনা হয় না, ‘ঠাকুর মার ঝুলি’ বইটি রেখে দিয়েছি যতœ করে। তুই এলেই আমাদের গল্পের আসর জমবে। বটতলার পৌষ সংক্রান্তির মেলা ভীষণ মিস করছিস, তাই না রে? এবার মেলায় গিয়ে তোর কথা ভেবেই বিন্নি ধানের খই, রেশমি চুড়ি, চিনির তৈরী ঘোড়া, মাছ তোর জন্য কিনে এনেছি। মনে পড়ে উঠোনেতে সবাই মিলে রান্না-বান্না, কদম ফুলের পাপড়ি ছিড়ে ছিড়ে পোলাউ, খিচুড়ি, ইটের গুঁড়োর মশলা কতো কীনা হতো! কাচা নারকেল পাতা দিয়ে হাত ঘড়ি, চশমা পরে যেদিন তোর সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলাম তুইতো হেসে কুটি কুটি। সময়ের প্রলেপে কোন স্মৃতিই মুছে যায়নি এখনও। বৃষ্টির দিনে ডুব দিয়ে বৃষ্টি পতনের শব্দ শোনার আনন্দটাই অন্যরকম। শাপলার তৈরি মালা পরে রাজা-রাণী খেলা- অদ্ভুত এক মুগ্ধতা, কোন কিছুতেই যে মুগ্ধতা হারিয়ে যায় না। চৈত্রের রোদপোড়া দুপুরগুলোয় টিনের চালে আমের বোল পরার টুপটাপ ছন্দময় শব্দ আহা কেমন মাতাল করে রাখতো আমাদের। জামরুল গাছের কোটড়ে লুকিয়ে তোর অদেখা দোয়েলের নীলাভ ডিমের স্বপ্ন এবার দেখাবোই তিতলী। তুই ফিরে আয় তিতলী, মেঘেদের ডানায় ভর করে আমাদের চেনা নীল আকাশের সামিয়ানায় রঙ্গিন ঘুড়ি হয়ে।