হিমাদ্রী রয়: দরজা শুধু ঘরেরই হয় না মনেরও থাকে, আর কতশত স্বপ্ন, আশা, অপূর্ণতা সেখানে খিল দেওয়া থাকে। বাইশের প্রথম বিষময় লকডাউনের মাঝে তুষারের চাদরে ঢাকা পড়েছিল শহর, বাহিরে ঝলমলে রোদ তবু যেন প্রাণ জাগে না। উত্তরের জানালা এমনকি পর্দাটাকেও বিষন্ন লাগে পৃথিবী আর কতদিন রবে মরণ ঘুমে আচ্ছন্ন।

তিন সপ্তাহের আবার নতুন করে ঘরবন্দীর সুযোগে মনের স্যাঁতসেঁতে কয়েদ খানায় হানা দিয়ে গেছে কত বিচিত্র ভাবনা, কাটে না সময়ের সাথে আলাপন, না লেখা গল্পের সাথে কফির কাপে চুমুক।

এর মাঝে কিছু দিবস এসেছে আবার চলেও গেছে। দেখি কখনো চারণ কখনো উচ্চারণ, আবার কখনো রিয়েকশান, দায়িত্ব নিয়ে গ্রহণ কিংবা নিজেকে পরিবর্তনে আমরা কখনই আগ্রহী ছিলাম না এখনো নেই। এভাবেই চলছে যাপন এইতো জীবন।
তারপর জীবনের পাতা বেয়ে রাত আসে নিরবতায় শুরু অতীতের ময়নাতদন্ত।
আগে ঘরের পাশে প্রতিবেশী ছিলো এখন ঘরের ভিতরেও প্রতিবেশী। এক পরিচিত জনকে খুঁজে না পেয়ে তার ছেলেকে ফোন করেছিলাম বললো আমিতো উপরে দেখি ফোন করে বাবা হয়তো বেইসমেন্টে। এক ছাদের নিচে অথচ সবাই পরিবার থেকে প্রতিবেশী হয়ে যাচ্ছি।

নিজে ভুক্তভোগী হয়ে বলছি কত সম্পর্ক সময় চেয়েছে দিতে পারিনি এখন সময় আছে সম্পর্ক মরে গেছে, কিছু হারিয়ে গেছে, কিছু বুড়িয়ে গেছে আর কিছু স্বার্থ আর জটিলতার গোলকধাঁধায় নিজের কাছে ফুরিয়ে গেছে আর জড়াতেও চাই না। অথচ মামা বাড়ির খেজুর গাছটার সাথে সম্পর্ক জড়িয়ে আছে আজো। শীতের সকাল এলেই স্মৃতিতে চুইয়ে পড়ে রস এখনও।

ফেইসবুক নোটিফিকেশন বন্ধু সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে সবাই আলোর গতিতে ছুটছে তাই আঁধারে বসে সবাইকে দেখা যায় না, প্রতি মুহুর্তে কোন না কোন অর্জনের উদযাপন।
আমার জীবনে অহংকারের বেলুন ফুলানোর মত কোন অর্জন নেই, সূর্যের অমিত ত্যেজ হয়তো আমার নেই কিন্তু কেরোসিনের প্রদীপ জ্বালাতে ক্ষতি কি। সিঁড়ি ভেঙে আকাশটাকে দেখি, নারিকেল গাছের পাতার ফাঁকে রোদের অল্প একটু ঝিলিকের মতো ভালোবাসা আসে গ্রহণ করে তৃপ্ত হই। জীবনে কিছু স্বজন তো আছে যে সম্পর্কের মধ্যে জীবন আছে, উদ্বিগ্নতা নিয়ে জানতে চায় কুশল। জশকে নিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে আমি কৃতজ্ঞতায় নত হই।
সবসময় যে ভয়টা তাড়িত হই ছেলেটার যেন অসুখ না হয়, ব্যাথা বুঝানোর কথা ফুটেনি ওর মুখে এখনও। ভাষাহীন নির্বাক চোখ জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, জলপট্টি দিয়ে যাচ্ছিলাম জশের মাথায়। কেবল মনে হচ্ছিল ছেলে বেলায় বাবাকে দেখতাম সকাল বেলায় গোয়াল ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে গাই-গরুদের সাথে কথা বলতেন, খটকা লাগতো মনে, বাবা কি তবে বোবা প্রাণীর কথা বুঝতেন।

জশ যখন ছটফট করছিল কতটা অসহায় আমি তার যন্ত্রণা কোথায় তাও তো বুঝিনি। যাক স্বস্তি হলো চারদিন পর এখন সে সুস্থ। সব বাবা-মায়ের সন্তান ভালো থাকুক আশা, ভালো থাকুক আমার নির্বাক ভালোবাসা।
‘এইতো জীবন এইতো মাধুরী’।