মনিস রফিক : চলচ্চিত্রের যাত্রাপথ ইতোমধ্যে ১২৫-এ পা দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নবীন আর শক্তিশালী এই শিল্পমাধ্যমকে ‘অষ্টম আশ্চর্য’ বলা হয়। আমাদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-নিরাশা আর ভালোবাসার কথা যেভাবে এই শিল্পমাধ্যমে উঠে আসে, তা অন্য শিল্প মাধ্যমে সম্ভব হয় না। মূলত পূর্বের ছয়টি শিল্পের মিথস্ক্রিয়া আর প্রতিফলনে ঋদ্ধ চলচ্চিত্র নামের এই ‘সপ্তম শিল্পকলা’। শুরু থেকে বর্তমানের চলচ্চিত্রের যাত্রাপথটা কেমন ছিল, আর কোন কোন অনুসন্ধিৎসু ক্ষণজন্মা স্বপ্ন দেখা মানুষের স্বপ্নের ফসল এই চলচ্চিত্র, সে সব বৃত্তান্ত উঠে আসবে চলচ্চিত্রকর্মী মনিস রফিক এর লেখায়। চলচ্চিত্র যাত্রাপথের এই বাঁকগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে ‘বাংলা কাগজ’ এ।

পঁচিশ.
১৯৬০ থেকে ১৯৬২ ছিল ঋত্বিক ঘটকের জন্য তিনটি ঝকঝকে বছর। এই তিন বছরে তিনি টানা তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেন, যেগুলোতে তিনি অতি সুক্ষ্মভাবে তুলে আনলেন বাংলা ভাগের আগুনের লেলিহান শিখায় ঝলসে যাওয়া মানুষের কথা। ঋত্বিক ঘটকের নাম শুনলেই সবার সামনে তাঁর যেই বিশেষ বৈশিষ্টের কথা চোখের সামনে ভেসে আসে, তা মূলত প্রবলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এই ত্রয়ী চলচ্চিত্র ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০), ‘কোমলগান্ধার’ (১৯৬১) এবং ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬২)’তে। ঋত্বিক ঘটক ‘মেঘে ঢাকা তারা’ বানালেন ১৯৬০ সালে। সম্ভবত ঋত্বিকের এই ছবিটিই সাধারণ দর্শকদের হৃদয় সবচেয়ে বেশি ছুঁয়েছিল এবং ছবিটি নির্মাণের পঞ্চাশ বছর পরেও ঋত্বিক ঘটকের নাম উচ্চারিত হলেই ‘মেঘে ঢাকা তারা’র কথা উঠে আসে। বাংলা বিভাগের দগ্ধ ক্ষত বয়ে বেড়ানো একটি পরিবারের কথা বাংলা চলচ্চিত্রের কেউ এমনভাবে বলতে পারেননি। এক সময়ের স্কুল শিক্ষক বাবার চার সন্তানের বড় মেয়েটি কিভাবে সমস্ত পরিবারের দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে বয়ে চলে ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, এ ছবিতে এই বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে। সেই সাথে উঠে এসেছে শিকড়চ্যুত মানুষের বেদনার কথকতা। নীতা নামে যে মেয়েটি সকলকে স্বস্তি দেবার জন্য প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় সেতো দেশ বিভাগের তেরই এক দগ্ধ উদাহরণ। বড় ভাই শংকরের গায়কী দৌলতে যখন পরিবারের সবার শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে শুরু হয়েছে, তখনই নীতা কালো কাকের মত শ্রীহীন হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিনের প্রেমিক বিয়ে করে নীতারই সুন্দরী ছোট বোনকে। হয়তো এত কিছুর পরে তার আর বেঁচে থাকার কিছুই ছিল না। মরণব্যাধি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ভাই শংকরের ভালোবাসায় নীতা যখন শিলং পাহাড়ের যক্ষ্মা নিরাময় কেন্দ্রে, তখনই সে আবিষ্কার করে নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বেঁচে থাকার প্রবল আঁকুতি। চিৎকার করে সেই কথা সে জানাতে চেয়েছিল ভাইকে। শিলং পাহাড়ের উপত্যকা থেকে উপত্যকায় ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে বাজতে থাকে নীতার বাঁচতে চাওয়ার আস্পৃহ আঁকুতি। কিন্তু জীবন সমাজের মেঘ ফুঁড়ে সে আর বের হতে পারে না। শুধু দর্শক হৃদয়ে গেঁথে দেয় করুণতর এক ট্রাজেডিকে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখে কবি বিষ্ণু দে বলেছিলেন, ‘ঋত্বিক ঘটকের নতুন ফিল্ম ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখে সেই রকম তৃপ্তি পেলুম যাতে মন আমাদের জীবনের করুণরূপে অভিভূত হয়ে যায় এবং শিল্পের সংবেদন থেকে উৎসারিত একযোগে পরিগ্রহণ ও প্রতিবাদে তীব্র শুদ্ধি লাভ করে। পন্ডিতেরা একেই বোধহয় ট্রাজেডির স্বরূপ বলেন। এই শুদ্ধিই বোধহয় সবচেয়ে উচ্চস্তরের শিল্প রচনার মাহাত্ম্য, যখন শিল্প রূপায়ণের মধ্য দিয়ে একাত্ম হয়ে যায় শিল্পীর এবং দর্শক শ্রোতার জীবনের অভিজ্ঞতা ও জীবনের পুরুষার্থ।’

চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক

১৯২২ সালে পশ্চিম বঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্ম নেয়া ছোট গল্পকার ও ঔপন্যাসিক শক্তিপদ রাজগুরুর ‘চেনা মুখ’ ছোটগল্প অবলম্বনে ঋত্বিক ঘটক ‘মেঘে ঢাকা তারা’ তৈরি করেন। ঋত্বিক ঘটক শিলং ছাড়াও এই চলচ্চিত্রের শ্যুটিং এর জন্য যাদবপুর ও টালিগঞ্জের রিফিউজি কলোনি বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু রিফিউজি কলোনিতে শ্যুটিং করা সম্ভব হয়নি শ্যুটিং এর সময় উৎসুক জনতার জন্য। দিনের পর দিন শ্যুটিং এর সময় মানুষের ভীড় আর উপস্থিতির জন্য শ্যুটিং এর ব্যাঘাত ঘটছিল, বেশ কিছু দিন এভাবে নষ্ট হওয়ার পর অবশেষে স্টুডিওতে সেট তৈরি করে শ্যুটিং হয়েছিল। টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ানের মাঠে সত্যিকারের দরমার বেড়ার ঘর তৈরি হয়েছিল, মাটির বারান্দা, মাটির উঠোন, টিউবওয়েল, রান্নাঘর — একেবারে সত্যিকারের রিফিউজি কলোনি। সেই দিনগুলোতে ভোর ছয়টায় শ্যুটিং শুরু হত এবং শেষ হত রাত বারোটায়।

বার্গম্যানের চলচ্চিত্রের মত ঋত্বিক ঘটকের প্রায় সব চলচ্চিত্রেই পথযাত্রা কিংবা পরিক্রমণের একটা আবহ থাকে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’য় সেটা তেমনভাবে না ঘটলেও এই চলচ্চিত্রে একটা নীরব যাওয়া আসা সক্রিয়। ঋত্বিক ঘটকের এই যাত্রাপথের দুটো বিশেষ ছক আছে এবং দুটোই শেষ পর্যন্ত শুরুর বিন্দুতে ফিরে আসার প্রয়াস। ‘অযান্ত্রিক’ এ বিমল একটি কেন্দ্রবিন্দু থেকে যাত্রীদের নিয়ে গেছে নানা দিক রেখায়। কিন্তু জগদ্দলের মৃত্যু পর্যন্ত তার প্রত্যাবর্তন সেই কেন্দ্রবিন্দুতে এবং শেষ দৃশ্যে এক সূচনার মুহূর্তে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’য় কলোনির পরিবেশ ছাড়িয়ে প্রকৃতির দিকে নীতার দুই যাত্রা; একটি তার জন্মদিনে যেখানে তার বাবা সবুজ ধানের নবাংকুর দেখে বলেন “একটা জিনিস আছে, বিষমভাবেই আছে।” আরেকটি তার মৃত্যুলয়ের প্রাক মুহূর্তে – পাহাড়ের কোলে যেখানে নীতা চেঁচিয়ে বলছে “আমি বাঁচতে চাই, দাদা আমি বাঁচতে চাই, দাদা আমি বাঁচতে বড় ভালোবাসি!’ এই বেদনার্ত আকুলতায় যেখানে ঋত্বিক ঘটক তাকে ছেড়ে ক্যামেরাকে সরিয়ে এনেছেন পাইন অরণ্যে, যার শাখায় নবপত্র। যার পারিপার্শ্বিক আলোকময়। এই চলচ্চিত্রের শুরুতে কলোনিতে নীতার ঘরে আমরা তার বাল্যকালের এক স্মৃতি দেখেছিলাম যেখানে ধরা পড়ে পাহাড়ে সূর্যোদয়ের ছবি। সেই সূর্যোদয় থেকে আরেক সূর্যোদয়ের কাহিনি এখানে পৌঁছে গেল। আবার আরেক স্তরে গীতা, মন্টূ, শংকর একটা বিন্দু থেকে একে একে সরে যায় এবং ফিরে আসে। সেই পারিবারিক বৃত্ত নতুন করে শুরু হয়েছে যখন, ঋত্বিক নীতার অন্তিম মুহূর্তকে সেখানে স্পেসের ব্যবধান সত্তে¡ও সময়ের সমীকরণে মিলিয়ে দিয়েছেন।

‘মেঘে ঢাকা তারা’ চলচ্চিত্রের পোস্টার

‘মেঘে ঢাকা তারা’ চলচ্চিত্রটি শুরু হয়েছে হংসধ্বনি রাগাশ্রয়ী একটি সংগীতের টুকরো টুকরো কয়েকটি অংশ দিয়ে। তারপর শোনা যায়, রাগের ধ্বনিগুলিকে ছিঁড়েখুঁড়ে একটা ট্রেন ছুটে চলে যাচ্ছে। তারপরই পাখির কলকাকলি। এই সব শব্দ মিলে মিশে দর্শককে নিয়ে যায় সংগীতের এক সুবদ্ধ সম্পূর্ণ জগতে। জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করলেও এই শব্দ ও সংগীতের মূল ভাবনা আর খেলা ঋত্বিক ঘটকেরই বরাবর ছিল। ঋত্বিক ঘটক চমৎকার সুন্দর বাঁশি ও সরোদ বাজাতেন। ফলে সঙ্গীতের প্রতি তাঁর প্রবল আস্পৃহা যেমন ছিল তেমনি সংগীতকে তিনি হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন এবং ভালবেসেছিলেন।

ফলে ‘মেঘে ঢাকা তারা’র এক এক করে সিনেমা রীল পেরোবে আর ঋত্বিকের সঙ্গীতের অপার ভালোবাসার জগতও দর্শকদের সামনে প্রস্ফূটিত হবে। তাইতো শেষ দৃশ্যে দেখা যাবে হংসধ্বনি রাগের পূর্ণ বিকশিত রূপ, যার অংশ বিশেষ শোনা যায় ছবির শুরুর মুখে। “লাগি লগন সতি পতি সঙ্গ সুখ আনন্দ —” এই কথাগুলি শ্রোতাদের দারুণ বিচলিত করে।

‘কোমলগান্ধার’ চলচ্চিত্রের পোস্টার

‘মেঘে ঢকা তারা’য় ঋত্বিক ঘটক ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাংগলো ঝড়ে’ রবীন্দ্রসংগীতটি ব্যবহারের সময় সেই গানের সাথে আলো ছায়ার ব্যবহারের সাথে সাথে যে শব্দের ব্যবহার করেছেন। তা একেবারে সরল কথায় অনন্য। গানের শেষে চাবুকের শব্দ আমাদের অনুভূতির শিরদাঁড়াকে সটান করে দাঁড় করিয়ে দেয়। সেই সাথে তাঁর দৃশ্যের ফ্রেমিং এখনও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভাবায়, সেই ১৯৬০ সালে এমন এক দৃশ্য, এমন এক সঙ্গীতের আবহ আর এমন হৃদয় ছুঁয়ে দেয়া সঙ্গীতের ব্যবহার বাংলা চলচ্চিত্রে হয়তো এখন পর্যন্ত অন্য কোন চলচ্চিত্র নির্মাতা ব্যবহার করতে পারেননি। তবে, ঋত্বিক ঘটককে তাঁর এই চলচ্চিত্রের জন্য অনেক সময় ‘মেলোড্রামা’ বানানো চলচ্চিত্রকার হিসেবে সমালোচনা করা হয়েছে। তাঁকে একদিন একবার সাহস করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “দাদা, একটু বাড়াবাড়ি করার জন্য আপনি কি মেলোড্রামা তৈরি করে ফেলেন বলে মনে হয় না?” ঋত্বিক ঘটক তাঁর স্বভাবসুলভ গালাগালি দিয়ে জবাব দিয়েছিলেন, “ওরে শুয়োরের বাচ্চা, তুই আর এছাড়া ভাববি কি। উদ্ভট থেকে সুক্ষ্মভাবের জগতে আরোহণ করার অধিকার একমাত্র শিল্পীরই পাওনা। আর সেটাই আমি করেছি এবং নিশ্চিতভাবে জানি যে সফলও হয়েছি।”

পরের বছরই ঋত্বিক ঘটক তৈরি করলেন কোমল গান্ধার। শিকড় থেকে উপড়িয়ে ফেলা মানুষের কষ্ট আরো বেশি মূর্ত হয়ে উঠে কোমল গান্ধার-এ। নাটক পাগল একদল যুবক-যুবতীকে নিয়ে ছবির কাহিনি আবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু যে সুক্ষ্মভাবে ঋত্বিক তুলে আনলেন দেশ বিভাগের বেদনা তা আমাদের সবাইকে অভিভূত করে। ছবির শুরুতেই যে নাটকটি মঞ্চস্থ হয় তাতে দর্শকরা দেখতে পায় নিজভূমি থেকে বিচ্যুত এক পিতার হাহাকার, ‘ক্যান যামু, বুঝা আমারে। এমন কোমল দ্যাশটা ছ্যাড়ে, আমার নদী পদ্মা ছ্যাড়ে, আমি যামু ক্যান।’ অথবা, ‘আমি পদ্মার পাড়ে জন্মাইলাম ক্যান?’ কোমল গান্ধার ছবিতে দেশত্যাগের বেদনা ওঠে আসার সাথে সাথে বারে বারে পদ্মার কথা উঠে আসে। বিশেষ করে পদ্মার যে পাড়টা পশ্চিম বাংলার সেই পাড়ে ছবির প্রধান দুই চরিত্র অনসূয়া আর ভীগু তাদের পূর্ব জীবনের কথা, নিজ ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা আমাদের জানায় তখন আমাদের সামনে ভেসে আসে সমস্ত শিকড় ছেঁড়া মানুষের বেদনার গান। ‘ঐ পাড়ে আমার দেশের বাড়ি, ঔ যে ঘরগুলো দেখা যাচ্ছে, কোনদিন আমি আর ওখানে পৌঁছাতে পারবো না, ওটা বিদেশ।’ বিষন্ন ভীগু আমাদের আবার জানিয়ে দেয়, ‘বাবা মারা গেলেন ভিখিরির মতন। মা এক রকম না খেতে পেয়েই শেষ হয়ে গেলেন।’

‘মেঘে ঢাকা তারা’র রসটা আরো করুণ করার জন্যই হয়তো কোমল গান্ধার-এর প্রয়োজন ছিল। তবে এটা আরো করুণতর করার জন্য হয়তো আরেকটি ছবির প্রয়োজন অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। সেজন্যেই পরের বছরই ঋত্বিক ঘটক বানালেন সুবর্ণরেখা। শিকড়চ্যুত মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝানোর জন্য এই তিনটি চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে একে অপরের পরিপূরক। বলা যেতে পারে, ভাঙা বাংলার গৃহহারা মানুষদের জন্য এ তিন ছবি হচ্ছে ঋত্বিক ঘটকের ত্রয়ী চলচ্চিত্র।

‘সুবর্ণরেখা’ চলচ্চিত্রের পোস্টার

‘মেঘে ঢাকা তারা’র নীতা শেষ পর্যন্ত বাঁচতে গিয়ে আর বাঁচতে পারেনি। মরণব্যাধি যক্ষ্মা তাকে মৃত্যুর শীতল কোলে নিয়ে যায়। কোমল গান্ধার এর অনসূয়া বারে বারে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দেশ বিভাগের বিষযুক্ত বাতাসে, আর সুবর্ণরেখা’র সীতা শেষ পর্যন্ত বেশ্যা হতে গিয়ে নিজের ভাইকে দেহ দেওয়ার আগেই ধারাল বটি গলায় চালিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করে।
পর পর তিন বছরে এমন তিনটি ছবি তৈরি করে ঋত্বিক ঘটক পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী মানুষদের কথা সবাইকে আরো মূর্তভাবে জানিয়ে দিলেন। ঋত্বিক নিজেও তো ছিলেন একজন রিফুউজি। ফলে তিনি যা করেছেন, তা তিনি নিজের জীবন থেকেই করেছেন। তবে অদ্ভুত ব্যাপার সুবর্ণরেখা করার পর থেকে প্রযোজকরা ঋত্বিক ঘটকের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। ব্যাপারটা খুবই আশ্চর্য্যরে। যে ঋত্বিক প্রতিনিয়ত মানুষদের অদৃশ্যভাবে ভাবতে বাধ্য করাচ্ছেন তাঁর ছবিগুলো নিয়ে, সেই ঋত্বিক আর প্রযোজক পেলেন না ছবি নির্মাণের। হয়তো এর মধ্যে রয়েছে গভীরতম কোন ষড়যন্ত্র। হয়তো শিকড়চ্যুত একজন এপার বাংলা থেকে গিয়ে কোলকাতায় ছবি বানিয়ে চালকের আসনে বসবেন, তা হয়তো কোলকাতাকেন্দ্রীক ছবির কর্তারা মেনে নিতে পারেনি।

এমনকি এটাও হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারই চেয়েছিলেন ঋত্বিককে থামিয়ে দিতে। কারণ ঋত্বিকের ছবি মানেইতো নিঃস্ব-নিরন্ন, বাস্তচ্যুত মানুষদের কথা বলা, তাদের জাগিয়ে দেয়া, যাকে সব সময় ভয় করে শাসক সমাজ। (চলবে)